সৌম্য-তাসকিনের বিশ্বকাপ টিকিট এখনো নিশ্চিত নয়!
মাশরাফি, মোস্তাফিজ, রুবেল আর সাইফউদ্দিন- সামনের দিনগুলোয় কোন ইনজুরির শিকার না হলে এই চার পেসার যে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকবেন, লাল-সবুজ জার্সি গায়ে ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের ময়দানি যুদ্ধে অবতীর্ন হবেন- তা নিয়ে কোনই সন্দেহ নেই। এক কথায় তারা ‘অটোমেটিক চয়েজ।’ তাদের দলে থাকা নিশ্চিতই বলা চলে।
কিন্তু তারপরও কথা থেকে যাচ্ছে। বিশ্বকাপ অনেক বড়। শুধু নামে, মানে-গুণে ও আয়োজন-অবয়বে নয়। সময়ের হিসেবে অনেক বড়। খেলা হবে লম্বা সময় ধরে; দেড় মাসের বেশি, প্রায় সাত সপ্তাহ সময় নিয়ে।
এর আগে আবার প্রতি দলের আছে দুটি করে প্রস্তুতি ম্যাচ। সেই ম্যাচের সময় যোগ করলে প্রায় আট সপ্তাহর ক্রিকেট যজ্ঞ। প্র্যাকটিসের দুটি আর নয়টি রাউন্ড রবিন লিগ ম্যাচসহ ১১টি খেলা। রাউন্ড রবিন লিগের পর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেললে আরও দুটি ম্যাচ বাড়বে। তার মানে ১৩ ম্যাচ।
আর রাউন্ড রবিন লিগ পর্যন্ত ১১ ম্যাচ। সাত সপ্তাহের বেশি সময়ে এতগুলো ম্যাচের ধকল ও ঝক্কি কম নয়। অনেক। এ দীর্ঘ সময়ে এতগুলো ম্যাচ খেলার শারীরিক ধকল সামলে ওঠাও বেশ কঠিন কাজ ক্রিকেটারদের জন্য।
খেলা হবে ইংল্যান্ডে। বিশ্বকাপের উইকেট যদিও ব্যাটিং সহায়কই হয়, তারপরও ইংলিশ কন্ডিশন বলে কথা। সেখানে পেস বোলারের আধিক্য থাকবেই। অন্তত তিন পেসারের কম নিয়ে (পেস বোলিং অলরাউন্ডার বা ব্যাটসম্যান কাম কার্যকর পেসার থাকলে ভিন্ন কথা) একাদশ সাজানোর সম্ভাবনা খুব কম।
তিনজন পেসার খেললে সবাই ভাল করবেন, বল হাতে জ্বলে উঠবেন- এমন নয়। কেউ একজন খারাপ করলে বা ফ্লপ হলে তখন যিনি চার নম্বরে থাকবেন, তাকে খেলানোর প্রশ্ন দেখা দেবে। আর ওই চারজনের একজন হঠাৎ গ্রোয়েন, হ্যামস্ট্রিং, ব্যাক বা কাঁধের ইনজুরিতে পড়লেই শেষ। তাহলেই বিকল্প পেসারের দরকার পড়বে।
কাজেই আসলে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে দরকার পাঁচ মিডিয়াম পেসার। সে কারণেই শেষ মুহুর্তে ১৫ জনের দলে এক বাড়তি পেসারের অন্তর্ভুক্তির চিন্তা চলছে জোরে-সোরে। ভেতরের খবর পাঁচ পেসার নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয় হলো, সেই পাঁচ নম্বর পেসার কে?
নানা কারণেই ক্রিকেট পাড়ায় জোর গুঞ্জন- ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরা (আজই লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে প্রথম প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমেছেন) তাসকিনই হতে পারেন পাঁচ নম্বর পেসার। বরাবরই বাড়তি গতি তাসকিনের বড় শক্তি ও সম্পদ। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সম্ভাব্য পেসারের তালিকায় যারা আছেন, তাদের মধ্যে তাসকিন অন্যতম দ্রুত গতির বোলার। রুবেল ছাড়া সবার গতি তাসকিনের চেয়ে কম।
শতভাগ ফিট হয়ে উঠলে আর পূর্ণ ছন্দ ফিরে পেলে তাসকিন সবার চেয়ে জোরেও বল করতে পারেন। এছাড়া তার বল ‘ক্যারি’ও করে বেশ। অফ স্ট্যাম্প ও তার আশপাশে থ্রি কোয়ার্টার লেন্থে বল ফেলে ব্যাটসম্যানের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে একটা ভাল উচ্চতায় উইকেটের পিছনে কিপারের গ্লাভসে বল নেয়ার সামর্থ্য আছে তাসকিনের।
তাই পেস সহায়ক উইকেটে তার কার্যকরিতার সম্ভাবনা বেশি বলে ভাবা হয়। সে কারণেই তাসকিন পঞ্চম পেসারের সম্ভাব্য তালিকায় এক নম্বর; কিন্তু বেশ কিছুদিনের ইনজুরি কাটিয়ে রিহ্যাব শেষে আজ সবে মাঠে ফিরে আসা এই দ্রুত গতির বোলার বিশ্বকাপের আগে কতটা ফিট হবেন এবং স্বাভাবিক ছন্দ ও গতিতে বল করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ইনজুরি কারণে যদি খেলার বাইরে না থাকতেন, তাহলেও হয়তো এ কথা উঠতো। কারণ, নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে প্রায় তিন সপ্তাহ বিশ্রামে থেকে আরেক পেসার মোস্তাফিজ ঠিকই নিজেকে মেলে ধরেছেন। শাইনপুকুরের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমে প্রথম দিনই ৩ উইকেট শিকার করেছেন কাটার মাস্টার।
