তামিমের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের পরও আমাদের জেতা উচিৎ ছিল : সাকিব
এতকাল জানা ছিল বিপিএলের ফাইনালে সেঞ্চুরি করে দলকে ট্রফি উপহার দিতে পারেন শুধু বিদেশী ব্যাটসম্যান এবং সে ব্যাটসম্যান হচ্ছেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ক্রিস গেইল। বিশ ওভারের খেলায় সবচেয়ে সফল উইলোবাজ। যার উপমা আর বিশেষ দিয়ে আসলে শেষ করা যাবে না। ভয়ঙ্কর, বিপজ্জনক, বিধ্বংসী সব। আর ক্রিকেটের এই ছোট ফরম্যাটে এ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানের কৃতিত্ব, অর্জন ও প্রাপ্তি আকাশছোঁয়া।
একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে একটা ফরম্যাটে যত রকম কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব, তার সবগুলো কৃতিত্ব গেইলের একার দখলে। সবচেয়ে বেশী রান, সর্বাধিক সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুুরি, সবচেয়ে বেশী চার ও ছক্কা, প্রথম শতক- সবই গেইলের। টি-টোয়েন্টির সেই প্রবাদপ্রতিম ব্যাটসম্যান গেইল বিপিএলের আগের বারের ফাইনালে ৬৯ বলে ১৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে রংপুর রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন।
তার উত্তাল উইলোবাজি আর ছক্কা বৃষ্টিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটসের বোলিং-ফিল্ডিং। প্রায় সবার স্মৃতির মণিকোঠায় এখনো গেইলের সেই ১৮ ছক্কার বিশ্বরেকর্ড এবং ঢাকার বোলিংকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়ার ঘটনা এখনো জাগরুক আছে। ভাবা হচ্ছিল অমন উত্তাল উইলোবাজি আর হ্যারিক্যান ইনিংস শুধু গেইলের পক্ষেই খেলা সম্ভব। কিন্তু আর কেউ অমন বিধ্বংসী উইলোবাজি করতে পারেন এবং সেটা বাংলাদেশের কেউ- তা হয়তো অতি বড় বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমী- অনুরাগি স্বপ্নেও ভাবেননি।
আজ শেরে বাংলায় সেই ভাবনা ও ধারণা বদলে দিলেন তামিম ইকবাল। দেখিয়ে দিলেন, আমিও পারি অমন বিধ্বংসী ইনিংস খেলতে। আমারও সামর্থ্য আছে সাকিব, নারিন, আন্দ্রে রাসেলের মত বোলারদের মুড়ি মুড়কির মত হাওয়ায় উড়িয়ে ছক্কার নহর বইয়ে দেয়ার। ছক্কার সংখ্যা ধরলে হয়ত তামিম গেইলের পিছনে কিন্তু স্ট্রাকরেটকে বিবেচনায় আনলে তামিমের আজকের ১৪১ রানের ইনিংসটি আরও বিধ্বংসী। গেইল ১৪৬ করেছিলেন ২১১.৫১ স্ট্রাইকরেটে ৬৯ বলে আর তামিম আজ ২৩১.১৪ স্ট্রাইকরেটে ১৪১ রানের টাইফুন ইনিংস খেলেছেন মাত্র ৬১ বলে (১১ ছক্কা ও ১০ বাউন্ডারি)।
গেইলের বিধ্বংসী শতরানে আগেরবারের ফাইনালে ঢাকার বিপক্ষে ২০৬ রানের বড়সড় স্কোর গড়ে ৫৭ রানের বড় জয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রংপুর রাইডার্স আর আজ তামিমের ঐ ব্যাটিং সুনামিতে ১৯৯ রানের বড় সড় স্কোর গড়ে ১৭ রানে জিতে দ্বিতীয় বারের মত বিপিএলের শিরোপা ঘরে তুললো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তাই তামিমই ফাইনাল সেরা।
প্রতিপক্ষ ঢাকা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কন্ঠেও হতাশার রাগিনী, ক্ষেদোক্তি, ‘পরপর দুইবার ফাইনালে একই পরিণতি। আগের বার হেরেছিলাম গেইলে ঝড়ো শতকে আর এবার স্বপ্নভঙ্গ হলো তামিমের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে।'
উল্লেখ্য আগেরবারও টস জিতে সাকিব প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এবার মানে আজও টস জিতে কুমিল্লাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান সাকিব। তবে সাকিব মনে করেন, তামিমের অবিস্মরণীয় ব্যাটিংয়ের পরও ম্যাচ তাদের জেতা উচিৎ ছিল।
ফাইনাল শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সাত মিনিটের কথোপকথনে অন্তত বার তিনেক এ কথা উচ্চারিত হয়েছে ঢাকা অধিনায়কের মুখ থেকে, ‘আসলে আমরা নিজেরাই মোমেন্টাম লুজ করেছি। না হয় এই পিচে ২০০ রান করা মোটেই কঠিন ছিল না। অমন বড়সড় রান তাড়া করতে যেমন প্লাটফর্ম দরকার ছিল, আমরা তা করেও ছিলাম। ১১ ওভার শেষে আমাদের রান ছিল ১ উইকেটে ১২০। তার মানে শেষ ৯ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮০ রানের। সেই সহজ সমীকরণটি আমরা বাস্তবে পরিণত করতে পারিনি। আমার মনে হয় উইকেট যেমন ছিল, তাতে আমাদের অবশ্যই ঐ জায়গা ম্যাচ জিতে আসার উচিৎ ছিল। কিন্তু চমৎকার সূচনার পরও মাঝখানে ছন্দপতন ঘটেছে আমাদের।’
একদম সাজানো বাগানে হঠাৎ কেন তছনচ হলো? কি কারণে রনি তালুকদার (৩৮ বলে ৬৬) আর উপল থারাঙ্গার (২৭ বলে ৪৮) দ্বিতীয় উইকেটে ১০২ রানের বড় পার্টনারশিপের পরও এ পরাজয়? তার দায় নিজের কাঁধেই নিলেন সাকিব। অকপটে বলেও দিলেন, 'আসলে আমাদের দলের ব্যাটিংটা যাদের ওপর অনেক বেশী নির্ভর করে সেই সুনিল নারিন (০), আমি (৩), কাইরন পোলার্ড (১৩) আর আন্দ্রে রাসেল (৪) আমরা একজনও বড় ইনিংস খেলতে পারিনি, সবাই ব্যর্থ। আমরা চারজনের সম্মিলিত স্কোর ছিল ২০। আর আমরা হেরেছি ১৭ রানে।’
সাকিব বোঝাতে চাইলেন ঐ চারজনের একজনের ব্যাট কথা বললে আর হারতে হতো না। উইকেটেকে দারুণ ব্যাটিং সহায় অভিহিত করে সাকিব যোগ করেন, 'তামিম পুরো ২০ ওভার খেলায় তার দল উপকৃত হয়েছে। আমাদের রনি তালুকদারও বেশ ভাল খেলেছে। তবে কেউ একজন পুরো ইনিংস তামিমের মত একদিক আগলে রাখতে পারলে বাকিদের জন্য কাজটি সহজ হয়ে যেত। ’
এআরবি/এসএএস/এমআরএম