নেই সাকিব, নিষ্প্রভ তামিম মুশফিক মাহমুদউল্লাহ : তবুও ২৩২ কম কী?
সকাল সাতটা কাকডাকা ভোর নয়। কর্মজীবি মানুষ, অফিসযাত্রী , স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা প্রতিদিন এর আগেই ঘুম থেকে উঠে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র ও গন্তব্যে বেরিয়ে পড়েন। তবে বাকিদের জন্য সকাল সাতটা কিন্তু বেশ সকাল। কিন্তু আজ ক্রিকেটের টানে টাইগারদের ভালবাসায় সেই সকাল সকাল উঠে পড়া।
তবে ঘুম ভেঙ্গে টিভির সামনে বসতেই দু'দুটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রত্যক্ষ করা। প্রথমত, নেপিয়ারে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে অধিনায়ক মাশরাফির বোলিং না নিয়ে আগে ব্যাটিং বেছে নেয়া। আর দ্বিতীয় ধাক্কা হলো নেপিয়ারের ফাস্ট-বাউন্সি ট্র্যাকে ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট আর লকি ফার্গুসনের আগুনঝড়া বোলিংয়ের মুখে প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমে ৪২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া।
ইনিংসের বয়স নয় পুরো হবার আগেই (৮) তামিম (৫), লিটন (১), সৌম্য (২২ বলে ৩০) আর মুশফিক (১৪ বলে ৫) সাজঘরে। বসন্তের প্রথম দিনে এমন সকাল যে নেহায়েত অনাকাঙ্ক্ষিত!
কিন্তু ক্রিকেট তো আর ঋতুরাজ বসন্ত নয় যে চারিদিক ফুলে ফুলে সুশোভিত, সৌরভে মাখা থাকবে। ক্রিকেট বড় নিষ্ঠুর। সময়ের দাবি মেটাতে না পারলে আর নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে ব্যর্থ হলে অনিবার্য বিপর্যয়। ফাল্গুনের প্রথম দিন নেপিয়ারে সেই বিপর্যয় দিয়ে শুরুর পরও শেষ পর্যন্ত যা হলো, তাকে আর যাই হোক মন্দ বলা যায় না।
যদিও সমালোচকরা ইতিহাস ঘেটে বলে উঠবেন, ‘ভাল' কী করে? নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তো এরচেয়ে আরও অনেক বেশী রান করার রেকর্ড আছে টাইগারদের। সেটা মিথ্যে নয়। শতভাগ সত্য।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্ল্যাকক্যাপসদের সঙ্গে ২৮৮ রানের বড়সড় স্কোর গড়ার কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের। সেটা ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে। হ্যামিল্টনের সেই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অনবদ্য শতরান (১২৩ বলে ১২৮) আর সৌম্য সরকারের অর্ধশতক (৫৮ বলে ৫১) ও সাব্বিরের ঝড়ো গতির ২৩ বলে ৪০ রানের ওপর ভর করে ৩০০'র দোরগোড়ায় পৌঁছে কিউইদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। ঐ স্কোর নিয়ে শেষপর্যন্ত প্রাণপন লড়ে হার মেনেছিল ৩ উইকেটে । খেলা শেষ হয়েছিল সাত বল আগেই।
সেটাই শেষ নয়। দুই বছর আগে শেষ নিউজিল্যান্ড সফরে (২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর) ক্রাইস্টচার্চে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ২৬৪ রান তোলারও রেকর্ড আছে টাইগারদের। তবে সেটা আগে ব্যাট করে নয়; স্বাগতিকদের করা ৩৪১ রানের জবাবে।
এছাড়া ২০১০ সালে ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ব্যাট করে ইমরুল কায়েসের (১৩৮ বলে ১০১) শতরানের ওপর ভর করে ২৪১ রানের সম্মানজনক পুঁজি আছে বাংলাদেশের। আগেরবার নিউজিল্যান্ড সফরে আরও একটি ম্যাচেও আগে ব্যাট করে আজকের চেয়ে বেশী (২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর নেলসনে ৯ উইকেটে ২৩৬) রান করেছিল মাশরাফির দল।
অর্থাৎ পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরলে আজকের ২৩২ হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে টাইগারদের পঞ্চম সর্বোচ্চ স্কোর। তাহলে এই রানকে ‘ভাল’ বলার যৌক্তিকতা কী?
এমন প্রশ্নের মুখে শুধু একটি ব্যাখ্যাই খাটে , তাহলো পরিবেশ-পরিস্থিতি তথা খেলার অবস্থা বিচার করলে এই রান অনেক বা যথেষ্ঠ না হলেও একদম কম না, সম্মানজনক। ৪২ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলা এবং দুই ব্যাটিং স্তম্ভ তামিম ও মুশফিকুর রহিম আউট হবার পরও প্রায় আরও দুইশো (১৯০) রান যোগ হয়েছে, সেটা কি কম? মোটেই না।
অবশ্য এখানেও ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করা যাদের অভ্যেস, পরিসংখ্যান যাদের নখদর্পনে- তারা বলবেন কেন সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর চেয়ে খারাপ অবস্থা থেকেও শেষ পর্যন্ত ২৬৫ তাড়া করে অবিস্মরণীয় জয়ের দুর্দান্ত কৃতিত্ব আছে।
তাহলে আজকে ৪২ রানে চার টপ অর্ডার তামিম, লিটন, সৌম্য আর মুশফিক সাজঘরে ফেরার পর ২৩২ রানকে এতবড় করে দেখা হচ্ছে কেন?
বড় করে করে দেখা হচ্ছে এই কারণে যে, গত ২০১৭ সালের ৯ জুন কার্ডিফে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে চার উইকেট হারানোর পর সাকিব (১১৫ বলে ১১৪) আর মাহমুদউল্লাহ (১০৭ বলে ১০২) ২২৪ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়ে অতদূর নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এ ম্যাচে সাকিব নেই।
আঙুলের ইনজুরিতে সিরিজ শেষ হয়ে গেছে টিম বাংলাদেশের প্রাণশক্তির। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আইসিসি ইভেন্ট হলেই যার ব্যাট তেঁতে ওঠে (২০১৫ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি আর সর্বশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শতরান)- সেই মাহমুদউল্লাহও কিছু করতে পারেননি। ফিরে গেছে মাত্র ১৩ রানে।
শেষ বার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ২৩ বলে ৪০ করা সাব্বির (১৩) অনেক ঘটনার জন্ম দিয়ে দলে ঢুকেও ব্যর্থ। মোদ্দাকথা তামিম, লিটন, সৌম্য, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আর সাব্বির- প্রতিষ্ঠিত ছয়জন ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন ৬৭, সেখানে ২৩২ রান আসলেই কি কম?
এআরবি/এসএএস/জেআইএম