সেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সৌম্য
তাকে নিয়ে যত তির্যক কথা বার্তা, সমালোচনা আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হোক না কেন; কঠিন সত্য হলো, ২৫ মাস ১০ দিন আগে দেশের বাইরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই প্রায় সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন সৌম্য সরকার।
কি আশ্চর্য, শেষ পর্যন্ত আজ সেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সাতক্ষীরার এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে কিউইদের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের চার নম্বর ও দেশের বাইরে প্রথম টেস্টে ওপেন করতে গিয়ে শতরানের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৪ রানের আক্ষেপ থেকে যায়।
১৫৭ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে ১০৪ বলে ১১ বাউন্ডারিতে ৮৬ রানে সাজঘরে ফেরত এসেছিলেন সৌম্য। কিউই ফাস্টবোলার ট্রেন্ট বোল্টের বলে শর্ট কভারে ক্যাচ দিয়ে সেবার সম্ভাব্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন ড্যাশিং এই ব্যাটসম্যান। বোল্টের ফুল লেন্থ ডেলিভারি হঠাৎ খানিক থেমে আসে। সৌম্য ড্রাইভ করবো কি করবোনা করতে গিয়ে দোটানায় থেকে পুশ করে বসেন। বল চলে যায় শর্ট কভারে। গ্র্যান্ডহোম সামনে শরীর ফেলে মাটির সামান্য ওপর থেকে তা ধরে ফেলেন।
তার আগে অবশ্য ৫২ রানে গ্র্যান্ডহোমের বলে স্লিপে জীবন পেয়েছিলেন সৌম্য। ক্যাচটি আসলে ছিল প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো রস টেলরের। কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপ ফিল্ডার জিত রাভাল ডান দিকে ঝাঁপিয়ে চেষ্টা করায় ধোঁকা লাগে টেলেরর। বেঁচে যান সৌম্য। বল চলে যায় সীমানার ওপারে।
তার আগের ওভারে গ্র্যান্ডহোমকে প্রথমে মিড উইকেটে পুল করে তার পর অন ড্রাইভে মিড অন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৫৪ বলে সাত বাউন্ডারিতে পূর্ণ করেন প্রথম টেস্ট ফিফটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তিন অংকে পৌঁছানো হয়নি। তারপর নয় নয় করে খেলে ফেলেছেন আরও আটটি টেস্ট। কিন্তু ‘টেস্ট হান্ড্রেড’ আর করা হয়নি। সেটা অপূর্ণই ছিল।
সেঞ্চুরি বহুদূরে, সেই ২০১৭ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টের উভয় ইনিংসে (৭১ ও ৫৩) অর্ধশতক ও কলম্বোর পি সারা ওভালে (৬১) ফিফটির পর আর চল্লিশের ঘরেও পৌঁছাতে পারেননি। বরং পি সারা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের শততম টেস্টের ঐতিহাসিক ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৬১ রানের তেজোদ্দীপ্ত ইনিংস খেলার পর কোথায় যেন হারিয়ে যান সৌম্য। পরের ১১ (১০+৮+১৫+৩৩+৯+৯+৩+০+১১+ ১৯+১) ইনিংসে শুধুই ব্যর্থতার ঘানি টানা।
এবার হ্যামিল্টনে গিয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও রানের দেখা মেলেনি। ১ রানে আউট। বলের ওপর চোখ না রেখে অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল ছাড়তে গিয়ে গ্লাভসে লেগে কট বিহাইন্ড হয়ে বিফল মনোরথে সাজঘরে ফেরা। অবশেষে ৩ মার্চ শুক্রবার নিজেকে খুঁজে পাওয়া।
আস্থার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠা। নিজের মেধা-প্রজ্ঞা ও সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলা এবং শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতকের দেখা পাওয়া। ঠিক সোয়া চার ঘন্টা (২৫৫ মিনিট) উইকেটে কাটিয়ে ১৭১ বলে ১৪৯ রান করেছেন সৌম্য। যার ১১৪ রান এসেছে শুধু চার (২১টি) আর ছক্কা (৫টি) থেকে।
এআরবি/এমএমআর/এমএস