ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

শেরে বাংলায় ম্যাচসেরা ফরহাদ রেজার ‘নো বল’ নিয়ে নাটক!

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৬:২৯ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০১৯

ব্যাট হাতে বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির পর বল হাতেও প্রাইম দোলেশ্বরের ত্রাণকর্তা সেই ফরহাদ রেজা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ২৬ ওভারের ছোট হয়ে যাওয়া ম্যাচে প্রথম সেশনে ৫৬ রানের (২০ বল) ঝড়ো ইনিংস খেলার পর শেরে বাংলায় আজ পড়ন্ত বিকেলে ফরহাদ রেজার মাপা বোলিংয়েই ১ রানের নাটকীয় অথচ স্বস্তির জয় পেয়ে কক্ষপথে প্রাইম দোলেশ্বর।

শেষ ওভারে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের দরকার ছিল ১১ রানের। প্রথম তিন বলে একটি চার হজম করলেও দুটি ডট বল করে শেখ জামালের শেষ জুটিকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছিলেন প্রাইম দোলেশ্বর অধিনায়ক ফরহাদ রেজা। শেষ তিন বলে ৭ রান দরকার থাকা ম্যাচে শেষ বলে প্রয়োজন পড়ে ৬ রানের। রূদ্ধশ্বাস সে মুহূর্তে ফরহাদ রেজার ফুলটস শেখ জামালের শেষ ব্যাটসম্যান খালেদ আহমেদের (জাতীয় দলের পেসার) ব্যাটের বাইরের উপরের দিকের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে চার হয়ে যায়। আর তাতেই ১ রানের অতি নাটকীয় জয় পায় ফরহাদ রেজার দল।

ফরহাদ রেজার করা শেষ বলটি ছিল ফুলটস। দীর্ঘদেহী খালেদ সামনের পায়ে গিয়ে ব্যাটে বলে করেন, ব্যাটসম্যান তথা শেখ জামাল শিবিরের দাবি, বল কোমর উচ্চতার উপরে ছিল। খালেদ এ নিয়ে মাঠে প্রতিবাদ না করলেও খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে আম্পায়ারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। যেহেতু টিভি রিপ্লের ব্যবস্থা নেই, ফরহাদ রেজার করা ম্যাচের শেষ ফুলটস ডেলিভারিটি ব্যাটসম্যান খালিদের কোমরের উপর ছিল কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।

এবং সে সংশয় নিয়েই আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল ও মাহফুজুর রহমান খেলা শেষে আম্পায়ার্স রুমে না গিয়ে সরাসরি চলে আসেন শেরে বাংলার মিডিয়া ভবনের তিন তলায়, যেখানে ভিডিও ক্যামেরা বসানো আছে। সেখানে এসে প্রায় দশ মিনিট তারা ভিডিও ফুটেজটি খুঁটিয়ে দেখেন। দেখে তারা আশ্বস্ত হন যে, বল কোমরের অন্তত কয়েক ইঞ্চি নিচে ছিল। জাগো নিউজকে আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল নিশ্চিত করে বলেন, ‘আপনারা চাইলে ভিডিও ফুটেজ দেখতে পারেন, বল কোমরের নিচেই ছিল।’

২৬ ওভারে ২৪০ রানের পাহাড়সমান স্কোরের পিছু ধেয়েও ড্যাশিং জিয়াউর রহমান জিয়া ও অধিনায়ক নুুরুল হাসান সোহানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল শেখ জামাল। ৫০ ওভারের লিগ শুরুর আগে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে জিয়ার ব্যাটিং তাণ্ডবে শেষ হাসি হেসেছিল জামাল। আজ সেই জিয়া ২১ বলে ৪৬ (৪টি করে চার ছক্কা) রানের ইনিংসে প্রাইম দোলেশ্বরের বোলিংকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন। অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও (২০ বলে ৩৭) সময়ের দাবি মিটিয়েই ব্যাট করছিলেন।

