ছয় বছর পর প্লে-অফে মুশফিক
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরুর পর প্রথম দুই আসরেই গ্রুপ পর্বে রীতিমতো উড়েছে মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বাধীন দুরন্ত রাজশাহী এবং সিলেট রয়্যালস। কিন্তু এরপর ছন্দপতন। পরের তিন আসরে লেজেগোবরে অবস্থা হয় মুশফিকের নেতৃত্বে খেলতে নামা সিলেট সিক্সার্স, বরিশাল বুলস এবং রাজশাহী কিংসের।
অবশেষে তিন আসর এবং ছয় বছর পরে আবারো গ্রুপ পর্বে ঘুরে দাঁড়ালেন মুশফিক। নিজ দল চিটাগং ভাইকিংসকে নিয়ে চলে গেলেন টুর্নামেন্টের প্লে-অফে। আজ (বুধবার) ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ১১ রানের জয়ে নিশ্চিত হয়েছে চিটাগংয়ের প্লে-অফের টিকিট। সেজন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১ ম্যাচ পর্যন্ত।
তবে যেভাবে আসর শুরু করেছিল চিটাগং, তাতে করে সবার আগে তাদেরই প্লে-অফ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও- মাঝপথে ছন্দ হারিয়ে শেষ চারের টিকিট পেতে বিলম্ব হলো মুশফিকের দলের। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচ হারের পর টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে রীতিমতো উড়ছিলো চিটাগং। ঘরের মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলতে যাওয়ার আগে তাদের সঙ্গে ছিলো ৭ ম্যাচে ৬ জয়ের সুখস্মৃতি।
কিন্তু নিজেদের মাঠে প্রচুর দর্শক সমর্থন থাকার পরে পরপর তিন ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল চিটাগং। ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচটিতেই তারা ফিরেছে জয়ের ধারায়। ঢাকাকে ১১ রানে হারিয়ে পেয়েছে প্লে-অফে খেলার নিশ্চয়তা। একই সাথে ছয় বছর পর নিশ্চিত হয়েছে প্লে-অফ তথা সেরা চারে মুশফিকুর রহীমের উপস্থিতি।
বিপিএলের প্রথম আসরে দুরন্ত রাজশাহীর নেতৃত্বে ছিলেন মুশফিকুর রহীম। ব্যাটসম্যানদের সমান সম্মিলিত অবদানে গ্রুপ পর্বের সেরা দল ছিলো রাজশাহীই। ১০ ম্যাচ ৭টিতে জিতে শীর্ষে থেকেই সেমিফাইনালে গিয়েছিল তারা। তবে সেমিফাইনাল ম্যাচে বরিশালের কাছে হারায় ফাইনাল খেলা হয়নি তাদের। সে আসরে ব্যাট হাতে ৩৯ গড়ে ২৩৪ রান করেছিলেন মুশফিক।
পরের আসরে দল বদলে সিলেট রয়্যালসে নাম লেখান মুশফিক। তবে দল বদলালেও গ্রুপ পর্বে মুশফিকের দলের উড়ন্ত যাত্রার হেরফের ঘটেনি একটুকুও। গ্রুপ পর্বের ১২ ম্যাচের মধ্যে ৯টিতেই জিতে আবারো গ্রুপে সর্বোচ্চ ম্যাচ জেতা দল হয় মুশফিকের সিলেট। কিন্তু প্লে-অফের দুই ম্যাচ হারায় আবারও ফাইনাল খেলতে পারেননি মুশফিক। তবে ব্যাট হাতে ৪০ গড়ে ৪৪০ রান করে সে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন মুশফিকই।
২০১৩ সালের আসরে ফিক্সিং কেলেঙ্কারির কারণে মাঠে গড়ায়নি ২০১৪ সালের বিপিএল আসর। ২০১৫ সালের ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলে মুশফিকের দলের নাম হয় সিলেট সুপারস্টার্স। একই সঙ্গে বদলে মুশফিকের ভাগ্যও। গ্রুপপর্বের ১০ ম্যাচে মাত্র ৩টিতে জিততে সক্ষম হয় তার দল। ব্যাট হাতে সফল হতে পারেননি মুশফিকও। সে আসরে ২৬.৫৬ গড়ে মাত্র ১৫৭ রান করতে পারেন তিনি।
২০১৬ সালের আসরে আবারও দলবদল ঘটে মুশফিকের। এবার নাম লেখান আগের আসরের রানারআপ দল বরিশাল বুলসে। কিন্তু মুশফিকের নেতৃত্বে আগের আসরের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় বরিশাল। সেবার গ্রুপপর্বে ১২ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৪টিতে জিতে সবার নিচে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে মুশফিকের বরিশাল। ব্যাট হাতে ৩৭.৮৮ গড়ে ৩৪১ রান করেছিলেন বরিশাল অধিনায়ক মুশফিক।
২০১৭ সালের আসরে দল বদলে রাজশাহী কিংসে যান মুশফিক। কিন্তু বদলায়নি তার ভাগ্য। পুরো টুর্নামেন্টে দলকে নেতৃত্ব না দিলেও তার অধীনে কয়েকটি ম্যাচ খেলে রাজশাহী। সবমিলিয়ে ১২ ম্যাচে মাত্র ৪টিতে জেতে তারা। বাদ পড়ে যায় গ্রুপপর্ব থেকেই। ব্যাট হাতেও চূড়ান্ত ব্যর্থ হন মুশফিক। মাত্র ১৮.৫০ গড়ে ১৮৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
জাতীয় নির্বাচন এবং পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে হয়নি ২০১৮ সালের বিপিএল। সেটি হচ্ছে ২০১৯ সালে। আরও একবার দল বদলে চিটাগং ভাইকিংসে এসেছেন মুশফিক। তার নেতৃত্বে এবার রীতিমতো উড়ছে চিটাগং। এখনো পর্যন্ত খেলা ১১ ম্যাচে জিতেছে ৭টিতে, নিশ্চিত হয়েছে প্লে-অফের টিকিটও।
ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন মুশফিক। এখনো পর্যন্ত ১১ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে ৩৭ গড়ে করেছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭০ রান। ব্যাট হাতে ও মাঠের অধিনায়কত্বে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ছয় বছর প্লে-অফের টিকিট ঠিকই পেয়েছেন মুশফিক, এখন দেখার বিষয় প্লে-অফ থেকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার সুযোগ হয় কি-না তার।
এসএএস/এমএস