মাঠে জমজমাট আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ, গ্যালারী যেনো শূন্য মরুভূমি
যেকোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম কিংবা চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অবস্থা হয়, 'তিল ঠাই আর নাহি রে'। শুধু ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি নয়, প্রায় সময়েই টেস্ট ক্রিকেটেও কানায় কানায় পূর্ণ থাকে মাঠের গ্যালারি।
অথচ আন্তর্জাতিক ম্যাচ বাদ দিলে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট বিপিএল কিংবা সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও মেলে না দর্শকের খোঁজ। খা খা মরুভূমির মতো পড়ে থাকে শেরে বাংলার গ্যালারির সিটগুলো। যেনো তপ্ত দুপুরে তাদের সঙ্গী হওয়ার নেই কেউ।
আজ (সোমবার) ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট দ্বৈরথে মাঠে নেমেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড এবং নিজেদের হারানো জৌলুস ফিরে পাওয়ার মিশনে থাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। কিন্তু মাঠে নেই শ'খানেক দর্শকও।
অনেক ঘোরতর মোহামেডান বিরোধীও এবার মেনে নিচ্ছেন যে শক্তিশালী দল গড়েছে সাদা-কালো শিবির। লিটন দাস, মোহাম্মদ আশরাফুল, রকিবুল হাসান, নাদীফ চৌধুরী, সোহাগ গাজী, শফিউল ইসলামদের মতো পরীক্ষিত পারফর্মার দলে থাকায় যেকোনো দলের বিপক্ষে লড়াই করতে পারবে মোহামেডান- এমনটাই ছিলো সকলের ধারণা।
এছাড়া এখনো পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের মধ্যে ৪টি জিতে পয়েন্ট টেবিলের সবার ওপরে আবাহনীর অবস্থান। সমান ম্যাচে ৩টিতে জিতে মোহামেডানের অবস্থান পঞ্চম। ফলে আজকের ম্যাচটিতে মোহামেডান জিতলে দুই দলেরই পয়েন্ট হয়ে যাবে সমান।
এমন গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে মাশরাফি, সাব্বির, আশরাফুল, লিটনরা হয়তো ভেবেছিলেন মাঠে থাকবে অন্তত শ' পাঁচেক দর্শক। কিন্তু শেরে বাংলার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের মতো জায়গাও প্রায় পুরোটাই খালি। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরো মাঠে হয়তো পাওয়া যাবে গোটা পঞ্চাশের দর্শক।
আসলে ঘরোয়া খেলাধুলা বিশেষ করে ঢাকার ক্লাব ক্রীড়াঙ্গন দর্শক হারিয়েছে আগেই। শুধু ফুটবলে নয় ঢাকার হকি আর ক্রিকেট লিগ দেখতে দর্শক হয়না বেশ কয়েক বছর। অথচ এক সময় একটা গুরুত্বহীন ম্যাচেও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারির একাংশ ভরে যেত। আর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হলে তো কথাই ছিল না। একবারে টান টান উত্তেজনা।
হোক তা ফুটবল, হকি কিংবা ক্রিকেট- মোহামেডান আর আবাহনী দ্বৈরথ মানেই ছিল বাড়তি আকর্ষণ। টান টান উত্তেজনা। অন্যরকম প্রতিদ্বন্দ্বীতা। ঐতিহ্য আর মর্যাদার লড়াই। গ্যালারিতে দু’দলের সমর্থকদের ঢল।
সাদা-কালো আর আকাশী-হলুদ জার্সির লড়াইয়ের ক’দিন আগে থেকেই উত্তেজনার পারদ ছড়াতো চারিদিকে। ভক্ত-সমর্থকরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন। নানা গুঞ্জন আর নানা জল্পনা-কল্পনায় মেতে উঠতো ক্লাব পাড়া।
আজ সে সবের ছিটেফোঁটাও নেই। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এখন আর ঢাকাই ক্লাব ফুটবল, ক্রিকেট আর হকিরই তেমন কোন আবেদন, গুরুত্ব নেই। মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথতো বহুদুরে। ঐ ঐতিহ্য আর মর্যাদার লড়াই এখন এ যেন কল্পলোকের কাহিনী হয়ে পড়েছে। সেই দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছ থেকে শোনা গল্পের মত।
গ্যালারিতে দর্শক না থাকলেও মাঠে লড়াই করে যাচ্ছেন আবাহনী-মোহামেডানের ক্রিকেটাররা। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ ওভার শেষে মোহামেডানের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৩৬ রান। অধিনায়ক রকিবুল হাসান ২৬ ও ইরফান শুক্কুর ৪৮ রানে ব্যাট করছেন। দুই ওপেনার লিটন দাস ২৭ ও আব্দুল মজিদ ২৬ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন।
এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