একযুগ আগে বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর সেই স্মৃতি (ভিডিও)
শচীন টেন্ডুলকারের মুখটা সেদিন হয়েছিল দেখার মত। এতটা মলিন আর দুঃখ ভারাক্রান্ত চেহারা নিয়ে সম্ভবত আর কোনো ম্যাচে এভাবে মাঠ ছাড়েননি তিনি। সঙ্গে টিম ইন্ডিয়ার তুখোড় একদল সদস্য।
পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে সেদিনের রাজা তো ছিলেন বাংলাদেশের একদল নবীন ক্রিকেটার। যাদের হাতে আগামীর ক্রিকেটের পতকা পতপত করে ওড়ার ইঙ্গিত মিলেছিল সেদিন।
আজ থেকে ঠিক একযুগ আগে। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ, ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট ভারতকে বিশাল এক ধাক্কা দিয়েছিল ক্রিকেটের নবীন বাংলাদেশ। হারিয়ে দিয়েছিল ৫ উইকেটের ব্যবধানে। হাতে তখনও বাকি ছিল ৯ বল। সেই এক ধাক্কায় শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়তে হয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়ের দলকে।
আগামী বিশ্বকাপের দরজাও কড়া নাড়ছে। খুব বেশি বাকি নেই আর। আগামী মে মাসের ৩০ তারিখ থেকে শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপের জমজমাট লড়াই। সেই লড়াইয়ের আগে আইসিসি বিশ্বকাপ নিয়ে তৈরি টুইটার পেজে অন দিস ডেতে বেশ ভালোভাবেই স্মরণ করা হয়েছে, এক যুগ আগে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় সেই বিজয়ের ঘটনা।
সেবার প্রথমবারেরমত বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন আজকের বিশ্ব কাঁপানো বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা। হাবিবুল বাশার সুমন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, মোহাম্মদ রফিক, আফতাব আহমেদ, আবদুর রাজ্জাকরা তো ছিলেনই।
ওই ম্যাচে টস জিতেছিলেন ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। অধিনায়ক ছাড়াও ভারতের ওই দলে ছিলেন বিরেন্দর শেবাগ, শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, জহির খানদের মত বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা। এছাড়া মহেন্দ্র সিং ধোনি কেবল দলে এসে জায়গা পোক্ত করে তুলেছেন। অজিত আগারকার, রবিন উথাপ্পার মত ক্রিকেটাররা ছিলেন দলে।
এমন একটি দল শিরোপার দাবিদার। তারা নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করারই সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারে এসেই ভারতীয় ইনিংসের ওপর ধ্বংসলীলা শুরু করে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফির বলে স্ট্যাম্পই উড়ে গেলো বিরেন্দর শেবাগের। যিনি কি না বাংলাদেশকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলেন।
এরপর রবিন উথাপ্পাও ফিরলেন মাশরাফির বলে আফতাবের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শচীন টেন্ডুলকারকে ৭ রানে ফিরিয়ে দেন আবদুর রাজ্জাক। দ্য ওয়াল খ্যাত রাহুল দ্রাবিড় ১৪ রান করে মোহাম্মদ রফিকের এলবিডব্লিউর শিকার হলেন। যুবরাজ সিংকে নিয়ে কিছুটা লড়াই গড়ে তুলেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। দু’জন গড়েন ৮৪ রানের জুটি।
কিন্তু আবদুর রাজ্জাকের ঘূর্ণির সামনে সেদিন ৪৭ রান করে আউট হয়ে যেতে হয় যুবরাজ সিংকে। অন্যপ্রান্তে একা লড়াই করতে থাকা সৌরভ গাঙ্গুলিও আর টিকতে পারলেন না। ৬৬ রান করার পর মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ দিয়ে দেন রাজ্জাকের হাতে।
এরপর ধোনি, হরভজন এবং অজিত আগারকার আউট হলেন রানো খাতা খোলার আগেই। জহির খান ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন এবং মুনাফ প্যাটেলও ১৫ রান করে আউট হলে শেষ পর্যন্ত ৪৯.৩ ওভারে ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। মাশরাফি ৩৮ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। আবদুর রাজ্জাক ৩টি এবং মোহাম্মদ রফিক নেন ৩ উইকেট।
১৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে শাহরিয়ার নাফীস (২) আউট হয়ে গেলেও ভড়কে যাননি তরুণ ওপেনার তামিম ইকবাল। তার জহির খান কিংবা মুনাফ প্যাটেলদের বলগুলোকে ড্যান্সিং ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলা শটগুলো এখনও চোখে ভাসে সবার।
৫৩ বলে ৫১ রান করে আউট হয়েছিলেন তামিম। অন্যপ্রান্তে ১০৭ বল খেললেও ৫৬ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিকুর রহীম। আফতাব আহমেদ চার নম্বরে নেমে ৮ রান করে আউট হলেও আরেক তরুণ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ছিলেন আপোষহীন। ৮৬ বল খেলে ৫৩ রান করে আউট হন তিনি। হাবিবুল বাশার করেন ১ রান।
সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামেন আশরাফুল। দলের হয়ে জয়সূচক রান নিয়ে বাংলাদেশকে বিজয়ের উল্লাসে ভাসান আশরাফুল এবং মুশফিক। ৪৮.৩ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টিম বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেই বিশ্বকাপে খেলেছিল সুপার এইটেও। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ভারত।
#OnThisDay in 2007, Bangladesh stunned India at the World Cup! pic.twitter.com/mQQgJiKXYH
— Cricket World Cup (@cricketworldcup) March 17, 2019
আইএইচএস/জেআইএম