বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড সৌম্যর
পুরো লিগে কোনো রান নেই। এমনকি বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগ মুহূর্তে নির্বাচকরা সৌম্য সরকারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না, তার বাজে ফর্মের কারণেই। শেষ পর্যন্ত সেই সৌম্য শুধু রানেই ফিরলেন না। রীতিমত রেকর্ডই গড়ে ফেললেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে (লিস্ট ‘এ’ ও আন্তর্জাতিক ওডিআই মিলে), এই প্রথম কোনো ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখালেন সৌম্য সরকার।
বিকেএসপির সেই তিন নম্বর মাঠে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ৩১৭ রানের বিশাল পাহাড় টপকাতে নেমে ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে ইমতিয়াজহ হোসেন তান্নাকে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেন সৌম্য সরকার। ১৪৯ বলে, ১৪টি বাউন্ডারি এবং ১৫টি ছক্কা মেরে ঐতিহাসিক এই মাইলফলকে পৌঁছান বাংলাদেশের এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান।
৪৮ ঘন্টা আগে এই বিকেএসপিতেই লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে শতরান পূরনের পর পরই (৭৯ বলে ১০৬ রানে) ফিরে গিয়েছিলেন সাজঘরে। তিন অংকে পা রাখা সৌম্য যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন আবাহনী ইনিংসের বয়স মোটে ২৪.২ ওভার। তার মানে, তখনো খেলার বাকি ছিল ১৫৪ বল। পুরো লিগে রান নেই। রূপগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত প্রথম পর্ব আর সুপার লিগ মিলে ১১ ম্যাচে মোটে ১৯৭ রান তুলেছিলেন তিনি।
রীতিমত রান খরায় ভোগার পর শতরানের দেখা পান সৌম্য। এ যেন কঠিন মরুর মাঝে পাহাড়ী ঝরনার পানির কল কল শব্দের মত। অনেকদিন পর সেই শতরানের পর চোখে-মুখে ছিল স্বস্তির পরশ। তবে দিন শেষে কন্ঠে খানিক অতৃপ্তি-অনুশোচনা, ‘অনেকদিন পর রানে ফিরে এবং সেঞ্চুরি করে ভাল লাগছে। তবে শতরানের পর ইনিংসটি বড় হয়নি, শেষ করে আসতে পারিনি- তাই কিছুটা আফসোস থেকেই গেছে। এ রকম অবস্থায় আসলে ইনিংসটাকে বড় করা উচিৎ।’
সেদিনের সে অতৃপ্তি, আর আফসোস ও অনুশোচনা অঅজ কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে দিলেন সৌম্য সরকার। আজ বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে শেখ জামালের বিপক্ষে প্রিমিয়ার সুপার লিগের শেষ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ছক্কা বৃষ্টিতে বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি আরও এক অনন্য কীর্তি গড়লেন সৌম্য সরকার।
বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারি হলেন সাতক্ষীরার ২৬ বছর বয়সী এ অসামান্য ব্যাটিং প্রতিভা।
কাকতালীয়ভাবে দুই বছর আগে এই বিকেএসপির ঠিক পাশের মাঠে (বিকেএসপি চার নম্বর মাঠ) ডাবল সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় গিয়েও পারেননি এবারের লিগে মোহামেডানের হয়ে দারুণ খেলা রকিবুল হাসান। ২০১৭ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সৌম্যর বর্তমান দল আবাহনীর বিপক্ষে ১৯০ রানে আউট হয়েছিলেন রকিবুল।
দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর মহা দ্বৈরথটি ছিল বিগ স্কোরিং। ওই ম্যাচে প্রথম ব্যাট করা আবাহনী ৩৬৭ রানের জবাবে মোহামেডান হেরেছিল খুব কাছাকাছি গিয়ে। ১৯০ রানের অসাধারন ইনিংস খেলে আউট হয়েছিলেন রকিবুল। এছাড়া আয়ারল্যান্ডের ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ডাবলিনে ১৮২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুমিনুল হক।
রকিবুলের সেই ১৯০ রানের ইনিংসের দুই বছর পর আজ, ঠিক তার পাশের মাঠটি সৌম্যর ডাবল সেঞ্চুরির দূর্দান্ত কৃতিত্বের সাক্ষী হয়ে থাকলো। শেষ পর্যন্ত ১৫৩ বলে ২০৮ রানে অপরাজিত থাকলেন সৌম্য সরকার।
শেখ জামালের ৩১৭ রানের বিশাল পাহাড় টপকাতে নেমে জহুরুল ইসলাম অমিকে নিয়ে ৩১২ রানের অবিশ্বাস্য জুটি গড়ে ফেলেন সৌম্য। ১২৮ বলে ১০০ রান করে জুহুরুল ইসলাম অমি আউট হয়ে গেলেও সৌম্য থাকেন অপরাজিত। এমনকি ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে তাইজুলকে ছক্কা মেরে আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করে দেন তিনি।
শেখ জামালের বোলারদের ওপর প্রথম থেকে কতটা খড়গহস্ত ছিলেন সৌম্য, সেটা তার ইনিংসের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। শুরুতে খেলেছিলেন রয়ে-সয়ে। ৫২ বলে পূরণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি ছক্কা দিয়ে। এরপর সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৭৮ বলে। ৮টি বাউন্ডারি আর ৮টি ছক্কায়। অর্থ্যাৎ, দ্বিতীয় পঞ্চাস আসে তার মাত্র ২৬ বলে।
১৫০ রানের মাইলফলকে পৌঁছান তিনি ১০৪ বলে। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১৫টি ছক্কা। ছক্কা বৃষ্টিতে রীতিমত রেকর্ড গড়েন তিনি। তৃতীয় ৫০ পূরণ করতেও তিনি খেলেন ২৬ বল। এরপর আর ছক্কা মারলেন না। বাউন্ডারি মেরেছেন ৬টি। কোনো ছক্কা নেই। ৪৫ বলে পৌঁছান চতুর্থ ফিফটিতে। শেষ পর্যন্ত ১৪৯ বলে ২০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ১৪ বাউন্ডারি এবং ১৫ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে অপরাজিত থাকলেন ১৬ ছক্কায়। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ওয়ানডে কিংবা লিস্ট এ ক্রিকেটে যে কোনো ব্যাটসম্যানের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড।
এআরবি/আইএইচএস