কাঁধের ইনজুরি ভোগাচ্ছে, সুপার লিগে খেলার আশায় মাহমুদউল্লাহ
তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিম তো আগেই জানিয়ে দিয়েছেন তারা এবার বিশ্বকাপের শারীরিক প্রস্তুতির কথা ভেবে প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন না, খেলছেনও না। ‘পঞ্চ পান্ডবের’ ঐ দুই ‘পান্ডবের’ সময় কাটছে বিশ্রামেই। আরেক পান্ডব সাকিব আইপিএল খেলতে ভারতে।
তাহলে দাঁড়াল কি? পাঁচ শীর্ষ তারার তিনজনই নেই এবারের প্রিমিয়ার ক্রিকেটে। রইলেন বাকি দুজন- মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ শেষে দেশে ফিরে এবং পরিবারসহ ভারত ভ্রমণের পর লিগ খেলছেন।
আবাহনীর হয়ে সর্বশেষ ম্যাচে গত পরশু বিকেএসপিতে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ৪৬ রানে ৬ উইকেট শিকার করে এবারের লিগের সেরা বোলিং স্পেলটিও উপহার দিয়েছেন।
কিন্তু খবর নেই আরেক ‘পান্ডব’ রিয়াদের। বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দু’দুটি বিশ্ব আসর বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যিনি বাংলাদেশের সফলতম উইলোবাজ, একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান যার বিশ্বকাপে দুটি আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটিসহ মোট তিন তিনটি সেঞ্চুরি- সেই রিয়াদ কি করছেন? ঘরে বসে বিশ্রামে কাটছে তার সময়? নাকি পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেছেন?
ভক্ত ও সমর্থকদের জানার আগ্রহের শেষ নেই। কেমন আছেন প্রিয় তারকা রিয়াদ? সুস্থ আছেন? প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন কি-না, খেললেও কবে মাঠে নামবেন? নিশ্চয়ই খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না?
তাহলে শুনুন, নিউজিল্যান্ড সফরে সাকিবের অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতিতে টেস্ট সিরিজে অধিনায়কত্ব করা রিয়াদ শতভাগ সুস্থ নন। কাঁধের ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথা আগের চেয়ে কমলেও এখনো আছে। তবে সহ্যের মধ্যে। তবে এখন লিগ খেলার অবস্থায় নেই মাহমুদউল্লাহ। চাইছেন সম্পূর্ণ ফিট ও ব্যথামুক্ত অবস্থায় লিগ খেলতে। দেশে ফিরে বিশ্রামে থাকা রিয়াদ আজ সকাল অবধি রিহ্যাব-রানিং কিছুই শুরু করেননি।
তবে খুব দ্রুত রানিং শুরুর কথা ভাবছেন। আজ বিকেল কিংবা কাল (সোমবার) থেকে শেরে বাংলায় তাকে রানিংয়ে দেখলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। হাওয়া থেকে পাওয়া খবর নয়। ক্রিকেট পাড়ার গুঞ্জনও নয়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নিজের দেয়া তথ্য।
আজ সকালে জাগোনিউজের সঙ্গে মুঠোফোন আলাপে ওপরের তথ্যগুলো দিয়েছেন এ দেশ বরেণ্য ক্রিকেটার। কী অবস্থা, প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন? নাকি খেলার সম্ভাবনা নেই? জাগো নিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানালেন, ‘প্রিমিয়ার লিগ খেলার আশা আছে। তবে এখন না। এখন কি করে খেলবো? আমি তো পুরোপুরি সুস্থই না, কাঁধে ব্যথা। নিউজিল্যান্ড সফরেই ব্যাথাটা বেড়েছে।’
