তবুও বিশ্বকাপের দল নিয়ে দূরদর্শিতার অভাব দেখছেন ফারুক!
বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের দল ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। এবারের বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর বিতর্ক হয়েছে খুবই কম। দু-একটি সমালোচনা ছাড়া আর কোনো বিতর্কই হয়নি। বলা হচ্ছে, ইতিহাসের সেরা দলটিই বেছে নিয়েছেন এবার নির্বাচকরা।
সাধারণ ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের চেয়ে বাংলাদেশের এই দল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখেন অবশ্যই বিশেষজ্ঞরা। সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরাই পারবেন এ নিয়ে সঠিক বিশ্লেষণ করতে।
দল নির্বাচনের দিনই জাগো নিউজে বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়েছে তিন সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এবং ফারুক আহমেদের। সেখানেই নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে ফারুক আহমেদ দলের মধ্যে এক ধরনের ‘অনিশ্চয়তা’র কথা বলেছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার মিরপুরে বেসরকারী টিভি চ্যানেল মাছরাঙ্গার বিশ্বকাপ উপলক্ষে নির্মিতব্য প্রচারণা অনুষ্ঠানে আরও সাবেক সাত অধিনায়কের সঙ্গে এসে কথা বলেন সাবেক প্রধান নির্বাচক এবং অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। সেখানেও প্রায় একই কথা বলেছেন তিনি। এখানে বরং, আরো একটু খোলামেলা মন্তব্য বেরিয়ে এসেছে তার মুখ থেকে।
ফারুক আহমেদ শুরুতেই সেরা দল হয়েছে মন্তব্য করে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় দল ভালো হয়েছে। সম্ভাব্য সেরা খেলোয়াড়দের মধ্য থেকেই দল বানানো হয়েছে। বাংলাদেশ দলকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি যাতে বিশ্বকাপে ওরা ভালো খেলে। আমার মনে হয় যে, টিমটা একদম খারাপ হয়নি। এখন বাকিটা হল সবাই মাঠে গিয়ে পারফর্ম করা।’
যখনই প্রশ্ন আসলো এই দলের আসলে শক্তি কিংবা দুর্বলতার জায়গা কোনটি? সঙ্গে সঙ্গেই সুর কিছুটা পাল্টে গেলো ফারুক আহমেদের। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় স্ট্রেন্থ, উইকনেস না দেখে..., ম্যানেজমেন্ট যে টিমটা দিয়েছে, সেটা নিয়ে একটু অনিশ্চয়তায় আছে। এটা আমার ভালো লাগেনি। আমি দেখেছি যে ২৩ মে পর্যন্ত যে সময় আছে, সেটা নিয়ে এখনো টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করছে। এমন চিন্তা করলে, বিষয়টা পুরো দলকে আত্মবিশ্বাস দিবে না (কমিয়ে দেবে)।’
কেন আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেবে? এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘কারণ, প্লেয়াররা এত বড় টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে। আমরা সবাই জানি যে, জুন-জুলাই এ বিশ্বকাপ হবে। এটার পরিকল্পনা আরও ছয়-সাত মাস থেকেই হওয়া উচিত ছিল। সেটাও হয়েছে, আবার সাথে সাথে বলা হয়েছে যে আয়ারল্যান্ডের পারফর্মেন্সের পরে পরিবর্তন আসতে পারে দলে। এটা আমি আসলে খুব ভালোভাবে দেখি না। দলের প্লেয়াররা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগবে যে, যদি ভালো না খেলি বাদ পড়ে যেতে পারি। এসব না বলে যদি বলতাম, এটাই আমাদের সেরা দল, যারা ফর্মে নেই আশা করব তারা ফর্মে ফিরে আসবে। তাহলে কিন্তু আত্মবিশ্বাসটা একটু ভালো হত।’
সাবেক প্রধান নির্বাচকের কাছে এসব কারণেই মনে হচ্ছে ম্যানেজমেন্টের মধ্যে দুরদর্শিতার অভাব রয়েছে। তিনি বিষয়টা খোলাসা করেছেন এভাবে, ‘এইদিক থেকে আমার মনে হয়েছে একটু দূরদর্শিতার অভাব মনে হয়েছে ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। বাকিটা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই টিমটা বর্তমান সময়ের সেরা দল হয়েছে।’
তবে বরাবরের মতই একজন লেগ স্পিনারের অভাব বোধ করছেন ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি চাইতাম একটা লেগ স্পিনার হলে খুব ভালো হত, বৈচিত্র্য দিতে পারত দলে। যেহেতু আমাদের লেগ স্পিনার নেই, সাকিব আল হাসানের সাথে অফ স্পিনার ও ৫-৭টা ব্যাটসম্যান আছে, কিছু কোর প্লেয়ার আছে টিমের মধ্যে। এমন প্লেয়ার আছে যাদের ৩টা বিশ্বকাপ খেলার মত অভিজ্ঞতা আছে। আমি আশা করব ভালো করবে।’
আবু জায়েদ রাহীকে দিয়ে একটা চমক দেখিয়েছে নির্বাচকরা। আবার নাঈম হাসানকে রাখা হয়েছে আয়ারল্যান্ডের ত্রি-দেশীয় সিরিজে। এ বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় রাহি ইজ অ্যা ভেরি গুড পিক। আমি মনে করি, একটু সারপ্রাইজ অ্যালিমেন্ট থাকা ভালো। আমরা সবাই জানি যে, সে ওয়ানডে খেলেনি। কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ঘরোয়া পর্যায়ে ভালো পারফর্ম করেছে। কন্ডিশন তাকে হেল্প করবে আমি মনে করি। তার ঘরোয়া ক্রিকেটের যে অভিজ্ঞতা আছে, এটা সাহায্য করবে তাকে। আর সবসময় দলে একটা সারপ্রাইজ অ্যালিমেন্ট থাকা ভালো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবাই কিন্তু এখন সবাইকে ভালোভাবে সর্ট আউট করে ফেলে, কে কি করে। রাহি আমাদের মনে হয় সারপ্রাইজ অ্যালিমেন্ট হতে পারে। আমি আশা করব সে ভালো করবে।’
গত বিশ্বকাপের (২০১৫) দলের সঙ্গে এবারের বিশ্বকাপের (২০১৯) দলের মধ্যে তুলনামূলন পার্থক্য কি হতে পারে? ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয়, ২০১৫ বিশ্বকাপ খুব ভালো ছিল। সেটা আমরা প্রুভ করেছি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। আমাদের সাম্প্রতিক অতীতেও খুব ভালো অভিজ্ঞতা আছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছি ২০১৭ সালে। সেটাও যদি প্লেয়াররা মনে রাখে, একই কন্ডিশনে খেলা হয়েছে। সেটা বিবেচনা করলে আমার মনে হয় যদি সিনিয়ররা ভালো খেলে, তাহলে এবারো আমাদের ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে।’
এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