নকআউটে জেতাই আসল, আগের হারজিত নিয়ে ভাবছি না : সালাউদ্দীন
রাত পোহালে নকআউট পর্ব। মানে কোয়ালিফায়ার ওয়ানে মাঠে নামবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। যে দলের বিপক্ষে মরণপণ লড়াই; সেই রংপুর রাইডার্সের সাথে রাউন্ড রবিন লিগে পাত্তাই পায়নি কুমিল্লা।
এক কথায় আগের দুইবার রংপুরের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ইমরুল-তামিম-আফ্রিদিরা। প্রথমবার ৬৩ আর পরের বার ৭২ রানে অলআউট হয়ে ৯ উইকেটে হেরেছেন। সেই দলের সাথেই কোয়ালিফায়ার ওয়ানে খেলতে হবে।
অনেকেই এটাকে বড় মাইনাস পয়েন্ট ভাবছেন। আবার কারো কারো মত এটা বড় দুশ্চিন্তারও কারণ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন কি ভাবছেন? তার কি মনে হয়?
রাউন্ড রবিন লিগে মাশরাফি বাহিনীর সাথে এতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে না পেরে একপেশে হারের ধকল সামলে নকআউট পর্বে চাপ সামলে নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দেয়া কি সম্ভব হবে? কুমিল্লা কি পারবে আগের দুই বারের পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এবার রংপুরকে টপকে ফাইনালে যেতে?
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কোচ সালাউদ্দীন পিছন ফিরে তাকাতে নারাজ। তার কাছে অতীত মানেই ইতিহাস। আর তাই নতুন দিনে নতুন সূর্যর অপেক্ষায় কুমিল্লা কোচ।
আজ সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সাথে আলাপে অনেক কথার ভীড়ে একটি দারুণ মন্তব্য করেছেন রংপুর দ্রৌনাচার্য্য। তার কথা, ‘ ‘রংপুরের সাথে রাউন্ড রবিন লিগের দুই পর্বে হেরেছি বলেই আর জিতবো না, আমি তা ভাবতে রাজি না। ওভাবে দেখতেও চাইনা। আমি তা মনেও করি না।’
জানিয়ে দিয়েছেন, ‘শুধু রংপুরের সাথে দুই ম্যাচেই নয়, আগের সবকটা খেলাই এখন অতীত, ইতিহাস। আমি পিছন ফিরে তাকাতে নারাজ। আর অতীত ও ইতিহাস ঘেঁটে এবং চিন্তা করে লাভ কি? আমি কখনোই অতীত নিয়ে ভাবি না। সামনের দিকে তাকাতে চাই। তাই বলছি, আমরা (মানে কুমিল্লা) যদি রংপুরের বিপক্ষে রবিন লিগের দু পর্বে জিতেও আসতাম, বিশ্বাস করুন; তারপরও আমার চিন্তা-চেতনায় আগের দুই জয় প্রাধান্য পেতনা। আমি তা নিয়ে ভেবে এতটুকু তৃপ্ত থাকতাম না। এখন যেমন কোন হাপিত্যেশ নেই। জিতে আসলেও তাই থাকতো। কারণ আগের দুই ম্যাচই পুরনো ঘটনা। আর কাল যেটা হবে সেটা নতুন। তাই ইতিহাস নিয়ে পড়ে থেকে লাভ কি?’
এরপর অতীতের করুণ স্মৃতির কথা স্মরণ করে সালাউদ্দীন যা বলেন, তার সারমর্ম হলো-রবিন লিগের একচেটিয়া সাফল্য দিয়েই যদি নকআউট পর্বের বৈতরণী পার হওয়া যেত, তাহলে তো আগের বার রংপুর-ঢাকার বদলে কুমিল্লাই ফাইনাল খেলতো।
কারণ রবিন লিগে মাশরাফির রংপুর ও সাকিবের ঢাকাকে ঠিকই দু‘বার করে হারিয়েছিল সালাউদ্দীনের শিষ্যরা। কিন্তু জায়গামত মানে কোয়ালিফায়ারে গিয়ে ঠিক ঐ দুই দলের কাছে হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়।
সে প্রসঙ্গ টেনে সালাউদ্দীন বলেন, ‘আগেরবার আমরা যে দুই দলের বিপক্ষে রবিন লিগের উভয় পর্বে জিতেছিলাম, সেই রংপুর আর ঢাকার কাছেই কোয়ালিফায়ারে গিয়ে আর পারিনি। হেরে বসি। কাজেই আপনিই বলুন, আগে জিতে কি লাভ, যদি আসল জায়গায় জিততে না পারি?’
রংপুরের সাথে দুই ম্যাচের পরিণতি ও ফলকে দুই ভাবে দেখতে চান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। তার কথা, ‘প্রথম ম্যাচ আমরা খারাপ ব্যাটিং করেছি। তাই স্কোরলাইনটা অস্বাভাবিক কম হয়েছে। আর কাল ফিরতি লড়াইয়ে আমাদের লাইনআপই ছিল কমজোরি। যাদের ছোট খাট ইনজুরি ছিল, তাই আমরা তাদের খেলানোর ঝুঁকি নেইনি। সে কারণেই এভিন লুইস ও আফ্রিদিকে খেলানো হয়নি। তবে আমি স্বস্তিতে। কারণ কালকের কোয়ালিফায়ারের আগে পুরো দল ফিট। কোন ইনজুরি নেই। আশা করছি এভিন লুইস ও আফ্রিদিসহ সব প্রতিষ্ঠিত পারফরমারই ফিরবে।’
সালাউদ্দীন কোন বিশেষ তারকা ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করতে চান না। আবার কোন ডিপার্টমেন্টের কাছেও তার বাড়তি প্রত্যাশা নেই। তার কথা, ‘কারো ওপরে বেশি নির্ভর করলে টিম পারফরমেন্স হবে না। আমি চাই সবাই দলে অবদান রাখুক। সব ডিপার্টমেন্ট ভাল খেলুক। তারপরও ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টটা যেন ভাল হয়, সে আশায় আছি। ব্যাটিং ভাল হলে আমার দলের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। আমার মনে হয় আমাদের বোলিংটা ভাল। স্থানীয় বোলাররা সবাই ভাল বল করছে। ব্যাটিংটা ক্লিক করলে সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।’
তামিম ভাল খেলছেন, কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না তেমন। সেটা কি খুব বড় চিন্তার কারণ? কোচ সালাউদ্দীন তা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘তামিম রান তোলায় সেরা পাঁচে আছে, কিন্তু বোলিংয়ে শীর্ষ পাঁচ উইকেট শিকারিতে আমার দলের একজন বোলারও নেই। তারপরও আমার বোলিংটা দারুণ এক ইউনিট। শক্তির কেন্দ্র বিন্দু।’
রংপুরকে এ আসরে অন্যতম সমৃদ্ধ আর শক্তিশালী দল মনে করেন সালাউদ্দীন। তার মূল্যায়ন, ‘রংপুর বেশ শক্তিশালী দল। বিদেশিরা অনেক উঁচু মানের। পারফরমও করছেন ভাল। এবং তারা এক ও দুইয়ে থাকার মত দলই। অ্যালেক্স হেলস আর এ বি ডি ভিলিয়ার্স চলে যাওয়ায় শক্তির তারতম্য ঘটতে পারে। তবে তাদের ব্যাকআপ পারফরমারও আছে। কাজেই আমার মনে হয় না, রংপুরের শক্তির খুব বেশি হেরফের ঘটবে।’
এআরবি/এমএমআর/এমএস