শিষ্য সাকিবের সঙ্গে এবার ভারতে অন্যরকম কোচিং মিশন সালাউদ্দীনের
কোচিং স্টাফে যত নামী-দামি আর হাই প্রোফাইল হেড ক্রিকেট কোচই থাকুক না কেন- ব্যাটিং, পেস বোলিং, স্পিন বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের জন্য যত হাই প্রোফাইল কনসালটেন্ট আর উপদেষ্টা ও স্পেশালিস্ট কোচই কাজ করুন না কেন; নির্জলা সত্য হলো সাকিব, মুশফিক আর তামিমসহ জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটারদের একটা বড় বহর যখনই কোন টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন- তখনই ছুটে যান কোচ/মেন্টর গুরুতুল্য মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের কাছে।
কারো ব্যাটিং-বোলিংয়ে ছোট খাট সমস্যা হচ্ছে, কেউবা ব্যাটিং স্টান্স নিয়ে অস্বস্তিতে, কারো পা ঠিকমত বলের লাইন ও পিছনে যাচ্ছে না, কেউবা আবার শুরুর আগেই এদিক ওদিক ক্যাচ দিয়ে ফিরছেন কিংবা কেউ সেট হয়ে ২০-২৫ করে হঠাৎ বাজে শটস খেলে আউট হয়ে যাচ্ছেন, মনোযোগ-মনোসংযোগে ঘাটতি বা সমস্যা হচ্ছে। আবার কারো বোলিংয়ের সময় রানআপটা ঠিক মসৃণ থাকছে না কিংবা ফলো থ্রু’তে সমস্যা প্রতিকারের জন্য আছেন কোচ সালাউদ্দীন। তাই তার শরণাপন্ন হওয়া।
গত পাঁচ ছয় বছরে সাকিব, তামিম-মুশফিকরা বেশ কয়েকবার কোচ সালাউদ্দীনের দাওয়াই নিয়েছেন। তা অব্যর্থ টনিকের মত কাজও করেছে। তাই তাদের কাছে গুরু সালাউদ্দীন অন্যরকম নির্ভরতা ও বিরাট আস্থা। কোন সিরিজ, সফর কিংবা বড় আসরের আগে নিজেকে ঠিকমত তৈরির আগে কোচ সালাউদ্দীনের সঙ্গে কথা বলে ছোট খাট সমস্যা ও সুক্ষ জায়গা সংশোধনে প্রয়োজনীয় টিপস নেন শীর্ষ ক্রিকেটারদের অনেকেই।
তবে এবার একটা ব্যতিক্রম ঘটছে। দেশের বাইরে গিয়ে আইপিএল খেলার সময় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ কোচিং স্টাফের বাইরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গুরু মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের শরণাপন্ন সাকিব আল হাসান।টেলিফোনে গুরু ও মেন্টর সালাউদ্দীনের সাথে বেশ ক’বার কথা বলে অবশেষে তাকে হায়দ্রাবাদ যেতে অনুরোধ করেছেন সাকিব। প্রিয় শিষ্যর সে ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি সালাউদ্দীন।
আজই হায়দরাবাদ যাচ্ছেন সালাউদ্দীন
আইপিএলের বাকি অংশে টিম প্র্যাকটিসের বাইরে কোচ সালাউদ্দীনের অধীনে ব্যক্তিগত অনুশীলন করবেন সাকিব। সব কিছু ঠিক থাকলে তা কাল (রোববার) বাংলা নববর্ষের দিন থেকেই শুরু হবে।
প্রিয় শিষ্যকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনুশীলন করাতে আজ বিকেলে ঢাকা ছাড়ছেন সালাউদ্দীন। শনিবার বিকেল পাঁচটায় ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে বিমানে চেপে বসবেন সালাউদ্দীন। বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় কলকাতা থেকে হায়দ্রাবাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে চলে যাবেন হায়দ্রাবাদ।
আজ মধ্যাহ্নে জাগোনিউজের সাথে আলাপে এমনটাই জানালেন সালাউদ্দীন। আপনি তো গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কোচ, ৪৮ ঘন্টা পর প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগ এমন সময়ে প্রিয় শিষ্য সাকিবের ডাকে হায়দ্রাবাদ যাচ্ছেন নাকি? সালাউদ্দীনের সাজানো জবাব, ‘হ্যাঁ, আজ (শনিবার) বিকেলে পাঁচটার ফ্লাইটে কলকাতা যাচ্ছি। সেখান থেকে রাতে ফ্লাইটে হায়দরাবাদ।’
