চ্যাম্পিয়ন রংপুরের ‘চিটাগং পরীক্ষা’ আজ
টুর্নামেন্ট শুরুর মাসকয়েক আগেও নিশ্চিত ছিলো না এবারের বিপিএলে অংশ নেবে কি-না তারা। অনেক গড়িমসির পর নাম লেখালেও দলগঠনের পর সেরাদের আলোচনায় ছিলো না তাদের নাম। অথচ আসরের প্রায় অর্ধেক শেষে মাঠের খেলায় সবার ওপরেই অবস্থান মুশফিকুর রহীমের চিটাগং ভাইকিংসের।
এবারের বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নেমেছিল চিটাগং ভাইকিংস। প্রতিপক্ষ ছিলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স। তুলনামূলক দুর্বল চিটাগংকে উড়িয়ে দেবে শক্তিশালী রংপুর, করবে উড়ন্ত সূচনা- এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো ক্রিকেট অনুরাগিদের।
কিন্তু কিসের কি! রবি ফ্রাইলিংক নামক এক ‘অখ্যাত’ পেস বোলিং অলরাউন্ডারের মিডিয়াম পেসেই অসহায় আত্মসমর্পন চ্যাম্পিয়ন রংপুরের। প্রথমে বল হাতে মাত্র ১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে রংপুরকে ৯৮ রানেই অলআউট করে দেন ফ্রাইলিংক। পরে রান তাড়া করতে নেমে চিটাগং হোঁচট খেলে ব্যাট হাতেও ফ্রাইলিংক আবির্ভূত হন ফিনিশারের ভূমিকায়।
সেই যে প্রথম ম্যাচ থেকে শুরু, নিজের ব্যাটিং-বোলিং দিয়ে সেই ‘অখ্যাত’ ফ্রাইলিংক এরই মধ্যে পরিণত হয়েছেন এবারের আসরের অন্যতম সেরা তারকায়। তার সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ব্যাট হাতে এবং আবু জায়েদ রাহী ও নাঈম হাসানরা বল হাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় নিজেদের প্রথম ৭ ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই জিতেছে চিটাগং।
আজ (শুক্রবার) থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব। স্বভাবতই প্রথম দিনে মাঠে নামবে স্বাগতিক দল চিটাগং ভাইকিংস। তাদের প্রতিপক্ষ কারা? টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে যাদের বিপক্ষে জিতে যাত্রা শুরু করেছিল চিটাগং, সেই রংপুরের বিপক্ষেই ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচটি খেলবে মুশফিকের দল।
টুর্নামেন্টের মাঝপথ পেরিয়ে যেখানে রীতিমত উড়ছে চিটাগং, সেখানে শুরুর ম্যাচের মতোই ধুঁকছে মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর। এখনো পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে তাদের ঝুলিতে জয় মাত্র ৪ ম্যাচে। সমান ম্যাচে সমান জয় নিয়ে সুপার ফোরে ওঠার লড়াইয়ে তাদের ঘাড়েই নিঃশ্বাস ফেলছে মেহেদি হাসান মিরাজের রাজশাহী কিংস।
অথচ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুরের দলটি এবারও কাগজে-কলমে টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার অন্যতম দাবীদার। কিন্তু মাঠের খেলায় সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে না পারাতেই ঘটেছে বিপত্তি। দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল, অ্যালেক্স হেলস, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও রিলে রুশোর নাম শুনলেই অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠার কথা অনেক দলের- কিন্তু এবারের বিপিএলে এত বড় তারকাদের বিপক্ষেও বুক চিতিয়ে লড়াই করছে দলগুলো। ছিনিয়ে নিয়েছে জয়।
এখনো পর্যন্ত যে চার ম্যাচে হেরেছে রংপুর সবগুলোতেই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে ব্যাটিং ব্যর্থতা কিংবা ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা। দলের অন্যতম মহাতারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স মাঠে নামার পর ১৯৫ ও ১৮২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে জিতলেও গেইল-হেলস-রুশোদের নিয়ে এর আগে ১৩৫ রান তাড়া করা হয়নি রংপুরের, আবার আগে ব্যাট করে অলআউট হতে হয়েছে ৯৮ রানে।
