বিসিবি সভাপতিও জানেন না- সাব্বিরের শাস্তি কমল কী করে!
অবশেষে সাব্বির রহমান ইস্যুতে মুখ খুললেন নাজমুল হাসান পাপন। নাহ, রাজধানী ঢাকায় নয়। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এসে সাব্বিরের বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন বিসিবি বিগবস। রংপুর রাইডার্স আর ঢাকা ডায়নামাইটসের হাইভোল্টেজ ম্যাচ দেখতে আজ সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকা থেকে বিমানে উড়ে এসেছেন তিনি।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট রুমে বসে খেলা দেখতে দেখতে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে সাব্বিরকে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে দলে নেয়া নিয়ে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি।
বিসিবিপ্রধান একটি বড় তথ্য দিয়েছেন। তাহলো, সাব্বিরের শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে আনার বিষয়টি নাকি ঠিক তার জানা ছিল না। মানে তিনি সেভাবে জানতেন না। কে বা কারা কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় সাব্বিরের শাস্তির মেয়াদ এক মাস কমিয়ে তাকে নিউজিল্যান্ড সফরে নেয়া হয়েছে, সেটি সম্পর্কে নাকি কিছুই জানা নেই পাপনের।
বিসিবি বস বলেন, ‘যখন জাতীয় দলের খেলোয়াড় তালিকা আমার কাছে সই করার জন্য আসে, সবার লিস্ট সই করার পর আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম সাব্বিরের শাস্তির ব্যাপারটা। শাস্তি শেষ হচ্ছে কবে? আমাকে বলেছে শাস্তি শেষ। হয়তো ভুল করে বলেছে। একটা হতে পারে মেয়াদটা কমিয়ে দেয়াতে শাস্তি কমে গেছে। আমি তখন জিজ্ঞাসা করি নাই।’
তবে তিনি পরিষ্কার করেননি, কার সুপারিশ বা অনুরোধে সাব্বিরের শাস্তি কমিয়ে আনা হয়েছে। বোর্ড সভাপতি যিনি দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অভিভাবক এবং ছোটবড় ও নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো যার অঙ্গুলি হেলন ছাড়া হয় না, তিনি যখন বলেন-আমি জিজ্ঞেস করেছি তার শাস্তি কবে শেষ হচ্ছে। তখন নতুন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় অবশ্যই।
আগের মতো দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করি না
অনেক কথার ভিড়ে পাপন এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, আগের মতো দল গঠন ও খেলোয়াড় নির্বাচনে সেভাবে সম্পৃক্ত নন তিনি। আগে দল গঠনে হস্তক্ষেপ করলেও এখন আর তিনি কিছুই করেন না-এমনটা জানিয়ে বিসিবিপ্রধান বলেন, ‘আসলে আগে আমি প্রতিটা জিনিসে যুক্ত ছিলাম। বিশেষ করে টিমের ব্যাপারে, স্কোয়াড নিয়ে। কিন্তু গত তিন মাস ধরে আমি কিন্তু আমি একদম অফ। একদমই ইন্টারফেয়ার করছি না। এখন ওরা (নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট) করছে।’
তার ধারণা, সাব্বিরের ব্যাপারে হয়তো অধিনায়ক মাশরাফি আর কোচ স্টিভ রোডস উৎসাহী। তারা দুজন হয়তো বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই সাব্বিরকে দলে চেয়েছে। আর সে কারণেই নিউজিল্যান্ড সফরে নেয়া।
পাপনের অনুভব, বিশ্বকাপের আগে সাব্বিরকে দলের সাথে রেখে শারীরিক, মানসিক ও ক্রিকেটীয় দিক থেকে প্রস্তুত করার জন্যই হয়ত তার শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে দলে নেয়া হয়েছে।
বিসিবি সভাপতির ভাষায়, ‘একটা হতে পারে, ক্যাপ্টেন কোচ ওরা হয়তো চেয়েছে। আমার মনে হয় এ জন্য রেখেছে। তারা অবশ্য সাব্বিরকে আগের থেকেই চাইছিল। চাইছিল বিশ্বকাপের জন্য। আসলে ওরা বলছিল, যদি পারফর্ম করে তাহলে বিশ্বকাপে ওর একটা সুযোগ আছে। বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজটা একটা হতে পারে। ওকে খেলাতে নাও পারে। টিমের সাথে নিয়ে গেলে হয়তো ওর সেন্টিমেন্ট ও মেন্টালিটি সব ঠিক করার জন্য। কন্ডিশনিংয়ের জন্য হতে পারে। তা না হলে ১৫/২০ দিন আগে ওকে নেয়ার কারণই দেখি না। কারণ ১৫/২০ দিন পর এটা শেষই হয়ে যেত। ডেফিনেটলি পারফরম্যান্সও একটা বিষয়। লাস্ট একটা ম্যাচে সাব্বির ৮৫ করেছিল। সেটা দেখে আরও উৎসাহিত হয়েছে। মনে করেছে ও পারফরম্যান্সে ফেরত আসছে। এটা হতে পারে।’
এটাই সাব্বিরের শেষ সুযোগ
এদিকে নাজমুল হাসান পাপন সাব্বিরকে দলে নেয়ার বিরোধিতা না করলেও দুটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। প্রথমত তিনি মনে করেন, সাাব্বিরকে আরও বুঝে শুনে তারপর দলে নিতে ভাল হতো। আর এটাই সাব্বিরের শেষ সুযোগ। এরপর শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ ঘটালে আর দলে ফেরা হবে না।
বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আসলে হয় কি দুই একটা ফ্যাক্ট আছে। ওকে যখন বাদ দেয়া হয়, তারপর অনেকবার কিন্তু রিকুয়েস্ট এসেছে ওকে দলে নেয়ার জন্য। আমরা সাধারণত এমনটা নিতে চাই না বা নেই না। কিন্তু মাঝে মধ্যে হয় কী, এর আগেও দেখেছেন অনেকেই মনে করে ও আসলে চেঞ্জ হয়েছে। তবে এটা অবশ্যই ওর জন্য লাস্ট চান্স। ১৫/২০ দিন তো তো বড় কথা না, এরপরও যদি আবারও করে, তাহলে জীবনেও আর খেলতে পারবে না।’
পাপনের শেষ কথা, ‘আমি মনে করি ও আরও বেশি সময় নিয়ে আরও বুঝেশুনে আসলে ওর জন্য ভালো হতো। ওর জন্য রিস্ক অনেক বেশি। একটা ছোট ভুলে ওর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।’
এআরবি/এমএমআর/পিআর