‘দান দান তিন দান’ : এবারও বদলাবে হিসাব?
কথায় বলে, ‘দান দান তিন দান’- ভাবার্থটা খুব সহজ ও পরিষ্কার। মানে আগের দুই দুইবার যা হয়েছে বা ঘটেছে, তিনবারের মাথায় তা নাও হতে পারে। তৃতীয় বার ঘটনা ঘটতে পারে ভিন্ন। এটা হলো কথার কথা, প্রবচন। ক্রিকেটীয় পরিভাষায়ও প্রায় সমার্থক বিশেষ একটা প্রচলিত আছে। তা হলো ‘ল অব অ্যাভারেজ’।
যার আভিধানিক অর্থ হলো, ভাল বা খারাপেরও একটা ধারা আছে। ভালোর পরে খারাপ আসতে পারে। বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করলে বিষয়টা এমন, ‘ক’ পরপর কয়েকদিন খুব ভাল খেলেছে। একটানা কয়েকটি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রানে আছে। কিন্তু সেই ভাল খেলা ও রানে থাকায় হঠাৎ একটা ছেদ নামতে পারে। মানে ভালো খেলতে খেলতে একদিন খারাপ দিন আসতে পারে এবং আসেও। তাই বলা হয় ‘ল অব অ্যাভারেজ’।
আগামীকাল (সোমবার) রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং ঢাকা ডায়নামাইটস ও চিটাগাং ভাইকিংস ম্যাচের আগে ঘুরে ফিরে বাংলাদেশের সেই বহুল প্রচলিত প্রবচন আর ক্রিকেটীয় পরিভাষার সেই ‘ফ্রেইজ’টি অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে।
হঠাৎ কেন মুখে মুখে অমন প্রবচন শোনা যাচ্ছে? নিশ্চয়ই তা জানতে ইচ্ছে করছে? তা হলে শুনুন, এবারের বিপিএলে রাউন্ড রবিন লিগের প্রথম ও ফিরতি- দুই পর্বেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে খুব সহজে হেসে খেলে জিতেছে রংপুর রাইডার্স। দুই ম্যাচেই করুণ পরিণতি ঘটেছে কুমিল্লার। প্রথম পর্বে ৬৩ রানে অলআউট হয়ে ৯ উইকেটে হেরেছেন ইমরুল-তামিমরা। ফিরতি ম্যাচে সালাউদ্দীনের শিষ্যরা ৭২ রানে অলআউট হয়ে আবারও ৯ উইকেটে পরাজিত হয়েছে মাশরাফির রংপুরের কাছে।
এখন কাল কোয়ালিফায়ারে ঐ দুই দলেরই দেখা হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রশ্ন জাগছে রাউন্ড রবিন লিগে দুই ম্যাচেই অনায়াসে জেতা রংপুর আবার জিতবে? নাকি তিন বারের মাথায় এসে হিসেব বদলে যাবে? – সেটাই মূলত দেখার।
কাকতালীয়ভাবে ঠিক একই অবস্থা ঢাকা ডায়নামাইটস ও চিটাগাং ভাইকিংস ম্যাচেও। সেখানেও রবিন লিগের দুই পর্বেই সাকিবের ঢাকার বিপক্ষে জিতেছে মুশফিকের চিটাগং। প্রথম সাক্ষাতে সাকিবের ঢাকাকে ৩ উইকেটে হারানোর পর বন্দর নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফিরতি লড়াইয়েও সাকিব বাহিনীর বিপক্ষে মুশফিকের দল জিতেছে ১১ রানের ব্যবধানে।
সেই দুই দল এবার এলিমিনেটর পর্বের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি। কাল সোমবার এলিমিনেটর ১’এ শেরে বাংলায় ঢাকা আর চিটাগং মুখোমুখি। এবার এলিমিনেটর পর্বেও কি একই ফল হবে? না দান দান তিন দানে এসে হিসেব বদলে যাবে?- তা নিয়েই জল্পনা-কল্পনা।
তিনবারের মাথায় এসে হিসেব বদলে যাবেই, এটা যেমন নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই; আবার তৃতীয়বারে অন্য কোন দল জিতবে না- সেটাও বলার অবকাশ নেই। তবে সংস্কারপন্থী ক্রিকেট অনুরাগিরা বিশেষ করে যারা পরিসংখ্যান নিয়ে বেশী ঘাটঘাটি করেন তারা নতুন কিছুর চিন্তা করতেই পারেন।
কারণ ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, আগেরবারও এমন হয়েছিল। মানে রবিন লিগের প্রথম ও ফিরতি পর্বে জেতা দল শেষ পর্যন্ত কোয়ালিফায়ার পর্বে গিয়ে আর পারেনি। সেটা অন্য কোন দল নয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
এক ঝাঁক তারার দল কুমিল্লা গতবার রবিন লিগ পর্ব শেষে পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে থেকেই কোয়ালিফায়ার খেলতে নেমেছিল এবং রবিন লিগে রংপুর ও ঢাকাকে দুবার করে হারিয়েই শেষ চারে পা রেখেছিলেন তামিম-ইমরুলরা।
মাশরাফির রংপুরের বিপক্ষে তামিমের কুমিল্লা প্রথমবার ১৪ রানে জিতেছিল। ফিরতি পর্বেও পারেনি রংপুর, কুমিল্লা জিতেছিল ৪ উইকেটে। কিন্তু কোয়ালিফায়ার ১’এ বদলে যায় সমীকরণ। সেখানে আর রবিন লিগের হিসেব টিকেনি। নতুন হিসেবের দেখা মেলে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৩৬ রানে রানে জিতে শেষ হাসিটা রংপুরই হেসেছিল। এরপর কোয়ালিফাই ২’তে গিয়েও আর পারেনি তামিমের দল।
নাটকীয়ভাবে যে দলকে রবিন লিগে দুইবার হারিয়ে এসেছিল কোয়ালিফায়ার ২’তে সেই ঢাকার কাছে ৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে শিরোপাস্বপ্ন ধূলিসাৎ হয় কুমিল্লার। অথচ ঐ ঢাকার বিপক্ষেও প্রথমবার ৪ উইকেট আর ফিরতি পর্বে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাকিবের দলের বিপক্ষে ১২ রানে জিতেছিল সালাউদ্দীনের শিষ্যরা। কিন্তু শেষ সর্বনাশটা ঘটে সেই ঢাকার কাছে কোয়ালিফায়ার ২’এ ৯৫ রানের বিরাট ব্যবধানে হারের মধ্য দিয়ে। আর তাতেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নীল হয় কুমিল্লা।
এবারও কি কোয়ালিফায়ার ১ আর এলিমিনেটর ১’এ গিয়ে সেই আগের হিসেবটাই আসবে ফিরে? নাকি সনাতন ধারায় রাউন্ড রবিন লিগে জয়ী দলই হাসবে শেষ হাসি? অপেক্ষা ২৪ ঘণ্টার। সোমবার রাতের মধ্যেই জানা যাবে প্রশ্নের উত্তর।
এআরবি/এসএএস/এমএস