৫০০ ছক্কা মেরে ১০ হাজারি ক্লাবে গেইল
ছক্কা মেরেই ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন ক্রিস গেইল। ব্যাটের হাতলের ওপর বসিয়ে দিলেন নিজের মাথার হেলমেটটা। এক সঙ্গে দুটি বিরল রেকর্ডে পৌঁছে যাওয়ার পর এমন অভিনব উদযাপন তো মানায় গেইলের মত ব্যাটসম্যানের পক্ষেই!
আদিল রশিদের করা ১৭তম ওভারের ৫ম বলটিতে রচিত হলো এক বিরল ইতিহাস। ক্রিকেট ইতিহাসে তৈরি হলো এক নতুন অধ্যায়। প্রথম কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০০ তম ছক্কা মারলেন ক্রিস গেইল এবং এই ছক্কার সঙ্গে তিনি পৌঁছে গেলেন ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলকে।
তবে সবচেয়ে কাকতালীয় বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০০ ছক্কা মেরেই অভাবনীয় এক মাইলফলকে পৌঁছালেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব। দ্বিতীয় ক্যারিবিয়ান এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪তম ব্যাটসম্যান হিসেবে পৌঁছে গেলেন ১০ হাজার রানের মাইলফলকে। ক্যারিয়ারের ৫০০তম ছক্কা মেরেই ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছানোর গৌরব যে শুধুমাত্র একাই এখন গেইলের!
আদিল রশিদ যখন ১৭তম ওভারের বল করতে আসলেন, তখন গেইলের ক্যারিয়ারের রান ৯৯৯৬। ক্যারিয়ারে মোট ছক্কার সংখ্যা তখন ৪৯৯টি। আদিল রশিদকে প্রথম বল মোকাবেলা করলেন ড্যারেন ব্র্যাভো। ১ রান নিয়ে স্ট্রাইকে দিলেন গেইলকে। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেললেন গেইল। কোনো রান নিতে পারলেন না। ৫ম বলেই ফ্রন্ট ফুটে এসে সোজা বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে দিলেন বলটি।
এই এক ছক্কায় ইতিহাসে প্রথম ৫০০ ছক্কার অধিকারী হয়ে গেলেন গেইল। সঙ্গে দ্বিতীয় ক্যারিবিয়ান হিসেবে ছুঁয়ে ফেললেন ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক। ম্যাচ শেষে গেইলের নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ১০০৭৪ রান। ছক্কা মোট ৫০৬টি।
গেইল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করেছিলেন ৪৭৬টি ছক্কা নিয়ে। রান ছিল ৯৯২৭। ১০ হাজারের মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য তার প্রয়োজন ছিল ২৭৩ রান। তিন ম্যাচেই করে ফেলেছেন তিনি ৩৪৭ (১৩৫+৫০+১৬২, মোট চার ম্যাচ হবে, একটি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে) রান। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৪১৫ রান ব্রায়ান লারার। তাকে ছাড়িয়ে যেতে গেইলের আর প্রয়োজন ৩৪১ রান।
সিরিজ শুরুর আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন আগামী বিশ্বকাপই তার শেষ। এরপর ওয়ানডে ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়ে দেবেন। বিশ্বকাপেই হয়তো তিনি পেছনে ফেলে দেবেন কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাকে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই খেলেছিলেন ১৩৫ রানের ইনিংস। ওইদিন মেরেছিলেন ১২টি ছক্কা। সেদিনই তিনি পার হয়েছিলেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির রেকর্ড। আফ্রিদি ৫২৪ ম্যাচে (তিন ফরম্যাট মিলিয়ে) ছক্কা মেরেছেন ৪৭৬টি। ৪৪৪তম (তিন ফরম্যাটে) ম্যাচে আফ্রিদিকে পেছনে ফেলেন গেইল। এবার ৪৪৭তম ম্যাচে এসে পার হলেন ৫০০ ছক্কার বিরল এক মাইলফলক।
টেস্টে ১০৩ ম্যাচে ৯৮টি ছক্কা মেরেছেন গেইল। ২৮৮ ওয়ানডেতে ছক্কা মেরেছেন ৩০৫টি। আর ৫৬টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে গেইলের ছক্কা ১০৩টি। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে গেইলের মারা মোট ছক্কার সংখ্যা ৯০৫টি।
এই ম্যাচেই আরো একটি মাইলফলকে পৌঁছালেন ক্রিস গেইল। শুধুমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০তম ছক্কার মার মারলেন তিনি এই ম্যাচে। ওয়ানডেতে এখন তার মোট ছক্কার সংখ্যা ৩০৫টি। যদিও, এই একটি ক্ষেত্রে এখনও তিনি পাকিস্তানের আফ্রিদির চেয়ে অনেক পিছিয়ে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৩৫১টি ছক্কা মেরেছেন আফ্রিদি। পাকিস্তানের সাবেক এই তারকাকে ছুঁতে হলে গেইলের এখনও ৪৬টি ছক্কার প্রয়োজন। যদিও গত তিন ম্যাচে তিনি যেভাবে মোট ৩০টি ছক্কার মার মেরেছেন, তাতে করে আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত যে তিনি আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে যাবেন না, তা কি করে বলা যায়?
আইএইচএস/জেআইএম