স্বার্থের সংঘাত : আইপিএল থেকে সরে দাঁড়াতে হবে গাঙ্গুলিকে!
একদিকে তিনি একটি রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। আবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়েও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে তার সঙ্গে আরও দুই বিখ্যাতজন- শচীন টেন্ডুলকার এবং ভিভিএস লক্ষ্মণই সব সিদ্ধান্ত দেন। প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেয়া থেকে শুরু করে সিলেকশন, সুপারিশই এই তিনজনের কাজ।
যার কথা এতক্ষণ বলা হচ্ছে, তিনি হলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। কলকাতার মহারাজ হিসেবেই পরিচিত। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই আইপিএলে টাকার ঝনঝনানির কাছে হেরে গেলেন সৌরভ। পরামর্শক হিসেবে যোগ দিয়েছে নতুন নামে আসা দিল্লি ফ্রাঞ্চাইজি, দিল্লি ক্যাপিটালসে। আইপিএল চলাকালীন রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে রীতিমত প্রধান কোচের ভূমিকায় তিনি। ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন কলকাতার ‘দাদা’।
কিন্তু সৌরভ গাঙ্গুলির এই সুখের সংসার বুঝি খুব বেশি দূর এগুতে পারছে না। কারণ, এতগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার পরও কীভাবে তিনি একটি প্রাইভেট সংস্থায় অর্থের বিনিময়ে যোগ দিতে পারেন? প্রশ্নটা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) এথিক্স কমিটির হাতে তুলে দিয়েছে দুই ক্রিকেট ভক্ত।
সেই প্রশ্নের আলোকেই এথিক্স কমিটির পক্ষ থেকে জবাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক ইস্যুতে সৌরভ গাঙ্গুলির অবস্থান স্পষ্ট করে জানতে চাইলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
আগামী ১২ এপ্রিল কলকাতা নাইট রাইডার্স হোম ম্যাচ খেলবে দিল্লি ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে। সিএবি পরিচালিত ইডেন গার্ডেন্সে ওই ম্যাচের আয়োজক হিসেবে যখন প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি ভূমিকা অনস্বীকার্য, পরামর্শদাতা হিসেবে সিএবি প্রেসিডেন্টকে একই সময়ে দেখা যাবে দিল্লির ডাগ আউটেও।
অর্থাৎ ওই ম্যাচে সৌরভ গাঙ্গুলির ভূমিকা ঠিক কি হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দিন দুয়েক আগে বিসিসিআইয়ের ন্যায়পাল তথা এথিক্স কমিটির ডিকে জৈনকে চিঠি দিয়েছিলেন রঞ্জিত কুমার শীল ও ভাস্বতী সান্তুয়া নামে দুই ক্রিকেট সমর্থক।
চিঠিতে রঞ্জিত কুমার শীল বোর্ডের ন্যায়পালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেন, ‘আগামী ১২ এপ্রিল ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত হতে চলছে কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ। স্থানীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে নাইট রাইডার্স যুক্ত সিএবির সঙ্গে। যে সংস্থার প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি, তাই স্বাভাবিকভাবেই ওই ম্যাচের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রশাসনিকভাবে স্থানীয় ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সমর্থন করবেন সিএবি প্রেসিডেন্ট। একই সময় তিনি আবার দিল্লির ডাগ-আউটে বসবেন পরামর্শদাতা হিসেবে। এ ঘটনায় কি কোনোভাবে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে স্বার্থ-সংঘাত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে না?’
ভাস্বতি সান্তুয়া নামে আরেক ক্রিকেট অনুরাগীও দ্বারস্থ হয়েছিলেন বোর্ডের ন্যায়পাল ডিকে জৈনের। দুই ক্রিকেট অনুরাগীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে বোর্ডের এথিক্স কমিটি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সৌরভ গাঙ্গুলির কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বোর্ডের তরফ থেকে। যেখানে ‘স্বার্থ সংঘাত’ প্রশ্নে সিএবি প্রেসিডেন্টের অবস্থান স্পষ্ট করে জানতে চাওয়া হয়েছে এবং উত্তরের জন্য সৌরভকে সাতদিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বিসিসিআইর ন্যায়পাল ডিকে জৈন দুই অনুরাগীর চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মঙ্গলবার তাকে (সৌরভ গাঙ্গুলি) একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে উত্তর চাওয়া হয়েছে। তার উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা গোটা বিষয়টি তদারকি করব। তারপর ওনার সঙ্গে আলোচনায়ও বসা হতে পারে।’
তবে দিল্লি ক্যাপিটালসের দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বার্থ-সংঘাতের প্রশ্নে কোনোরকম চিন্তিত দেখায়নি মহারাজকে। প্রাথমিকভাবে তিনি জানিয়েছিলেন যেহেতু আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল থেকে তিনি আগেই ইস্তফা দিয়েছেন এবং বোর্ড নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের পরামর্শ মতোই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তাই আইপিএলের সময় এই দ্বৈত ভূমিকা কোনও ভাবেই তার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে না।
আইএইচএস/এমএস