কিন্তু তাসকিনের বিষয়টিতো আর তেমন নয়। তিনি তো কয়েক মাস ধরে মাঠের বাইরে। কাজেই তার নিজেকে ফিরে পাওয়া আর অন্যদের ছন্দ ফিরে পাওয়া এক নয়।
সে কারণেই নির্বাচকর তাসকিনের পাশাপাশি ভাল বিকল্পও খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাসকিনের ম্যাচ ফিটনেস নিয়ে সন্দেহ থেকেই আরও বিকল্পের সন্ধান করা হচ্ছে। নির্বাচকদের সাথে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, তাসকিনের পাশাপাশি আরও কয়েকজন পেস বোলারের ওপরও চোখ আছে তাদের।
সেই তালিকায় শফিউল ছিলেন ফার্স্ট চয়েজ; কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে প্রথমে ভাল করলেও পরের দিকে অনুজ্জ্বল ও নিস্পৃহ হয়ে পড়ায় শফিউল এখন আর এক নম্বরে নেই। তার পাশাপাশি আরেক পেসার আবু জায়েদ রাহির কথাও ভাবা হচ্ছে। আর ক্রমাগত ভাল খেলে বিশেষ বিবেচনায় উঠে এসেছেন ফরহাদ রেজাও।
মোটকথা, তাসকিনের পাশাপাশি শফিউল, রাহি আর ফরহাদ রেজার নামও উচ্চারিত হচ্ছে। তারপরও তাসকিনকে আয়ারল্যান্ডে পাঠানোর চিন্তা ভাবনা চলছে। সেখানে নিজের ফিটনেস আর ছন্দ ফিরে পেলে সম্ভাবনা থাকবে; কিন্তু তাও হবে কিনা সন্দেহ।
কারণ প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথায় বারবার বোঝা গেছে, তারা ১৭ থেকে ১৮ জনকে আয়ারল্যান্ড নিয়ে যাবেন। সেখান থেকে ১৫ জনকে বিশ্বকাপের জন্য চূড়ান্তভাবে বেছে নেয়া হবে।
তবে তা হবার সম্ভাবনা কম। আজ (বুধবার) বোর্ড ও নির্বাচকদের একটি ঘণিষ্ঠ মহল থেকে জানা গেছে, ‘আইসিসি একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। যে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা তথা আইসিসিতে জমা দিতে হবে। তাহলে আয়ারল্যান্ড সফর পর্যন্ত আর অপেক্ষার সুযোগ থাকবে না। দেশ থেকেই ১৫ জনের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করে যেতে হবে।
জানা গেছে, সে কারণে- ওই ১৫ জনের সাথে আয়ারল্যান্ড সফরের জন্য বাড়তি আরও ২ থেকে ৩ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এদিকে শেষ খবর, প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে টানা ভাল খেলার পুরস্কার হিসেবে বিশ্বকাপ দলে মোটামুটি জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আজ বিকেএসপিতে শেখ জামালের বিপক্ষে দল হারলেও কঠিন বিপদে মোসাদ্দেকের একদিক আগলে রাখা এবং দায়িত্ব সচেতনতার সঙ্গে সেঞ্চুরি করা, নির্বাচকদের নজর কেড়েছে বলে জানা গেছে।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জাগো নিউজের সাথে আজ রাতে আলাপেও মোসাদ্দেকের ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তার কথায় মোসাদ্দেকের ব্যাপারে মিলেছে সবুজ সঙ্কেত।
মোসাদ্দেক মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পরও আজ পর্যন্ত দুটি জায়গা খালি আছে। এক, পাঁচ নম্বর পেসার। এর বাইরে আরও একজন ব্যাটসম্যান। একদম ভেতরের খবর, লিটন দাসের ওপর মোটামুটি সন্তুষ্ট হলেও নির্বাচকরা সৌম্য সরকারের বর্তমান অফ ফর্ম নিয়ে চিন্তিত।
মোটকথা, দলে সৌম্য সরকারের থাকা এখন পর্যন্ত শতভাগ নিশ্চিত নয়। তার ধারাহিক ব্যর্থতা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। জাগো নিউজকে প্রধান নির্বাচক বলেই ফেলেছেন, ‘লিটন আর সৌম্য কারোরই ফর্ম তেমন ভালো না। লিটন তবু একটি বড় ইনিংস খেলেছে। আর দুটি ম্যাচে তিরিশের আশাপাশে পৌঁছেছে। সৌম্যতো কিছুই করতে পারেনি।’
তাই সুপার লিগে তার পারফরমেন্স পাখির চোখে পরখ করার কথা শোনা গেছে। ১৮ বা ১৯ এপ্রিল দল ঘোষণার আগে সুপার লিগে অন্তত দুটি ম্যাচ পাবেন সৌম্য। এর মধ্যে নিজেকে মেলে ধরতে পারলে হয়ত টিকে যাবেন। ১৫ এপ্রিল থেকে সুপার লিগ। ১৭ তারিখের মধ্যে দুই ম্যাচ হয়ে যাবে। আর ১৯ এপ্রিল তৃতীয় ম্যাচ। তার আগে রানে ফিরতে না পারলে সৌম্য বাদও পড়তে পারেন।
শেষ পর্যন্ত সৌম্য বাদ পড়লে তার জায়গা কে নেবেন সেটাই দেখার।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি