এক ম্যাচে এত চার, এত ছক্কা!
একটি ওয়ানডে ম্যাচে কতটা ছক্কা হতে পারে? ক্রিকেটের পরিসংখ্যান নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাটি করেন, তাদের কাছে রেকর্ডটা জানা থাকতে পারে। যারা খোঁজ-খবর রাখেন, তবে পরিসংখ্যান জানেন না, তারা সংখ্যাটা শুনলে চোখ কপালে তুলে ফেলবেন। বুধবার রাতে গ্রেনাডার সেন্ট জর্জ পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচটিতে দুই দলের ব্যাটসম্যানরা মেরেছেন মোট ৪৬টি ছক্কার মার।
এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কার মার এর আগে মেরেছিলো ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া। ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। ওই ম্যাচে দু’দল মিলে মেরেছিল মোট ৩৮টি ছক্কার মার। প্রায় অর্ধযুগ এই রেকর্ড অক্ষুন্ন ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা মিলে সেই রেকর্ড শুধু ভাঙেনইনি, ছক্কা মারার রেকর্ডকে নিয়ে গেলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
সেন্টজর্জে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর যে ঝড় বইয়ে দিয়েছিল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা, তা রীতিমত অবাক করার মত। জস বাটলার একাই মারেন ১২টি ছক্কা। সব মিলিয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা মোট ২৪টি ছক্কার মার মারেন। তাতেই গড়ে ফেলেন বিশ্ব রেকর্ড।
এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই এক ইনিংসে ২৩টি ছক্কা মেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মারা ২২ ছক্কার রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যান গেইলরা। আগের রেকর্ড ভাঙতে ক্যারিবীয়দের ৫ বছর সময় লাগলেও, তাদের রেকর্ড ভাঙতে ইংলিশদের সময় লাগলো মাত্র এক সপ্তাহ এবং তিন ম্যাচ। ২৩ ছক্কার রেকর্ড ভেঙে ২৪ ছক্কা নিয়ে এখন সবার ওপরে ইংল্যান্ড।
জর্জটাউনে ইংলিশদের মারা ছক্কাতেই থেমে গেলে হয়তো খুব বেশি মাতামাতি হতো না, কিন্তু এই এক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজও কম যায়নি। ৪১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন ক্রিস গেইলও। তিনি একাই মারেন ১৪টি ছক্কা। ক্যারিবীয়রা সবাই মিলে মেরেছেন মোট ২২টি ছক্কার মার। দুই ইনিংস মিলে হলো মোট ৪৬ ছক্কা। অথ্যাৎ, দুই ইনিংসে মোট ৮০৭ রানের মধ্যে ২৭৬ রানই এসেছে ছক্কা থেকে।
এই ম্যাচে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা মোট মেরেছেন ৬৪টি বাউন্ডারির মার। ইংল্যান্ডের ৩৪টি বাউন্ডারির বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মেরেছে মোট ৩০টি বাউন্ডারি। যদিও এক ম্যাচে সর্বোচ্চ বাউন্ডারি মারার রেকর্ড থেকে অনেক দুরে রয়েছে এই ম্যাচ। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সেই অতিমানবীয় ম্যাচটিতে (অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৩৮ রান) বাউন্ডারি হয়েছিল ৮৭টি।
তবে, সেন্ট জর্জ কিন্তু একটি ক্ষেত্রে পেছনে ফেলে দিয়েছে ২০০৬ সালের জোহানেসবার্গের সেই ম্যাচটিকে। এক ম্যাচে বাউন্ডারি এবং ছক্কা থেকে আসা মোট রানের ক্ষেত্রে সবার ওপরে উঠে গেলো সেন্ট জর্জের এই ম্যাচ। ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা মোট ছক্কা এবং বাউন্ডারি থেকে রান করেছে ৫৩২। ৪৬ ছক্কা থেকে ২৭৬ এবং ৬৪ বাউন্ডারি থেকে এসেছে ২৫৬ রান।
অথচ, ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সেই অতিমানবীয় ম্যাচে বাউন্ডারি এবং ছক্কা থেকে মোট রান হয়েছিল ৫০৪। অর্থ্যাৎ, সেন্ট জর্জে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাউন্ডারি ও ছক্কা থেকে ২৮ রান বেশি করেছে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এক ইনিংসে বাউন্ডারি আর ছক্কা থেকে সর্বোচ্চ ২৯০ রান করেছিল ইংল্যান্ডই। গত বছর নটিংহ্যামে যে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ড রেকর্ড ৮৪১ রানের ইনিংস গড়েছিল, সে ম্যাচেই ২১ ছক্কা এবং ৪১ বাউন্ডারিতে ২৯০ রান করেছিল তারা। এবার সেন্ট জর্জে এক ইনিংসে ইংল্যান্ড বাউন্ডারি এবং ছক্কা থেকে করলো ২৮০ রান। যা এক ইনিংসে বাউন্ডারি ও ছক্কা থেকে আসা রানের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে।
অর্থ্যাৎ সেরা দুটিই ইংল্যান্ডের দখলে। সেরা পাঁচটির মধ্যে ইংল্যান্ডের রয়েছে আরও একটি। ২০১৬ সালে নটিংহ্যামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৪৪ রান করেছিল তারা। ওই ম্যাচেই বাউন্ডারি এবং ছক্কা থেকে তারা রান করেছিল ২৬৮টি। তার আগে ২০১৫ সালে মুম্বাইতে স্বাগতিক ভারতের কিপক্ষে বাউন্ডারি এবং ছক্কা থেকে এক ইনিংসে ২৭২ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। ওই ম্যাচে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৩৮ রান করেছিল প্রোটিয়ারা।
আএইচএস/এমএস