বিশ্বকাপের আগে অপ্রয়োজনীয় চাপ নিতে রাজি নন তামিম
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে মাত্র দুটি সেঞ্চুরি। করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তার আগে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৯৫ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল।
নিঃসন্দেহে দেশের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। অথচ, এবারের আগে ৩টি বিশ্বকাপ খেলে একটিও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। চতুর্থ বিশ্বকাপে এসে স্বাভাবিকভাবেই তামিমের ওপর সমর্থকদের একটা প্রত্যাশা, অন্তত একটি সেঞ্চুরি উপহার দেবেন তিনি।
কিন্তু তামিম ইকবাল বিশ্বকাপের আগে এমন অহেতুক চাপ নিজের মাথায় নিতে নারাজ। সেঞ্চুরি করতেই হবে, এই চাপ মাথায় নিলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এমনকি ইংল্যান্ডের মাটিতে এর আগে ভালো পারফরম্যান্স করলেও সেগুলো মাথায় আনতে চান না তিনি। অতীত তো অতীতই। সেটা বর্তমানে কোনো কাজে আসবে না। বর্তমানে ভালো করতে হলে নতুন করে শুরু করতে হবে। সে কারণে তিনি জানিয়েছেন, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে চান।
আজ মিরপুরে অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তামিম ইকবাল। সেখানেই তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়ে দেন, বিশ্বকাপ নিয়ে মাথায় অপ্রয়োজনীয় চাপ নিতে চান না। তামিমকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি না।
জবাবে তামিম বলেন, ‘কোন টার্গেট না, কোন কিছুই না। কারণ আমার কাছে মনে হয় যে আমি যখনই কোন কিছু নিয়ে বেশি ভাবি, কোনো না কোনোভাবে সেটা আমি অর্জন করতে পারি না। সুতরাং, আমি এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না।’
বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি নাই। কিংবা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য সেট করতে চান না তামিম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি নাই, এই নাই, সেই নাই- আমি সবই জানি। এখন এটা তো আমি চেঞ্জ করতে পারবো না। এই বিশ্বকাপে যদি আমি এটাই টার্গেট করে যাই যে একটা সেঞ্চুরি করতে হবে বা খুব রান করতে হবে, তাহলে আমি আসলে অপ্রয়োজনীয় চাপ নিবো আমার উপরে। আমি এটা চাই না।’
দলের বিষয় নিয়েই বেশি ভাবতে চান তামিম। তিনি বলেন, ‘আই হ্যাভ আদার থিংস টু ওরি অ্যাবাউট। হুইচ ইজ, দল আমাকে যে রোলটা দিবে, সেই রোলটা যদি আমি পালন করতে পারি, ওই রোলটা যদি আমি ভালোভাবে পালন করি, তাহলেই সুযোগ আসবে বড় ইনিংস খেলার। বাট মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, দলকে একটা ভালো শুরু এনে দেয়া এবং যে রোলটা দেয়া হয়েছে সেটা ভালোভাবে পালন করতে পারা।’
কিন্তু ইংল্যান্ডে আপনার অনেক অ্যাচিভমেন্ট আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো খেলেছেন, লর্ডসে টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে এবার স্মরণীয় কিছু করার ব্যাপারে আপনি কতটা কনফিডেন্ট?
তামিম বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমি একটা ফোঁটাও ভাবি না যে, আমি ইংল্যান্ডে ভালো করেছি। আমার কাছে মনে হয় যে যদি আমি এগুলো ভাবি, ইটস নট গোয়িং টু হেল্প মি। আমি এতটুকু জানি যে, ইট উইল বি ডিফিকাল্ট। আরও বেশি ডিফিকাল্ট হবে যদি আমি বিশ্বকাপে সফল হতে চাই। আমাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। তাই কি করেছি ইংল্যান্ডের মাটিতে, সেটা নিয়ে আমি খুব বেশি ভাবি না। এটা হিস্ট্রি হয়ে থাকুক, সেটাই আমি চাই। ভালো করি বা না করি, আমি কখনো পিছনের জিনিস নিয়ে চিন্তা করতে চাই না। যেটা বর্তমানে আছে, সেটা নিয়েই আমাকে ভাবতে হবে। আর একটা জিনিস আমি জানি, আমি যদি বিশ্বকাপে সফল হতে চাই, তাহলে আমাকে প্রচন্ড কষ্ট করে এবং মাঠে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সেটা করতে হবে।’
তামিমের কাছে প্রশ্ন, ‘আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে ওপেন করছেন, কিন্তু অন্যপ্রান্তে নিয়মিত ওপেনার চেঞ্জ হয়। এখনও পর্যন্ত আপনার একজন নিশ্চিত ওপেনিং সঙ্গী নেই। এটা মানসিকভাবে কোন সমস্যা সৃষ্টি করে কি না?’
