বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর যাবেন রুবেল, চিকিৎসায় প্রয়োজন ৪০ লাখ টাকা
প্রথমে কথা ছিল বুধবার যাবেন। পরে যাবার তারিখ একদিন পিছিয়ে করা হয়েছে ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার। সব কিছু ঠিক থাকলে সপ্তাহখানেক আগে ব্রেন টিউমার ধরা পড়া জাতীয় ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেল উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামী বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন ।
আজ সকালে জাগো নিউজের সাথে আলাপে এ তথ্য জানিয়েছেন মোশাররফ রুবেল। তার ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হবার খবরে ক্রিকেটাঙ্গন উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। কি হয়? কি হবে? সুস্থ্য হয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরবেন মোশাররফ রুবেল? এ প্রশ্ন সবার মনেই উকি দিচ্ছে।
আর ক্রিকেটার, কোচ, সংগঠক, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী-সুহ্রদ অনেকেই শুভকামনা জানিয়েছেন। সাহস জোগাচ্ছেন, পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
কিন্তু যার মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়েছে, সেই মোশাররফ রুবেল এখন কেমন আছেন? তার মানসিক অবস্থাই বা কি? তিনি কি চিন্তায়-ভাবনায় ভেঙে পড়েছেন? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে।
তাহলে শুনুন, ব্রেন টিউমারের খবরটি নিশ্চিত হওয়ার গেছে গত শুক্রবার। তারপর খুব স্বাভাবিকভাবেই অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কি হবে সাত-পাঁচ ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। তখন যতটা রোগে ভুগে, তার চেয়ে চিন্তায় ভেঙে পড়েছিলেন বেশি।
কিন্তু সময়ের প্রবাহতায় তা সে অস্থিরতা কেটে গেছে অনেকখানি। এখনকার খবর, আগের চেয়ে ভাল আছেন মোশাররফ রুবেল, স্বাভাবিক আছেন। সবার সাথে ভালমতই কথাবার্তা বলছেন। আপন জনের ফোনও ধরছেন নিয়মিত।
আজ সকালে এ প্রতিবেদকের ফোন পেয়ে অন্য সময়ের মত স্বাভাবিকভাবেই ফোন রিসিভ করেন মোশাররফ রুবেল। সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ভালোভাবেই।
নিজের চিকিৎসার খবর জানাতে গিয়ে মোশাররফ রুবেল জানান, সিঙ্গাপুরের বিশ্বখ্যাত মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের নামী বিশেষজ্ঞ এলভিন হং তার চিকিৎসা করাবেন।
ঢাকায় তার মাথায় করা সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজবেথ হাসপাতালে ড. এলভিন হংয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে আগেই এবং তিনি দেখে মোশাররফ রুবেলের সাথে কথাও বলেছেন। তার পরামর্শেই সিঙ্গাপুর যাওয়া।
নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মোশাররফ রুবেল জানান, ‘হ্যাঁ শুরুর দিকে খারাপ লাগতো বেশী। মানসিকভাবেও খানিকটা ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা কেটে গেছে অনেকটা। আল্লাহর রহমতে এখন ভাল বোধ করছি। আশপাশের সবাই সাহস জোগাচ্ছেন। দোয়া করছেন। শুভ কামনা ও সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাসও পাচ্ছি সবার কাছ থেকে। এখন আল্লাহ ভরসা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে যাই, ড. এলভিন হং দেখুক। তারপর তিনি আমাকে দেখে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তবেই না সিদ্ধান্ত নিবেন, কি করবেন? অপারেশন হবে ? অপারেশননের পর বায়োপসি করে তারপর নিশ্চিত হওয়া যাবে টিউমারের সত্যিকার অবস্থা কি? কতদিনের চিকিৎসা লাগবে? কেমো দিতে হবে, না অন্য কিছু করতে হবে ? এসব ডাক্তার এলভিন হং জানাবেন। তার পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলবে চিকিৎসা।’
ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা, অপারেশন ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয় মিলে মোটা অংকের অর্থ লাগার কথা। কত টাকা খরচ হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ রুবেল বলেন, ‘এটা আসলে অপারেশনের পর বায়োপসি করলে জানা ও বোঝা যাবে। তবে শুধু মস্তিষ্কের অপারেশনে ব্যয় হবে ২০-২৫ লাখ টাকা। এর বাইরে কেমো দেয়া, সিঙ্গাপুরে অনন্ত তিন সপ্তাহ থাকা ও আনুসাঙ্গিক খরচপাতি সহ ৪০ লাখ টাকার মত লাগবে বলে ধারণা করছি। এখন যাবার পর চিকিৎসা শুরু হলে এবং চিকিৎসার ধরণই বলে দেবে আসলে কত টাকা খরচ হবে।’
এই ৪০ থেকে ৪০ লাখ টাকা তার একার পক্ষে খরচ বা এ ব্যয়বহুল চিকিৎসা তার একার চেষ্টায় করানো কঠিন। তাই মোশাররফ রুবেল বিসিবির শরণাপন্ন হয়েছেন। ইতিমধ্যেই বিসিবি সিইও নিজামউদ্দীন সুজনসহ একাধিক শীর্ষ কর্তাকে তার মস্তিষ্কে টিউমারের কথা এবং সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার কথা জানিয়েছেন মোশাররফ রুবেল। এর বাইরে ক্রিকেটারদেরও অনেকে তার পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তারপরও এ ব্যয় বহুল চিকিৎসায় বিসিবিই সবচেয়ে হতে পারে সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। বিনয়ী মোশাররফ রুবেল অবশ্য মিডিয়ার কাছে সেভাবে কোন আবেদন রাখেননি। তবে জাতীয় দলের একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে মোশাররফ রুবেল তার চিকিৎসার পুরো না হলেও বড় অংশের খরচ বোর্ড থেকে আশা করতেই পারেন।
বিসিবি অতীতেও অসুস্থ্য ক্রিকেটার, ক্রীড়াবীদ, কোচ, সংগঠক ও সাংবাদিকের পাশে দাঁড়িয়েছে। এবার মোশাররফ রুবেলের পাশেও দাঁড়াবে- এমন প্রত্যাশা সবার।
এদিকে দেশের ক্রিকেট সমর্থক, ভক্ত ও অনুরাগিদের অনেকেই মোশাররফ রুবেলের আরোগ্য কামনা করছেন। জাগো নিউজ পরিবারও ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেলের আরোগ্য কামনা করছে। সৃষ্টি কর্তা তার সহায় হোন। সিঙ্গাপুরে সফল চিকিৎসা শেষে আবার সুস্থ্য হয়ে দেশে ফেরত আসেন মোশাররফ রুবেল। সেটাই প্রত্যাশা।
এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