রংপুরের বিধ্বংসী টপ অর্ডার, নাকি ঢাকার বোলিং?
ইতিহাস-পরিসংখ্যান আগেই জানান দিচ্ছিল, চট্টগ্রামের সাগরিকার পিচ ব্যাটসম্যানদের ‘বন্ধু’। এখানে বল ব্যাটে আসে। বাউন্সটাও থাকে সমান। ফ্রি স্ট্রোক বা বিগ হিট নেয়া যায় অনায়াসে। যারা হাত খুলে খেলতে অভ্যস্ত ও পছন্দ করেন, তাদের সাফল্যের স্বর্গ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মাঝের ওই ২২ গজ।
সত্যিই তাই। গত দু’দিনে যে চার ম্যাচ হয়েছে, তার প্রতি খেলায় রান উঠেছে। চার ও ছক্কার ফুলঝুরি ছুটছে নিয়মিত। যারা স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করেন, ‘বিগ হিট’ নেয়ার দক্ষতা বেশি- তাদের জন্য সাগরিকার পিচ পয়োমন্তঃ।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক উইকেট তাই রংপুর রাইডার্সের জন্য বিরাট প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে। কারণ রংপুরের চার বিদেশি ফ্রন্টলাইন উইলোবাজ ক্রিস গেইল, অ্যালেক্স হেলস, রিলে রুশো আর এবি ডি ভিলিয়ার্স তো বিগ হিট নেয়ায় ‘সিদ্ধহস্ত’।
চিটাগং ভাইকিংসের সাথে ম্যাচেই প্রমাণ হয়েছে ওই চার বিপজ্জনক ও বিধ্বংসী উইলোবাজের যে কোন দু’জন দাঁড়িয়ে গেলেই প্রতিপক্ষ বোলিং দুমড়ে মুচড়ে যেতে পারে। অ্যালেক্স হেলস আর রিলে রুশোই স্বাগতিক চিটাগং ভাইকিংসের জয়রথ থামিয়ে রীতিমত বিধ্বস্ত করে ছেড়েছেন।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচে বল চমৎকার গতি ও সমান বাউন্সে ব্যাটে আসে বলেই হেলস ও রুশোরা ইচ্ছেমত যাকে তাকে যেখান দিয়ে খুশি মুড়ি-মুড়কির মত তুলে মেরে চার ছক্কার প্রদর্শনী ঘটিয়েছেন।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও চট্টগ্রামকে তার দলের জন্য বেটার ভেন্যু ভাবছেন। মাশরাফি মনে করছেন ঢাকা ও সিলেটের তুলনায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং বান্ধব পরিবেশটাই তার দলের জন্য সবচেয়ে পয়োমন্তঃ। কারণ তার চার বিদেশী টপঅর্ডার গেইল, হেলস, রুশো ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাত খুলে খেলতে এটাই সর্বোত্তম কন্ডিশন।
প্রথম ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি নিজে মুখ ফুটে অমন কথা বলেছেনও। অন্যদিকে জহুর আহমেদ চৌধুরীর শতভাগ ব্যাটিং সহায় উইকেট ঢাকা ডাইনামাইটসেরও সাফল্যের স্বর্গ হতে পারে। কারণ ঢাকাতেও আছেন চার-চারজন বিগ হিটার।
উইকেট ভাল হলে সুনিল নারিনও অবলীলায় চার ছক্কায় মাঠ মাতাতে পারেন। প্রতিপক্ষ বোলিং এলোমেলো করে দিতে পারেন। ভারত তথা টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এক নম্বর আসর আইপিএলেও বেশ কবার তা করে দেখিয়েছেন নারিন।
ঢাকার সবচেয়ে বড় শক্তি হলেন সাকিব আর আন্দ্রে রাসেল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেরা অলরাউন্ডারদের অন্যতম সেরা এই দু’জন। তাদের সামর্থ্য ও কার্যকরিতা প্রমাণিত। বহুবার বড় ম্যাচ জিতিয়ে দেখিয়েছেন ওই দুই সব্যসাচি ক্রিকেটার। তাদের সামর্থ্য ও কার্যকরিতার কথা নতুন করে বলার কিছু নাই। তারা যেমন বল হাতে দক্ষ আবার ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর্যাপ্ত সামর্থ্যও আছে দু’জনার। কাইরন পোলার্ডও এমন পিচে হাত খুলে খেলতে ওস্তাদ।