কিন্তু কাকতালীয়ভাবে জিয়া ও সোহান দুজনই পয়েন্ট এবং কাভারের মাঝখান দিয়ে চালাতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। দুজনের শটেই পাওয়ার ছিল প্রচুর, কিন্তু বল চলে গেছে সরাসরি ফিল্ডারের হাতে। সোহান এবং জিয়ার যে কোনো একজন শেষ পর্যন্ত থাকলে পারলে হয়তো ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারতো।

২৬ ওভারে লক্ষ্যটা ২৪০ রানের। দারুণ ব্যাটিং করে শেখ জামাল ২৩ ওভারে করলো ৭ উইকেটে ২১২ রান। ম্যাচ তখন দারুণভাবে জমে উঠেছে। ২৪তম ওভার করতে এসে ফরহাদ রেজা দিলেন মাত্র ৩ রান, সাজঘরে ফেরালেন তাইজুল ইসলামকে। শেষে ১২ বলে ২৫ রান বাকি থাকে শেখ জামালের। কিন্তু ২৫তম ওভারে ১৪ রান দিয়ে বসেন আবু জায়েদ রাহী। শেষ ওভারে তাই লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬ বলে ১১ রান। তানবির হায়দার খেলছেন ৬ বলে ১১ রান নিয়ে।

বল হাতে তুলে নিলেন প্রাইম দোলেশ্বর অধিনায়ক ফরহাদ রেজা। প্রথম বল ডট দিলেও দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে দেন তানবির। আপার হ্যান্ডে তখন শেখ জামাল। তৃতীয় বল আবার ডট, চতুর্থ বলে তানবির হায়দারকে সাজঘরেই পাঠিয়েই দেন রেজা। দুই বলে বাকি ৭ রান, শেষ বলে থাকে ৬ রান। খালেদ আহমেদ ৪ মারলে ১ রানের রোমাঞ্চকর জয় পায় প্রাইম দোলেশ্বর।

এই ম্যাচে ফরহাদ রেজার বোলিং ফিগারটা ছিল চোখে পড়ার মতো, ৬-০-৩৫-৩। ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের দাপট ছিল। ২৬ ওভার করে পাওয়া ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে করে ৪৭৭ রান! এমন এক দিনেও কি দুর্দান্ত বোলিং ফরহাদ রেজার। তার আগে ব্যাটিং তো ছিলই।

বৃষ্টি ও ভেজা উইকেটের কারণে ২৬ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন ফরহাদ। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে উইকেটে এসে সাজঘরে ফিরেন ২৫তম ওভারের শেষ বলে।

মাঝের ৬ ওভারে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব পেয়েছে ৭৫ রান। যার মধ্যে মাত্র ২০ বলে খেলে ৫৬ রান করেছেন ফরহাদ রেজা। ইনিংসের ২৫তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে টানা তিন বলে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে পূরণ করেছেন নিজের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি।

মাত্র ১৮ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে রেকর্ডবুকে তোলপাড় করেছেন ফরহাদ। নাজমুল হোসেন মিলনের ১৯ বলে করা ফিফটির রেকর্ড ভেঙে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি। প্রায় ৩৫ মিনিটের ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন প্রাইম দোলেশ্বরের অধিনায়ক।

তার সঙ্গে ওপেনার ইমরান উজ জামানের ৫৪ বলে ৭৫ আর তিন নাম্বারে নামা সাদ নাসিমের ৩৬ বলে ৫১ রানে ভর করে ৬ উইকেটে ২৩৯ রানের পাহাড়সমান পুঁজি দাঁড় করিয়েছিল প্রাইম দোলেশ্বর।

শেখ জামালের সালাউদ্দিন শাকিল ৩ উইকেট পেলেও ৬ ওভারে খরচ করেন ৪০ রান।

এআরবি/এমএমআর/পিআর

আরও পড়ুন