বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিশ্ব একাদশ-বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ!
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর জন্ম (১৮৮৯ সালে) শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে নেহেরু কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা বিসিসিআিই।
ছয় জাতির সেই মিনি বিশ্বকাপ মার্কা বিশাল আয়োজন ছিল যারপরনাই সফল। স্বাগতিক ভারত ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানকে নিয়ে ছয় জাতির নেহেরু কাপের আয়োজন করে ক্রিকেট বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল ভারত।
বিশ্বকাপের পর এতবড় ক্রিকেট আসর এবং বিশ্বের সে সময়ের শীর্ষ দলগুলোর অংশগ্রহণে এমন উঁচু মানের আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ আসর আগের কখনো হয়নি। অস্ট্রেলেশিয়া কাপ, বেনসন অ্যান্ড হেজেস ও রথম্যান্স কাপ হলেও ছয়-ছয়টি প্রতিষ্ঠিত দলের অংশ গ্রহণে নেহেরু কাপই ছিল প্রথম বড় আসর।
জাতির জনক, বাঙ্গালি জাতি সত্ত্বার উন্মেষ ঘটানো এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থক রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) কি তেমন কোন বড়-সড় ক্রিকেট আসরের আয়োজন করবে? নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২০২১ সালের আগে বা মধ্যে কোনো বড়-সড় ক্রিকেট আসর বা ম্যাচ আয়োজনে ব্রত হবে?
এমন প্রশ্ন অনেকেরই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখতে তৈরি কমিটি অবশ্য ফুটবল ও ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক আসর বা ম্যাচ আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করছে এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ক্রিকেট ও ফুটবলের একটা জমজমাট আয়েজনের একটা নীতিগত সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গঠিত বিশেষ সেরিমনিজ কমিটির প্রথম সভায় নাকি তেমন সিদ্ধান্তও হয়েছে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেলকে উদ্বৃত করে জাগো নিউজ কয়েকদিন আগেও তেমন সংবাদ প্রকাশ করেছে।
কিন্তু আসলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ক্রিকেট বোর্ড কি করবে বা তাদের লক্ষ্য কি? তা অজানাই ছিল। তবে আজ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন প্রচার মাধ্যমকে একটা ধারনা দিয়েছেন এ ব্যাপারে।
তার কথায় মনে হয়েছে, নেহেরু কাপের মত পাঁচ-ছয় দলের অংশগ্রহণে এতবড় আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা বা উদ্যোগ নেই। তবে বিসিবি ভাবনায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি (পঞ্চাশ বছর পূর্তি) উপলক্ষে বিশেষ কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা আছে।
তবে ঠিক কি হবে? কোন এক ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট, না প্রীতি-প্রদর্শনী ম্যাচ? তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আজ স্বাধীনতা দিবসে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের কন্ঠে তাই এ কথা, ‘সামনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আছে। তারপরের বছর আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি। এটাকে উপলক্ষ করে আমরা এখন থেকেই একটা পরিকল্পনা করছি। আমরা ইতিমধ্যেই এটা নিয়ে কথাবার্তা বলছি। আমরা এমন একটা কিছু করতে চাচ্ছি যেখানে সারা পৃথিবীর যারা ক্রিকেট বিশ্ব দেখে, তারা যেন এক সাথে বসে দেখতে চায়। তবে এটা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, এখনো কারো সাথে সে বিষয়ে আলাপ হয়নি।’
আয়োজন কি হবে? টুর্নামেন্ট? না, একটি ম্যাচ বা একাধিক ম্যাচ? এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতির কথা শুনে মনে হয়েছে , তারা বিশ্ব একাদশ আর অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশ নামকরণে কোন ম্যাচ বা সিরিজ আয়োজনের কথাই ভাবছেন।
কারণ টুর্নামেন্ট আয়োজন নানা কারণে সম্ভব নয়। এ বছর বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বর্ষপঞ্জিও চূড়ান্ত। আগামী বছরও কোন দল কার সাথে কবে কখন কোথায় খেলবে? তাও এক করম ঠিক করাই আছে। তাই নতুন করে কোন আসর আয়োজন করা কঠিন। সেখানে অন্তত চার চারটি দলকে একসঙ্গে করা কঠিন। বাস্তবে প্রায় অসম্ভব।
আকার ইঙ্গিতে সে কথা বুঝিয়ে বিসিবি বিগ বস পাপন বলেন, ‘এ ধরনের কিছুই (বিশ্বকাপ একাদশ)। তবে সব কিছু নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সূচির ওপর। সবগুলো দেশকে একসঙ্গে পাওয়া খুব কঠিন। খেলা নেই এমন সময় ও দল পাওয়া খুব কঠিন। এই জন্য সব থেকে বেশি খেলোয়াড় দেশ থেকে এনে একটা অংশগ্রহণমূলক ম্যাচের আয়োজনটাই পরিকল্পনায় আছে।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, সব টেস্ট খেলুড়ে দলের ক্রিকেটার দিয়ে বিশ্ব একাদশ, অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশ আর এশিয়া একাদশ যাই গঠন করা হোক না কেন, তাতে করে সবার আগে আইসিসির অনুমতি ও অনুমাদন লাগবে। পাশাপাশি সব ক্রিকেট বোর্ডেরও আনুষ্ঠানিক সম্মতি এবং খেলোয়াড় দেবার বিষয়ে পূর্ণ সম্মতি দরকার হবে।
নাজমুল হাসান পাাপনের ভাষায়, ‘সবার আগে প্রয়োজন আইসিসি থেকে ওটা রিকগনিশন পাওয়া। এটা নিয়ে অলরেডি আমরা আইসিসিকে লিখেছি। আমরা কাজ করছি।’
বিশ্ব একাদশ-বাংলাদেশ একাদশের মধ্যে কোন একাধিক ম্যাচ আয়োজনের সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি সেই কথাই আবার বলেন। এ সম্পর্কে তার কথা, ‘কি করলে বেশি দেশের খেলোয়াড়, শুধু বেশি দেশের খেলোয়াড় না, নাম করা খেলোয়াড় যারা আছে তাদেরকে কিভাবে আনা যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই সবচেয়ে নামকরা ক্রিকেটাররা এখানে এসে খেলবে। এটা নিয়ে আলাপ করছি। যেহেতু প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, এখন কিছু কমিট করা তো প্রশ্নই ওঠে না। প্রথমে আমরা চাচ্ছি আইসিসির রিকগনিশন। তাহলে আমরা এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। নেক্সট কাজ হচ্ছে, বড় বড় দেশের সাথে, ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড... এদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তারপর আমাদের দেখতে হচ্ছে কোথায় ফাঁকা আছে, যেখানে সবাই ব্যস্ত না এবং তাদের বেস্ট প্লেয়ারদের পাওয়া সম্ভব। তারপর নির্ভর করবে বেস্ট প্লেয়াররা আমাদের এখানে আসতে চায় কি না। আমরা চেষ্টা করছি সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটা খেলা বাংলাদেশে করার জন্য।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস