বিশ্বকাপের আগে পরীক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ লিটন
বিশ্বকাপের আর মাত্র বাকি ১০০ দিন। এই ১০০ দিন, তথা তিন মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার মত বড় কোনো সুযোগ আর বাকি নেই বাংলাদেশের সামনে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটাই ছিল সবচেয়ে বড় সুযোগ। আগামী বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি কেমন সেটা যাচাই করারও বড় মাধ্যম ছিল এই সিরিজ।
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বরাবরের মতই বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হলো। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেই পরবর্তী টেস্ট সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে টাইগারদের। বিশ্বকাপের আগে বলতে গেলে হতাশারই এক সিরিজ শেষ হলো বাংলাদেশের। যদিও বিশ্বকাপের ঠিক আগে, আয়ারল্যান্ডে একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে টাইগাররা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজ দিয়েই হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা নির্বাচকরা বিশ্বকাপের জন্য দল গোছানোর প্রাথমিক কাজটা সেরে নিয়েছেন। এ কারণে নিউজিল্যান্ড সিরিজটা ছিল ক্রিকেটারদের জন্য কঠিন এক পরীক্ষার নামও। এই পরীক্ষায় ২-৩জন ছাড়া সন্দেহাতীতভাবেই বাকিরা সবাই ফেল করেছেন।
কিন্তু ব্যর্থতা পরিমাপ করতে গেলে সেখানে যে কয়েকজনের নাম উপরে উঠে আসবে, তার মধ্যে লিটন দাসের নামই থাকবে সবার ওপরে। ওপেনার তামিম ইকবালও ব্যর্থ হয়েছেন। তিন ম্যাচে (৫+৫+০) ১০ রান করেছেন তিনি। কিন্তু তার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই কারও। এই সিরিজে পারেননি। পরের সিরিজে কিংবা টুর্নামেন্টে ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবেন তিনি।
কিন্তু তামিমের ওপেনিং পার্টনার লিটন কুমার দাসের অবস্থা সত্যিই খারাপ। তার পরীক্ষা নিতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন নির্বাচকরাও। তিন ম্যাচে তার পারফরম্যান্স ১+১+১= ৩ রান। তামিমের মত ক্ষমা করে দেয়া যেতো তাকেও। যদি না, তার মধ্যেও গভীরতা থাকতো। পরিণত হতেন তিনি। কিন্তু যিনি ৭-৮ ম্যাচ বিরতি দিয়ে একটা চল্লিশ-পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেন, তাকে দিয়ে আগামী বিশ্বকাপে কি করবে বাংলাদেশ?
তার মধ্যে প্রতিভা আছে, এ নিয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই। তার সামর্থ্য নিয়ে এখন কারোরই কোন প্রশ্ন কিংবা সন্দেহ নেই। তার সামর্থ্য যে আছে, সেটা তিনি ইতিমধ্যেই প্রমাণ করে ফেলেছেন। কিন্তু সেই সামর্থ্য অনুযায়ী কেন মাঠে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন না সেটাই বড় বিষয়।
এখনও পর্যন্ত দেশের হয়ে এই ওপেনার খেলেছেন ২৭ ম্যাচ। রান করেছেন কেবল ৫০৮। গড় ১৯.৩৫। সেঞ্চুরি কেবল একটি এবং হাফ সেঞ্চুরিও ১টি। এই ২৭ ম্যাচের মধ্যে দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি ১৬ ম্যাচে। অর্থ্যাৎ এই ১৬ ম্যাচের একটিতেও ১০ রানও করতে পারেননি তিনি। সেই ১৬ ইনিংসের রান যথাক্রমে- ৮,০,৫,০,৭,৬,০,৬,৭,৬,৪,০,৮,১,১ ও ১।
বাকি ১১ ইনিংসের মধ্যে ২০ রানের ঘরে যেতে পারেননি ৩ বার। সেই ইনিংস গুলো ১৭,১৭,১৪। লিটন কুমারের ব্যাটিংয়ের বড় বৈশিষ্ট্য, কখনো টানা দুই ইনিংসে চল্লিশের কোন ইনিংস খেলতে পারেননি। ২৭ ম্যাচের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৪ বার ডাক মেরেছেন। যার তিনটিই দেশের মাটিতে। অন্যটি দুবাইয়ে।
একটি সেঞ্চুরি এবং একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন যে ম্যাচে, সেখানেও লিটন ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। কারণ, লিটনের ভালো ইনিংস খেলার প্রথম শর্তই হতে হবে যেন ইনিংসের শুরুতে তাকে জীবন পেতে হবে। ম্যাচের শুরুতেই চোখ বন্ধ করে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেবেন এবং সেই ক্যাচ যদি প্রতিপক্ষ ফিল্ডার ছেড়ে দেন, তখন সতর্ক হন লিটন এবং ভালো ইনিংস খেলার চেষ্টা করেন। ত্রিশ কিংবা চল্লিশোর্ধ যে ইনিংসগুলো রয়েছে, তার সবগুলোতেই রয়েছে লিটনের জীবন পাওয়ার সৌভাগ্য।
দেশের মাটিতে লিটন ১৫ ম্যাচের ১৫ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছেন মাত্র ২৮৩। সর্বোচ্চ রান ৮৩, গড় ২০.২১। বাকিটা বিদেশের মাটিতে। এশিয়া কাপটাই ভালো কেটেছিলো। ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন এশিয়া কাপের ফাইনালে।
এমন পারফরম্যান্স নিয়েই বিশ্বকাপের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি টুর্নামেন্টের আগে ওপেনিংয়ের মত জায়গাটা লিটন দাসেরই দখলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফরমার লিটন হয়তো আগামী প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ব্যাটিং করবেন। সেই পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপে আবারও ওপেনিংয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ পজিশন সামলানোর দায়িত্ব দেয়া হবে তাকে।
সৌম্য সরকারেরও নিজেকে পরখ করে নেয়ার দারুণ সুযোগ ছিল এই সিরিজে। কিন্তু নিজেকে মেলেই ধরতে পারলেন না কখনও ওপেনিংয়ে, কখনও ওয়ানডাউনে খেলা এই ব্যাটসম্যান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচে করেছেন ৫০ রান। প্রথম ম্যাচে ৩০, পরের ম্যাচে ২০ এবং শেষ ম্যাচে করলেন শূন্য রান। বিশ্বকাপের আগে সৌম্যর নিজেকে আর পরিণত করে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
আইএইচএস/পিআর