তাসকিনকে বদলে দিয়েছেন ওয়াকার
এক বছরেরও বেশি সময়, হিসেব কষলে প্রায় ১৫ মাস- যেন ক্রিকেট থেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের গতি তারকা তাসকিন আহমেদ। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ খেলে আসার পর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাসকিনকে। না জাতীয় দলে, না ঘরোয়া কোনো ক্রিকেটে। খবর বেরিয়েছিল, ইনজুরি আর অফ ফর্মের কবলে পড়েছেন তিনি।
অবশেষে সেই তাসকিন ফিরে এসেছেন। শুধু ফিরে আসাই নয়, সেই গতি আর তেজ নিয়েই যেন মাত করে যাচ্ছেন এবারের বিপিএলে। তাসকিনের দল সিলেট সিক্সার্সের অবস্থা আর যাই হোক না কেন, গতির এক্সপ্রেস ছুটিয়েই চলছেন তাসকিন আহমেদ। এখনও পর্যন্ত এবারের বিপিএলে ১০ ম্যাচ খেলে ২০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ শিকারীদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন সদ্যই নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য দলে ডাক পাওয়া এই পেসার।
কোন সে জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেলেন তাসকিন? অনেকেরই প্রশ্ন। ধারণাও ছিল, জাদুর কাঠিটা আর কেউ নন, সিলেট সিক্সার্সের কোচ ওয়াকার ইউনুস। নিজের সময়ে বিশ্ব কাঁপানো এই পাকিস্তানি পেসারকে মনে করা হয় ক্রিকেটের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা পেসার।
সেই ওয়াকার ইউনুসের হাতেই এবারের বিপিএলে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। খাঁটি জহুরির মতই সোনা চিনে নিয়েছেন ওয়াকার এবং তাকে ঘষে-মেজে তৈরি করে দিয়েছেন বিপিএলের জন্য। শুধুই কি বিপিএল! বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্যও নিজেকে যথাযতভাবে তৈরি করে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রাজশাহী কিংসের মোকাবেলা করবে তাসকিনের দল সিলেট সিক্সার্স। তার আগে আজ এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুশীলনের ফাঁকে মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন গুরু-শিষ্য, ওয়াকার ইউনুস এবং তাসকিন আহমেদ- দু’জনই।
সেখানে শুরুতে ওয়কার ইউনুস জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি তাসকিনকে নিয়ে আলাদা কিছুই করিনি। যা করার সে নিজেই করেছে। সে খুব পরিশ্রমী, যে কারণে ভালো করতে পেরেছে।’
ওয়াকার হয়তো নিজের কৃতিত্বটা এভাবেই ঢাকতে চাইলেন। কিন্তু কৃতজ্ঞ ছাত্রের মত সব কৃতিত্বই গুরুর উপর দিয়ে দিলেন তাসকিন আহমেদ। জানিয়ে দিলেন, তার এই পরিবর্তন, এভাবে বদলে যাওয়ার মূল রহস্যটাই হচ্ছে কোচ ওয়াকার ইউনুস। তার বুদ্ধি, পরামর্শ মেনে এবং দেখানো পথে হেঁটেই এমন সাফল্যের দেখা পেয়েছেন বলে জানালেন তাসকিন।
কথা বলার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসার সঙ্গে মা-বাবার দোয়ার কথা স্মরণ করলেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘আসলে আল্লাহর রহমতে ভালো (পারফরম্যান্স) হচ্ছে ইনশাল্লাহ। আমি আসলে মূল যে জিনিসটা চেষ্টা করেছি, সেটা হচ্ছে নিজের বেসিক ঠিক রেখে লাইন লেন্থ ও ভেরিয়েশন ঠিক রাখা। আর ২০১৮ সালে অনেক কঠিন পরিশ্রম করেছি। আল্লাহর রহমত তো ছিল, বাবা-মার দোয়া এবং সমর্থনও ছিল।’
আল্লাহর রহমত, বাবা-মার দোয়ার সঙ্গে গুরুর শিক্ষাও যে মূল ভুমিকা রেখেছে, সেটা জানালেন পরক্ষণেই। তাসকিন বলেন, ‘আমাদের সিলেটের যে প্রধান কোচ ওয়াকার ইউনুস, উনি অনেক সাহায্য করেছেন। মূল জিনিসটা আসলে ছন্দ আর আত্মবিশ্বাস। তিনি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, আমি ভালো সেপে আছি। প্রথম দিন থেকে যখন নেটে বল দেখছিল, তখন থেকেই এভাবে বলে যাচ্ছে। শুধু বলছিল, নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে বল করতে। কিছু ছোট ছোট মিসটেক ছিল। সেগুলো উনি ধরিয়ে দিয়েছেন। সেই মিসটেকগুলো নিয়ে কাজ করেছি। সবমিলিয়ে এখন রিদমটা ভালো আছে আল্লাহর রহমতে। লাইন, লেন্থ, ধারাবাহিকতা- এগুলো নিয়ে আরেকটু মনযোগি ছিলাম মাঠের মধ্যে।’
আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের বিপিএলে নিজেকে কিছুটা বদলে ফেলার চেষ্টা করেছেন তাসকিন। সেটাই তিনি জানালেন। বললেন, ‘কিছুটা অভিজ্ঞতা তো বটেই। আগে যেমন আমি বাউন্ডারি হলে আরও জোরে বল করার চেষ্টা করতাম। জোরে বল করা তো আমার বড় শক্তি। অবশ্যই আমার ভালো পেসে এবং ভালো লেন্থে বল করতেই হবে। সে সঙ্গে আমি ভেরিয়েশন আনারও চেষ্টা করছি।’
ওয়াকার ইউনুসকে যখন কাছে পেয়েছেন, তখন তার কাছ থেকে যত পারা যায়, ততই শেখার চেষ্টা করছেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়তই আমি সুযোগ পেলে ওয়াকার স্যারের সঙ্গে কথা বলছি। উনি আসলে তেমন মেসিভ কোন চেঞ্জের কথা বলেননি। শুধু নিজেকে সিম্পল রাখতে বলেছেন। পেসটা যাতে কোনভাবেই না কমে এটা বলে দিয়েছেন। যতটুকু পারছি উনার থেকে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরেছেন। সামনে লক্ষ্য কি? জানতে চাইলে তাসকিন বলেন, ‘আমার যদি সুযোগ হয় একাদশে ইনশাল্লাহ ভালো কিছু হবে। সুযোগ হলে ভালো করে বিশ্বকাপেও খেলা এবং ভালো করার চেষ্টা করবো।’
টি-টোয়েন্টিকে বোলারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের বলে মনে করেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘টি-টয়েন্টি ক্রিকেট একটা চ্যালেঞ্জ বোলারদের জন্য। তবে দুই একটা বাউন্ডারি হলেও আমি আমার পরিকল্পনায় অটল ছিলাম। ভেরিয়েশন নিয়ে বলতে গেলে বলবো, যখন স্লোয়ার মারতে মন চেয়েছে, তখন মাঠের অবস্থা বুঝে সেই ইচ্ছাটাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি।’
আইএইচএস/এমকেএইচ