যে কারণে দলের মধ্যে বড় তারকাদের উপস্থিতি থাকলেও নির্দিষ্ট দিনে তারা জ্বলে উঠতে পারবেন কি-না তা নিয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই শঙ্কায় রয়েছে রংপুর রাইডার্স টিম ম্যানেজম্যান্ট। এদিকে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে রংপুরের বোলিং নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা না থাকলেও, শেষ দুই ম্যাচে তাদের বিপক্ষে খুলনা টাইটানস ১৮১ এবং সিলেট সিক্সার্স দাঁড় করিয়েছে ১৯৪ রানের বিশাল সংগ্রহ।
বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কপাল ভালো দুই ম্যাচেই প্রথম চারজনের অন্তত তিনজন ভালো ব্যাটিং করায় ম্যাচ শেষে মিলেছে জয়। নতুবা পয়েন্ট টেবিলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের অবস্থা হতো আরো হতশ্রী। বোলারদের ব্যর্থতা ব্যাটসম্যানদের সাফল্যে আড়াল হলেও, চিটাগং ভাইকিংসের মতো টিম স্পিরিটে উজ্জীবিত দলের বিপক্ষে জিততে হলে ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে দায়িত্ব নিতে হবে রংপুরের বোলারদেরও।
তবে চিটাগং ভাইকিংস অতোটা ভাবছে না রংপুরের চার ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। দলের অভিজ্ঞ তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের মতে চিটাগং কোনো বিশেষ দিক বা খেলোয়াড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে না। যখন যেমন প্রয়োজন পড়ে তেমন করে কেউ না কেউ পারফর্ম করে দেয় বলে আবারও রংপুরকে হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আশরাফুলের চিটাগং।
বৃহস্পতিবার ম্যাচের ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঐচ্ছিক অনুশীলনে এসে আশরাফুল বলেন, ‘রংপুর শেষ দু’টি ম্যাচে অনেক রান তাড়া করে জিতেছে। তাদের ব্যাটিংয়ে চারজনই (বিদেশি) ওয়াল্ড র্ক্লাস। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তারা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে, কঠিন তো হবেই। বিদেশি যে চার ব্যাটসম্যান আছে, রংপুর তাদের দিকেই বেশি তাকিয়ে রয়েছে। আমাদের টিমে কিন্তু ওই জিনিসটা নেই। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে কেউ না কেউ পারফর্ম করে দিচ্ছে। যেহেতু আমাদের তিন বিভাগই ভালো খেলছে, সেরাটা খেলতে পারলে ভালোই হবে।’
চট্টগ্রাম পর্বে সবচেয়ে বেশি ৪টি ম্যাচ খেলবে স্বাগতিক দল চিটাগং ভাইকিংস। বিপিএলের গত আসরে চট্টগ্রাম যাত্রাটা সুখকর হয়নি স্বাগতিক দলটি। সেবারও নিজের মাঠে ৪ ম্যাচ খেলেছিল তারা। কিন্তু জয় পেয়েছিল মাত্র ১ ম্যাচে। হেরে গিয়েছিল বাকি তিন ম্যাচেই। এবার সে তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে নতুন সুখস্মৃতি নিয়েই ঢাকায় ফিরতে চাইবে চিটাগং ভাইকিংস।
কিন্তু তারা যদি এ কাজে সফল হয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জয়লাভ করে, তাহলে রংপুর রাইডার্সের সমীকরণ হয়ে পড়বে কঠিন। গ্রুপপর্বের পরের তিন ম্যাচে তখন জয়ব্যতীত কিছু ভাবনার সুযোগ থাকবে না তাদের সামনে। তাই আজকের ম্যাচটি জিতে সমীকরণটা নিজেদের পক্ষেই রাখতে চাইবে রংপুর। সেক্ষেত্রে পাস করতে হবে কঠিন পরীক্ষায়।
এসএএস/এমকেএইচ