তারপরও গেইল, হেলস, রুশো ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের গড়া রংপুর টপ অর্ডার ঢাকার চেয়ে শক্তিশালী। যে কোন দলের মাথা ব্যাথার কারণ। পার্থক্য গড়ে দেবার জন্যও যথেষ্ঠ।
ওই চার বিদেশি ফ্রন্টলাইনারই আসলে রংপুরের মুল শক্তি। ওই চারজনের যে কোন দু’জন দাঁড়িয়ে গেলে আসলে রংপুরের সাথে পেরে ওঠা দায়। তারাই ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। যেমন দিয়েছেন চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে।
ঢাকার টপ অর্ডার ততটা খুনে ও বিধ্বংসী নয়। তবে ঢাকার বোলিং ডিপার্টমেন্ট তুলনামূলক সুগঠিত। ধারলো। বৈচিত্রও বেশি। সুনিল নারিন আর সাকিবের ৪+৪ = ৮ ওভারের বোলিং অনেক বড় শক্তি ও সম্পদ ঢাকার। সাথে আন্দ্রে রাসেলের পেস বোলিংটাও ঢাকার বড় অস্ত্র।
এ ছাড়া ঢাকার মিডল অর্ডারে হাল ধরার মত পারফরমার আছেন। সাাকিব-আন্দ্রে রাসেল আর কাইরন পোলার্ড আছেন ওই জায়গায়। আর রংপুরের দূর্বলতা সেখানে। কোন কারণে সাকিব-নারিন ও আন্দ্রে রাসেলরা রংপুরের ফ্রন্টলাইন ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে পারলে মাশরাফি বাহিনীর আর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।
কারণ টপ অর্ডারে চার বিদেশির পর সে অর্থে মোহাম্মদ মিঠুন ছাড়া আর তেমন কোন ব্যাটসম্যান নেই রংপুরের। সেই জায়গায় ঢাকা এগিয়ে। ঢাকার ব্যাটিং লাইন আপ অনেক বেশি লম্বা। গভীরতাও বেশি।
ঢাকার টপ অর্ডার সাজানো হযরতউল্লাহ জাজাই, সুনিল নারিন আর রনি তালুকদারদের দিয়ে। এরপর সাকিব, আন্দ্রে রাসেল ও কাইরন পোলার্ডের সাথে শুভাগত হোম এবং নুরুল হাসান সোহানের মত প্রতিষ্ঠিত ও পরিক্ষীত পারফরমার আছেন। সোহান সব সময়ই হাত খুলে খেলতে পারদর্শি। শুভাগত হোম বারবার বড় মঞ্চে নিজের মেধা মেলে ধরতে ব্যর্থ হলেও এবার সে না পারার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে একাধিক ম্যাচে ঝড়ো ব্যাটিং করে দেখিয়েছেন।
তাই বলেই দেয়া যায়, শুরুতে ব্যাকফুটে চলে গেলেও ঢাকার ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য বেশি। এ কারণে ভাবা হচ্ছে, আসল লড়াই হবে রংপুরের চার বিদেশি টপ অর্ডার গেইল, হেলস, রুশো ও ডি ভিলিয়ার্সের সাথে ঢাকার সাকিব, নারিন ও আন্দ্রে রাসেলের।
আগের ম্যাচে জোড়া শতরান করা অ্যালেক্স হেলস আর রিলে রুশোতো আছেনই, তাদের সাথে গেইল আর ডি ভিলিয়ার্সের কেউ একজন ‘ঘুম থেকে জেগে’ উঠলে ঢাকার পেরে ওঠা খুব কঠিন হবে। আর কোনোভাবে ওই চারজনের তিনজনকে কম সময় ও সংগ্রহে ফিরিয়ে দিতে পারলে ঢাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
অন্যদিকে উইকেট যতই ব্যাটিং বান্ধব হোক না কেন, শিশির পড়ছে প্রচুর। সন্ধ্যার ঘন্টা খানেক না যেতেই মাঠ শিশিরে ভিজে একাকার। সেখানে স্পিনারদের বল গ্রিপ করাও কঠিন। খেলা যেহেতু সন্ধ্যায়, তাই সুনিল নারিন, সাকিব ও শুভাগত হোমের স্পিন নির্ভর ঢাকার বোলিং কার্যকর হবার সম্ভাবনাও কম। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত গেইল, হেলস, রুশো, ডি ভিলিয়ার্সের সাথে সাকিব, নারিন, আন্দ্রে রাসেল আর শুভাগত হোমের লড়াইয়ে কারা জেতেন?
এআরবি/আইএইচএস/পিআর