রিয়াদ জানালেন, ‘ব্যথাটা প্রথম দেখা দিয়েছিল চার মাস আগে। আর এবার নিউজিল্যান্ড সফরে এক ম্যাচে দু’বার ফিল্ডিংয়ে বল থামাতে পুরো শরীর মাটিতে ফেলে ডাইভ দেয়ায় ডান কাঁধে ঝাকি লেগেছে। তারপর শুরু হয় ব্যথা। ব্যথার তীব্রতায় বোলিংটা ঠিক মত করতে পারিনি। থ্রো করতেও সমস্যা হয়েছে বেশ।’
রিয়াদ আরও জানান, কাঁধের ইনজুরির ধরণটা আসলে কি? ব্যথা কেন ও কি কারণে? তার প্রতিকারের কথা ভেবে নিউজিল্যান্ডে এমআরআই করিয়ে এসেছেন। কিন্তু তার রিপোর্ট নাকি এখনো অসেনি। বিসিবির চিকিৎসকরাও আর সেভাবে তার খোঁজ খবর নেননি।
চাপা স্বভাবের রিয়াদ খানিক মনোকষ্ট নিয়ে বলেন, ‘বুঝলাম না আমার কাঁধের সমস্যাটা সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। নিউজিল্যান্ডে এমআরআই করিয়ে এসেছি এখনো রিপোর্ট পাইনি। দেশেও বোর্ডের চিকিৎসকরা সেভাবে খোঁজ নেন না। আমাকে কি গুরুত্ব কম দিচ্ছে নাকি, আমার খোঁজখবর নেয়ায় আগ্রহটা মনে হচ্ছে কম।’
তবে খোঁজ জানা গিয়েছে ক্রাইস্টচার্চে হামলার কারণে এমআরআই রিপোর্ট এখনো হাতে পায়নি বিসিবিও। ফলে রিপোর্ট হাতে না পেয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি বিসিবির ফিজিও, চিকিৎসকরা। তাই প্রাথমিকভাবে এখনের অবস্থা অনুযায়ী পরামর্শ দেয়া হয়েছে রিয়াদকে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাঁধের ব্যথা, এমআরআই রিপোর্ট, রিহ্যাব করা এবং মাঠে ফেয়ার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী জাগোনিউজকে জানান, 'আমরা এখনো এমআরআই রিপোর্ট হাতে পাইনি।'
এতদিন পরেও এমআরআই রিপোর্ট না পাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে দেবাশিষ চৌধুরী জানান, 'রিয়াদ যেদিন এমআরআই করিয়েছে সেদিনই ক্রাইস্টচার্চের হামলাটি হয়েছিল। ফলে হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে তারা হতভম্ব হয়ে পড়ায় এখনো দিতে পারেনি। যে কারণে আমাদের ফিজিও এখনো রিপোর্ট পায়নি। তবে যথাযথ পরামর্শ দেয়া হয়েছে রিয়াদকে।'
এদিকে কাঁধের ব্যথা কমতে শুরু করায় নিজ উদ্যোগেই আজ কিংবা কাল থেকে রানিং শুরুর চিন্তা করছেন। তার শেষ কথা, ‘আজ না হয় কাল থেকে রানিং করবো ভাবছি। আর প্রিমিয়ার লিগ এখন না। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে সুপার লিগের তিন থেকে চারটা ম্যাচ খেলার আশা আছে। আল্লাহ ভরসা।’
গত বিশ্বকাপে একজোড়া শতক আর ২০১৭ সালে এই ইংল্যান্ডের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবার সেঞ্চুরি করা রিয়াদ মুখিয়ে আছেন বিশ্বকাপে তার সেরাটা উপহার দিতে। কথা প্রসঙ্গে তা মুখ ফুটে বলেছেন, ‘আমি দেশের জন্য সামর্থ্যের সবটুকু উজার করে দেয়ার চেষ্টা করবো। তার আগে কাঁধের ইনজুরি সেড়ে ওঠা এবং পুরোদস্তুর সুস্থ হয়ে ওঠা জরুরী। সবাই দোয়া করবেন আমি যেন কোনরকম ইনজুরি মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং করতে পারি।’
এআরবি/এসএএস/এমএস