এবার আর শেরে বাংলায় ঢাকার বিপক্ষে গেইল ঝড় বইল না
এই ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষেই শেরে বাংলায় আগেরবার ফাইনালে কি উত্তাল উইলোবাজিই না করেছিলেন ক্রিস গেইল! ৬৯ বলে ১৪৬ রানের ইনিংস। যার মধ্যে ছিল ১৮টি বিশাল ছক্কা। যা একটি বিশ্ব রেকর্ড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এত ছক্কা আগে কখনো হাঁকাননি কেউ। গেইলই তা হাঁকিয়েছিলেন। গেইলের সেই হ্যারিকেন ইনিংসে সর্বনাশ নেমে এসেছিল সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটসের। শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।
আজ সেই ঢাকার সাথে রংপুরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগে ঘুরেফিরে সে ম্যাচ আর গেইলের ব্যাটিং তান্ডবের কথাই ছিল অনেকের মুখে। যদিও গেইল এবার ছন্দে নেই। রান খরায় ভুগছেন। আগের ইনিংসে ম্যাচে (১+৮+২৩+৭+০+৫৫+২+১+১০+৩৫+৪৬ = ১৮৮) ইনিংসে মাত্র ১৮৮ রান । একটি মাত্র ফিফটি। তাও তার চিরচেনা ঝড়ের গতিতে নয়। প্রায় বল পিছু স্ট্রাইকরেটে।
গেইলের সঙ্গে সে ব্যাটিংটা যায় না। তবু গেইল জ্বলে উঠতে পারেন যখন, তখন। সেই আশায় ছিল রংপুর শিবির। ভক্ত-সমর্থক আর দর্শকরাও ছিলেন অপেক্ষায়-ইস, আজ যদি চিরচেনা গেইলকে দেখা যায়!
শুরুর আগের প্লাটফর্মটা আগের মতই। আগের বার ফাইনালেও আগে ব্যাটিং করেছিল রংপুর। গেইলের ১৪৬ আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ফিফটিতে ২০৬ রানের বড় সড় স্কোর গড়ে ঢাকার সম্ভাবনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু আজ পারলেন না গেইল। ফিরে গেলেন ১৩ বলে ১৫ রানে। শুরুটাই জন্ম দিয়েছিল নানা জল্পনা-কল্পনার। আন্দ্রে রাসেলের প্রথম ওভারের চার চারটি বল না খেলেই ছেড়ে দিলেন। অফস্টাম্পের বাইরে প্রথম দুই বল এমন ভাবে না খেলে ছাড়লেন, দেখে মনে হলো যেন টেস্টের সকালের সেশন কিংবা ৫০ ওভারের মাচের প্রথম ওভার।
ঐ ছয় বল খেলা নিয়েই প্রেস বক্সে নানা গুঞ্জন। কারো মত, আজ অনেক বেশি সতর্ক-সাবধানী গেইল। ঝড়ো ইনিংস নয়, লম্বা খেলতে চান হয়তো, তাই একদম ঠান্ডা মাথায় শুরু।
কিন্তু সেই আন্দ্রে রাসেলের দ্বিতীয় ওভারেই বদলে গেল এপ্রোচ। মিডল স্টাম্প সোজা ফুল লেন্থ ডেলিভারি পেয়েই সপাটে চালালেন। সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে সাইট স্কিনের ওপাড়ে গিয়ে ছিটকে পড়ল। ঐ ওভারের শেষ বলে কভারের ওপর দিয়ে আবার ছক্কা।
ঐ দুই ছক্কায় বদলে গেল সবার চিন্তা ভাবনা। মনে হলো আজ বুঝি সেই দিন, আবার গেইল ঝড়। ও প্রান্তে মেহেদি মারুফের বদলে ওপেন করতে নামা নাদিফ চৌধুরীও চালালেন বেশ।
বাঁহাতি গেইলের ঝড় থামাতে অফস্পিনার শুভগত হোমকে আনলেন দিলেন ঢাকা ডায়নাইমাইটস অধিনায়ক সাকিব। সেটা বুমেরাং হলো। গেইলের বদলে শুভগত হোমের ওপর প্রবল বেগে চড়াও হলেন ডান হাতি নাদিফ। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চার নম্বর বলে ডেলিভারিকে হাওয়ায় ভাসিয়ে তিন তিনটি ছক্কা হাঁকালেন নাদিফ।
কিন্তু শেষ বলে আবার লং অন আর ডিপ মিড উইকেটের মাঝখান দিয়ে স্লগ করতে গিয়ে তুলে দিলেন আকাশে। এবার আর ছক্কা নয়, ক্যাচ হয়ে গেল। চার ওভার শেষে ৪২ রানে এক উইকেট রংপুরের।
কোয়ালিফায়ার ওয়ানে কুমিল্লার সাথে ৬ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৩৪ রান দেখে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাগিদের সুরে বলেছিলেন, পাওয়ার প্লে ‘তে হাত খেলে খেলতে হবে। আজ চার ওভার শেষে মনে হচ্ছিল, অধিনায়কের দেয়া তাগিদ বাস্তবায়নের চিন্তায় বুঝি রংপুর ওপেনারদের অমন সংহার মূর্তি। কিন্তু কে জানতো, সেটা একদমই ক্ষণস্থায়ী। একটু পরই বদলে যাবে খেলার চালচিত্র। পঞ্চম ওভারে রুবেল হোসেন পর পর দুই বলে গেইল আর রিলে রুশোকে আউট করে নাটকীয়ভাবে খেলার চালচিত্র পাল্টে দিলেন।
এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