তিন ম্যাচ হারের পর ঢাকাকে হারিয়ে প্লে-অফে চিটাগং
ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলই জয়হীন ছিলো টানা তিন ম্যাচ। দুই দলই উন্মুখ ছিলো জয়ের ধারায় ফিরতে। তবে জয়ের তাগিদটা একটু বেশিই ছিল স্বাগতিক দল চিটাগং ভাইকিংসের। কেননা নিজেদের মাঠে খেলতে এসে যে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি তারা।
আজ ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটিতে সুযোগ আসে ঘরের মাঠে অন্তত একটি জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার। কিন্তু স্বাগতিকদের এ সুযোগটি কেড়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন আন্দ্রে রাসেল। তবে ব্যাটে-বলে রাসেল ম্যাজিকের পরেও শেষ হাসিটা হেসেছে মুশফিকুর রহীমের চিটাগংই।
ঢাকা ডায়নামাইটসকে টানা চতুর্থ হারের স্বাদ দিয়ে জয়ে ফিরল টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরু করা চিটাগং। তাদের করা ১৭৪ রানের জবাবে ঢাকার ইনিংস থেমেছে ১৬৩ রানে। ১১ রানের জয়ে রংপুর রাইডার্স এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পর তৃতীয় দল হিসেবে প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত হলো চিটাগংয়ের। তিন দলের ঝুলিতেই রয়েছে ১১ ম্যাচে সমান ৭টি করে জয়।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি ঢাকার। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার সুনিল নারিন। তৃতীয় এবং চতুর্থ ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রনি তালুকদার এবং মিজানুর রহমানও। মাত্র ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ঢাকা।
প্রমোশন দিয়ে আন্দ্রে রাসেল ও কাইরন পোলার্ডের আগে নামানো হয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে। সুযোগের দারুণ ব্যবহার করেন তিনি। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মাত্র ৩৭ বলে ৫০ রানের জুটি। ২ চার ও ২ ছক্কার মারে ২৩ বলে ৩৩ রান করে দলীয় ৭৩ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন সোহান।
ঠিক পরের বলেই রানআউটে কাঁটা পড়েন পোলার্ডও। অধিনায়ক সাকিব একপ্রান্তে থাকলেও ৭৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে আবারো চাপে ঢাকা। তাদের উদ্ধার করার দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নেন বল হাতে হ্যাটট্রিক করা ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে চিটাগংকে একপ্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকেই দিয়েছিলেন রাসেল এবং সাকিব। দুজন মিলে মাত্র ৪১ বলে ৬৬ রানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের বন্দরে। কিন্তু বাঁধ সাধেন লঙ্কান অলরাউন্ডার দাশুন শানাকা। ১৭তম ওভারে তাকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যামেরন ডেলপোর্টের হাতে ধরা পড়েন রাসেল।
এর আগে ১৪তম ওভারে ডেলপোর্টের ওভারেই সোজা বোল্ড হয়েও নো বলের কল্যাণে বেঁচে গিয়েছিলেন রাসেল। নো বল করে জীবন দেয়ার প্রায়শ্চিত্ত্বটা তার ক্যাচ ধরেই করেন ডেলপোর্ট। আউট হওয়ার আগে ৪ চার ও ২ ছক্কার মারে ২৩ বলে ৩৯ রান করেন রাসেল।
তখনো ঢাকার জয়ের জন্য বাকি ছিলো ২১ বলে ৩৬ রান। পুরো দায়িত্ব তখন অধিনায়ক সাকিবের কাঁধে। পুরো টুর্নামেন্টে শেষদিকে ঝড়ো ব্যাটিং করা শুভাগত হোম ৫ বলে ৫ রান করে আউট হয়ে গেলে সাকিবের চাপ বেড়ে যায় আরো বেশি। শেষপর্যন্ত এ চাপ আর জয় করা হয়নি তার।
শেষ দুই ওভারে যখন প্রয়োজন ২৬ রান, তখন শানাকার করা ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে চলতি বিপিএলে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি পূরণ করেন সাকিব। লক্ষ্যমাত্রা নেমে আসে ১০ বলে ২১ রানে। উজ্জীবিত সাকিবের আশা দেখতে শুরু করে ঢাকা।
কিন্তু পরের বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নাঈম হাসানের হাতে ক্যাচে পরিণত হন সাকিব, একইসঙ্গে ম্যাচ জয়ের আশাও প্রায় শেষ হয়ে যায় ঢাকার। আবু জায়েদ রাহীর করা শেষ ওভার থেকে প্রয়োজনীয় ১৮ রানের বিপরীতে কেবল ৬ রান নিতে পারে ঢাকা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৩ রানে থামে তাদের ইনিংস। ১১ রানের জয়ে প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত হয় চিটাগংয়ের।
এর আগে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম আর ক্যামেরুন ডেলপোর্টের ব্যাটে চড়ে পুঁজিটাও কম হয়নি চিটাগংয়ের, ৫ উইকেটে ১৭৪ রান করে তারা।
ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ শাহজাদ আর ক্যামেরুন ডেলপোর্টের ৩২ বলের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪২ রান। ১৫ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ২১ রান করে শাহজাদ আউট হন সুনিল নারিনের বলে।
ধারাবাহিক ইয়াসির আলি এবার বেশি দূর এগোতে পারেননি। ২০ বলে ১৯ রান করা এই ব্যাটসম্যানকেও ফেরান নারিন। এরপরই দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক মুশফিক।
ডেলপোর্টকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে তিনি গড়েন ৭৯ রানের জুটি। ২০তম ওভারের আগ পর্যন্ত রাজ করে এই জুটিটিই। এরপরই ভয়ংকর চেহারায় হাজির হন আন্দ্রে রাসেল।
২০তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিককে সাজঘরের পথ দেখান ঢাকার ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডার। ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ৪৩ করে শুভাগত হোমের ক্যাচ হন মুশফিক। পরের বলে আউট আরেক সেট ব্যাটসম্যান ডেলপোর্ট। তিনিও শুভাগতর ক্যাচ। ৫৭ বলে ৫ চার আর ৪ ছক্কায় ৭১ রান করেন ডেলপোর্ট।
যেহেতু ইনিংসের শেষ ওভার, হ্যাটট্রিক বলটি দেখেশুনে খেলার সুযোগ ছিল না দাসুন শানাকার। স্কুপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়েন তিনি। তাতেই এবারের বিপিএলের তৃতীয় হ্যাটট্রিকটি নিজের নামে লিখে নেন আন্দ্রে রাসেল।
এসএএস/এমকেএইচ