ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সফল মুশফিক

বিশেষ সংবাদদাতা | চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশিত: ০৭:৩৫ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

এটাকে কি ভাগ্য বলবেন, নাকি নিজ সিদ্ধান্তের ওপর আস্থার প্রতিদান? তা নিয়ে একটা ছোটখাট বিতর্ক হতেই পারে। কারণ ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে থাকা এবং প্রায় প্রতি ম্যাচে রান করা মুশফিকুর রহীম চট্টগ্রামের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে এসে আগের তিন ম্যাচে টস জিতে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন, তার একটিও সফল হয়নি। বরং সবকটাই ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সবার ওপরে থেকে চট্টগ্রামে খেলতে এসে আজ ঢাকা ডায়নামাইটসের সাথে ম্যাচটিসহ টানা চার ম্যাচেই টস জিতলেন মুশফিকুর রহীম; কিন্তু প্রথম তিনদিনই তার সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রমাণিত হয়। দলও টানা তিন ম্যাচে হেরে বসে। অবশেষে আজ ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে সফল চিটাগাং ভাইকিংস। কঠিন লড়াইয়ে ১১ রানের জয় নিয়ে দল পৌঁছে গেল শেষ চারে।

রংপুর রাইডার্স আর রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয়াটা ‘বুমেরাং’ হয় মুশফিকের জন্য। ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে মুশফিক টস জিতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান মাশরাফির রংপুর রাইডার্সকে।

শতভাগ ব্যাটিং উপযোগি পরিবেশ আর শিশির ভেজা আউটফিল্ডে স্পিনারদের চরম অকার্যকারিতাকে কাজে লাগিয়ে চাপমুক্ত পরিবেশে আগে ব্যাট করার পুরো ফায়দা লুটে নেন রংপুরের দুই ভিনদেশি টপ অর্ডার অ্যালেক্স হেলস আর রিলে রুশো। দুজনই একসঙ্গে অনবদ্য শতরান করে বসেন। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে ২৩৯ রানের রেকর্ড স্কোর গড়ে চিটাগং ভাইকিংসের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ৭৬ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাশরাফির দল।

একইভাবে ২৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় আবার টস জিতে ব্যাটিং না করে ফিল্ডিং বেছে নেন চিটাগাং ভাইকিংস ক্যাপ্টেন। ওই ম্যাচেও আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯৮ রানের বড় সড় পুঁজি গড়ে আবার স্বাগতিকদের চাপে ফেলে দেয় মিরাজের দল। ১৯৯ রানের কঠিন লক্ষ্যের পিছু ধাওয়া করে ৭ রানে হারতে হয় মুশফিকের দলকে।

এরপর গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথে কুয়াশাভেজা আবহাওয়া আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে টস জিতে সবাইকে অবাক করে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন মুশফিক।

টিপ টিপ বৃষ্টি আর ভেজা আবহাওয়া সাথে অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি বাতাস- সব মিলে ‘সিমিং কন্ডিশনে টস জিতে আগে ব্যাট করাকে ঝুঁকি মনে করেন বেশির ভাগ ক্যাপ্টেন; কিন্তু মুশফিকুকের আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত তাই হয়েছিল বিস্ময়ের খোরাক।

পরিণতি যা হবার তাই হয়েছিল। কুমিল্লার পেসার সাইফউদ্দিন আর ওয়াহাব রিয়াজ এবং লেগস্পিনার শহিদ আফ্রিদির সাঁড়াশি বোলিং আক্রমণে মাত্র ১১৬ রানে আটকে যায় চিটাগং ভাইকিংস। ওই ছোট্ট পুঁজি নিয়ে ৭ উইকেটের হার থাকলো সঙ্গী।

অবশেষে আজ সাকিবের শক্তিশালী ঢাকার বিপক্ষে টসের আগে দুটি প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছিলো সবার মনে। আজ টস জিতলে কি করবেন মুশফিক? আবার প্রথম দুই ম্যাচের মত প্রতিপক্ষকে আগে-ভাগে ব্যাট করার সুযোগ দিবেন, নাকি আগের দিনের মত নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নেমে পড়বেন?

সেটাই ছিল দেখার। কাকতালীয়ভাবে আজ টানা চতুর্থ দিনও টস জিতলেন চিটাগং ক্যাপ্টেন। ঢাকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানালে আবার রান পাহাড়ে চাপা পড়ার সংশয় থাকবে। আর আগেরদিনের মত আবাহওয়াও ভেজা নয়। আকাশ মেঘমুক্ত। গুড়ি গুড়ি বা টিপ টিপ বৃষ্টি কিছুই নেই। একদম নীল আকাশ। আগে ব্যাটিংয়ের সর্বোত্তম পরিবেশ।

এমন পরিবেশে যা করার আজ ঠিক তাই করলেন চিটাগাং ভাইকিংস অধিনায়ক। আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এদিন ঠিক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ব্যাটিং করলেন আগে। সেখানেই শেষ নয়। ২৪ বলে ৪৩ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে ১৭৪ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ায় বড় সড় অবদান রাখেন তিনি। আর তাতেই টানা হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে কাঙ্খিত জয়ের মুখ দর্শন করলেন মুশফিক।

এই এক জয়ে একদম শেষ চারে চিটাগং ভাইকিংস। আর তাই ম্যাচ শেষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ‘ভিক্টরি ল্যাপ ’ দিলেন চিটাগং ভাইকিংস ক্রিকেটার্সরা। পুরো মাঠ নিজেদের পতাকা নিয়ে প্রদর্শন করলেন ডেলপোর্ট, ইয়াসির আলী, মোহাম্মদ শাহজাদ, সিকান্দার রাজা, মোসাদ্দেক হোসেন, নাঈম হাসান ও খালেদরা। স্বাগতিকদেরকে যে শেষ পর্যন্ত একটি মাত্র জয় উপহার দিতে পারলেন তারা!

চট্টগ্রামবাসীও তাদের করতালি আর উদ্দীপক স্লোগানে প্রিয় দলকে অভিবাদন জানালো। অবশ্য এদিন আর স্টেডিয়ামের গ্যালারি চিটাগং সমর্থকে ঠাসা ছিল না। আগের তিন ম্যাচ হারলে কি আর মাঠ স্বাগতিক সমর্থকে ঠাসা থাকে? তারপরও চট্টলাবাসীর মনে আছে একটি সান্তনা।

সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুলের ভাষায়, ‘এ জয় মধুর।’ কেন মধুর? তার ব্যাখ্যাও আছে চট্টলার এ সিনিয়র সাংবাদিকের কন্ঠে, ‘যে কোন কারণেই হোক, এবার সিলেট ও মিরপুরে দর্শক হয়নি তেমন। আর চট্টগ্রামে প্রথম থেকেই মাঠ ভর্তি ছিল দর্শক। কারণ আমাদের দল পয়েন্ট তালিকায় ছিল সবার ওপরে। তারপরও তিন ম্যাচ হেরে যাওয়ায় হতাশা নেমে এসেছিল ভক্তদের মনে। অবশেষে আজ শেষ দিন জয়ের দেখা মিললো। এ জয় মধুর। শেষ চার নিশ্চিতের। তাই অন্যরক ভাললাগায় আচ্ছন্ন মন।’

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

আরও পড়ুন