তবে কি এবার ‘গুড বাই’ বলতে হবে আশরাফুলকে?
মানুষ আশা নিয়েই বাঁচে। কবিগুরুর ভাষায়, ‘সংসার সাগরে সুখ-দুঃখের খেলা, আশাই তার একমাত্র ভেলা’। নন্দিত-নিন্দিত ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলেরও আশা ছিলো পুনরায় জাতীয় দলে ফেরার, বিশ্বকাপ খেলার।
স্ট্রাইকরেট যেমনই থাকুক না কেনো, গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে পাঁচ-পাঁচটি শতকে তার সেই প্রত্যাশার বেলুনকে আরও ফুলে-ফেপে উঠেছিল। আশরাফুল ভক্তরা নড়েচড়ে বসেছিলেন, আশা জেগেছিলো সম্ভাবনাময় কিছুর।
নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষহীন, নিরপেক্ষ ক্রিকেট সমঝদার ও আশরাফুল সমালোচকগোষ্ঠীও মনে মনে ধরে নিয়েছিলেন, ‘নাহ! আশরাফুল হয়তো জাতীয় দলে ফিরতেও পারেন’। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম মাসে বিপিএল থেকেই সে ধারণা গেলো চুপসে।
যে সময় ভালো খেললে, রান করলে আবার জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতো- সে সময়টাতেই বড্ড বেশি খারাপ খেলতে শুরু করলেন আশরাফুল। চলতি বছরে বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ৩ ম্যাচে করেছেন মাত্র ২৫ (৩+২২+০) রান।
পরে চলতি প্রিমিয়ার লিগের আগে হওয়া প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগেও ছিলেন ব্যর্থ। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে দুই ম্যাচ খেলে আশরাফুলের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ২১ (২১+০) রান। ব্যর্থতার এ ধারা চলমান রয়েছে চলতি প্রিমিয়ার লিগেও।
আজ (সোমবার) দশম রাউন্ডে খেলতে নামলেও আশরাফুলকে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র সাত ম্যাচে। নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই তিন ম্যাচে দলে জায়গা হয়নি আশরাফুল। সে সাত ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন, তাতেও কিছুই করতে পারেননি তিনি।
সবমিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ৭ ম্যাচে আশরাফুল করতে পেরেছেন মাত্র ৯৬ রান। যথাক্রমে ০, ১০, ৪৪, ৪*, ২৮, ৬ ও ৪। চলতি বছরে এখনো পর্যন্ত ১১টি ইনিংসে ব্যাট করে একবারও পঞ্চাশ করতে পারেননি তিনি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ৪৪ রানের। এই এগারো ইনিংসে শূন্য রানেই আউট হয়েছেন ৩ বার। মাত্র ১৪.২০ গড়ে করেছেন ১৪২ রান।
এই অনুজ্জ্বল ও জীর্ণশীর্ণ পরিসংখ্যান শুধু নয়, আশরাফুলকে খুব কাছ থেকে দেখা ও তার সম্পর্কে জানা অনেকের কাছেই তার বডি মুভমেন্ট স্লো হয়ে যাওয়া এবং বলের ওপরে চড়াও হয়ে সঠিক টাইমিং করতে ব্যর্থতা মিলে এ যেনো এক অজেনা-অদেখা আশরাফুল।
এবারের লিগে কয়েকটি ম্যাচে অনভিজ্ঞ-আনকোরা বোলারের বলে দৃষ্টিকটুভাবে আউট হওয়া আশরাফুল আজও তরুণ সম্ভাবনাময় অফস্পিনার নাঈম হাসানের বলে ধরা পড়েছেন স্লিপে। নিজের স্বাভাবিক বা সেরা সময়ে যে ডেলিভারিকে বিদ্যুৎ গতিতে পাঠিয়ে দিতে স্কয়ার দিয়ে বাউন্ডারিতে, সেই ডেলিভারিতেই আজ থার্ড ম্যানে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
তাই প্রশ্ন জাগে, আশরাফুলও কি আফতাবের পথে হাটতে যাচ্ছেন? যদিও তার সমবয়সী এবং সমসাময়িক মাশরাফি, মোহাম্মদ শরীফ, শাহরিয়ার নাফীস, আব্দুর রাজ্জাকরা এখনো খেলে যাচ্ছে। আবার বন্ধু আফতাব, তালহা জুবায়েররা খেলা ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন কোচিংয়ে। এবারের লিগে বিস্ময়কররকম অনুজ্জ্বল ও আশরাফুলও কি তবে সে পথেই হাটছেন? সেটাই প্রশ্ন, সেটাই দেখার।
কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন আগের আসরেই তো পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছেন আশরাফুল। এমনকি এনসিএল, বিসিএলেও সেঞ্চুরি আছে। শুধু পারলেন না এবারের প্রিমিয়ারে। এটা কি খুব অস্বাভাবিক? কোনো ক্রিকেটারের তো একটি টুর্নামেন্ট খারাপ যেতেই পারে?
সেটা খোঁড়া যুক্তি নয়। ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে কেউ অমন কথা বলতেই পারেন। কিন্তু আশরাফুলের যে বয়স, এই মধ্য ত্রিশে দাঁড়িয়ে ব্যাটিংয়ের এমন নিষ্প্রভ-অনুজ্জ্বল রুপকে আবার দ্যুতিময় করে তোলা বাস্তবে খুব বেশিই কঠিন। তাই আফতাবের মতো আশরাফুলও কি কোচিং ক্যারিয়ার বেছে নেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়।
এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