তামিম বলেন, ‘পার্টিকুলার ম্যাচে তো এমন কোন সমস্যা করে না। কিন্তু যখনই আপনার একজন নিয়মিত ওপেনিং সঙ্গী থাকবে, তখন যেটা হয়, আমরা দুজনই আমাদের খেলাটাকে ভালো বুঝতে পারি আর কি। অনেক সময় হয়তোবা এমন থাকে যে, আমার টাইমিং ভালো হচ্ছে না। হয়তো আমি মারছি, কিন্তু ফিল্ডারের কাছে চলে যাচ্ছে। দেন, হি নিডস টু টেইক দ্যাট এক্সট্রা চান্স। একইভাবে ওর সাথে যদি এই জিনসটা হয়, তবে আমার চান্স নিতে হয়। বাট, ইফ সামবডি ইজ নট সেটলড্, ইটস ভেরি আনফেয়ার টু গো এন্ড টেল হিম- ভাই, তুমি চান্স নাও। কারণ, ওদেরও একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবে আমি নিশ্চিত, লিটন অ্যান্ড সৌম্য গট এনাফ চান্সেস। আই এম শিওর দিস ইজ দ্য রাইট টাইম টু শো দ্য ওয়ার্ল্ড হাউ গুড দে আর।’
ব্যাটিংয়ের সময় পার্টনারকে বুঝতে পারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? তামিম বলেন, ‘অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন একটা মানুষের সাথে যে কোন কিছুতে, যে কোন পেশায়- আপনার পেশাতেই চিন্তা করেন না কেন, আপনি যদি একজন কলিগের সাথে ২০ বছর ধরে কাজ করেন, তাহলে সে আপনার পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারগুলো জানবে। সেইম গৌজ টু এভরি প্রফেশন। যারা বিশ্বের গ্রেটেস্ট ওপেনিং পার্টনারস, হেইডেন-গিলক্রিস্ট, গাঙ্গুলি-শচীন, শেবাগ-শচীন, এদের মধ্যে দেখবেন একটা বোঝাপড়া থাকতো। আপনি যখন ওদের খেলা ম্যাচগুলো দেখবেন, আপনি মনে করবেন যে দে আর হ্যাভিং ফান ইন দ্য মিডল এন্ড দে নো হোয়াট দ্য আদার ওয়ান্টস। এ রকম সুযোগ দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের এখনও হয় নাই। বাট আই এম শিওর যে, যে দুজন বিশ্বকাপে যাচ্ছে, তারা বাংলাদেশের হয়ে আগামী ১০-১৫ বছর খেলার সামর্থ্য রাখে। ভালো একটা পারফরম্যান্স দেখানোর এটাই সেরা সময় বলে আমি মনে করি।’
সম্ভবত আপনার যে ওপেনিং পার্টনার, সে একদিন আগে ২০৮ করেছে। ইনিংসটা সম্পর্কে কিছু শুনেছেন কিনা বা এটা ওকে কতটা হেল্প করবে? সৌম্য সরকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তামিম বলেন, ‘ইটস আ গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট, বাংলাদেশি কেউ এই প্রথম ২০০ রান করেছে। যদিও আমরা খেলবো একেবারেই ভিন্ন একটা কন্ডিশনে, ভিন্ন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে, তবুও রান করাটা সবসময়ই ইতিবাচক। এটা আত্মবিশ্বাস যোগায়। সে কোথায় রান করেছে এটা মুখ্য বিষয় নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে সে রান করেছে। ও যদি শেষ দুই ম্যাচে দুইটা সেঞ্চুরি না করে ১০ আর ৫ করে ট্যুরে যেতো, ওর মাথার মধ্যে এক পার্সেন্ট হলেও একটা চাপ থাকতো। বাট নাউ হি নৌজ দ্যাট হি হ্যাজ স্কোরড রানস। যখন আপনি রান করেন, তখন আপনি এটা জানেন যে কিভাবে রান করতে হয়। দ্যাট ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। যখন কারো ফর্ম খারাপ যায়, তখন সে ওইটা ভুলে যায় যে কিভাবে রান করতে হবে। তাই এটা তার জন্য খুব পজিটিভ যে সে আয়ারল্যান্ডে যাবার আগে দুটো বড় ইনিংস খেলেছে।’
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে এমন একটা টুর্নামেন্ট, যেটার দুটো দিকই থাকতে পারে, ভালো করলে একরকম আবার খারাপ করলে একরকম। আপনি পার্সোনালি এই সিরিজটাকে কিভাবে দেখছেন?
তামিম বলেন, ‘নেগেটিভ যদি ধরতে হয় তাহলে একটাই নেগেটিভ পার্ট আছে। সেটা হলো, আমরা হয়তোবা দেড় মাসের মধ্যে ১৩-১৪টা ম্যাচ খেলবো। দিস ইজ দ্য অনলি নেগেটিভ পয়েন্ট। তাছাড়া আর কোন নেগেটিভ আমি দেখি না। কারণ, ওইসব কন্ডিশনে আমরা খুব বেশি খেলার সুযোগ পাই না। আমার কাছে মনে হয়, দ্য কি উইল বি টু রেস্ট পিপল। যখন যার রেস্ট দরকার হয়। কারণ, আমরা সবাই জানি যে বিশ্বকাপে উই ক্যান নট এফোর্ট টু রেস্ট। সো আয়ারল্যান্ড উইল বি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট যে আমাদের ওখানে পাঁচটা ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে বাট ওখানেও দুইটা-একটা ম্যাচ করে যদি একটু চেঞ্জ করা হয় টু কিপ এভরিওয়ান ফ্রেশ, দ্যাট উইল বি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট।’
ঢাকা লিগ খেলেননি প্রস্তুতি নেবার জন্য, সেটা কতটুকু হলো? তামিম বলেন, ‘আই এম কোয়াইট স্যাটিসফাইড। আমার মূলত যে জিনিসটা ছিল, ব্যাটিংয়ের চেয়েও বেশি হলো ফিজিক্যাল ফিটনেস।আমি যে লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ মিস করেছিলাম, আমার মনে হয় সেই লক্ষ্যটা পূরণ হয়েছে।’
আইএইচএস/জেআইএম