কিন্তু আপনার দল তো সুপার লিগে খেলার মত দল, যদি গাজী গ্রুপ সুপার লিগ খেলতো, তখন কি করতেন? তার উত্তর, ‘না না, তখন কি আর যেতে পারতাম। অবশ্যই যাওয়া হতো না। আমি পেশাদার কোচ, গাজী গ্রুপের কোচ, দল সুপার লিগ খেললে অতি অবশ্যই হায়দ্রাবাদ যেতে পারতাম না। যেহেতু দল সুপার লিগে উঠতে পারেনি, রেলিগেশন লিগও খেলতে হচ্ছে না, তাই সাকিবের আন্তরিক আহ্বানে যাচ্ছি তাকে ব্যক্তিগত অনুশীলন করাতে।’
এসময় তিনি আরও বলেন, “গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের প্রথম দুই ম্যাচের ফল খারাপ হবার পর সাকিব হঠাৎ একদিন ফোন করে সাকিব আমাকে বলে, ‘স্যার চলে আসেন। এবার হয়তো দল ভালো করবে না। সুপার লিগ না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তা না হলে আপনি একটু (হায়দরাবাদে) চলে এসেন।’ তখন আমি বলেছিলাম, দেখি কী হয়? যখন নিশ্চিত হলাম যে দল সুপার লিগ খেলতে পারবে না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে যাবো হায়দরাবাদে, সাকিবের কাছে।”
বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে বলবেন? আপনি কি হিসেবে যাচ্ছেন? আপনার যাবার সাথে এবং কাজ করার সাথে কি সানরাউজার্স হায়দরাবাদের কোন সম্পর্ক আছে? উত্তর এলো, ‘না, মোটেই তা নয়। আমি যাচ্ছি প্রিয় সাকিবের একান্ত অনুরোধে। তার নিজের প্রস্তুতি কার্যক্রমে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে।’
‘সাকিব আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের টিম প্র্যাকটিস যেমন করে আসছে, যেমন করছে, তেমনি করবে। সব কিছু ঠিক থাকবে। দলগত অনুশীলনের বাইরে আমি সাকিবকে আলাদা প্র্যাকটিস করাবো। সেটা একান্তই তার নিজের ইচ্ছে ও গরজে। এটা আমার আর সাকিবের পারষ্পরিক সম্প্রীতি ও সমঝোতার ভিত্তিতে। আগেও ওর প্রস্তুতিতে আমি সাথে থেকেছি, যেহেতু এখন আইপিএলের ট্রেনিং চলছে, তাই আমাকে ফোনে বলেছে, স্যার আপনার দল সুপার লিগে উঠতে না পারলে এসে একটু দেখে যেয়েন, আমার সাথে কাজ করেন’- বলেন সালাউদ্দীন।
সালাউদ্দীন সরাসরি মুখ ফুটে বলেননি, তবে জানা গেছে, তার যাতায়াত ও আবাসনের সমুদয় খরচ সাকিবই বহন করবেন। কোচ সালাউদ্দীনের কথায় পরিষ্কার মূলত বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা যাতে ভাল হয়, কোনো খুঁটিনাটি ও সুক্ষ সমস্যা থাকলে তা এর মধ্যে ঠিক করে ফেলতেই সেই এক যুগেরও বেশী সময় আগে বিকেএসপির গুরু সালাউদ্দীন স্যারের শরণাপন্ন সাকিব।
যদিও জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু ২২ কিংবা ২৩ এপ্রিল থেকে। তবে সালাউদ্দীনের কথা শুনে মনে হলো না যে, সাকিব তার আগে দেশে ফিরবেন। কারণ আজ ১৩ এপ্রিল, সাকিব জাতীয় দলের প্র্যাকটিস শুরুর আগে আসলে ঢাকা থেকে মেন্টর/গুরুকে পাঁচ-ছয় দিনের জন্য বিমান ভাড়া ও হোঠেল ভাড়া দিয়ে উড়িয়ে নিতেন না।
সালাউদ্দীনের কথায়ও অমন ইঙ্গিত, ‘আমি তো পুরো এপ্রিল মাস সাকিবের সাথে ভারত থাকার প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছি।’ তার মানে সাকিব তার প্রস্তুতিটা হয়তো সালাউদ্দীনকে সাথে নিয়ে ভারতেই সাড়বেন। ১ মে দেশ ত্যাগের বড় জোর কয়েকদিন আগে হয়ত দেশে আসবেন।
এআরবি/এসএএস/জেআইএম