এক ওভারে ৩০ রান দিয়ে ১৫ দিন কেঁদেছেন ইশান্ত
হাসি-কান্না মিলিয়েই ক্রীড়াবিদদের জীবন। আজ হাসবেন তো কাল কাঁদতে হবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোন দিন জয়ীর হাসি কিংবা কোন দিন পরাজিতের গ্লানি সঙ্গী হবে তা বলতে পারে না কেউই। সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাকে সত্য মেনে নিয়েই এগিয়ে যায় ক্রীড়াবিদদের জীবন।
কোন দিন খেলায় হেরে গেলে সে ম্যাচের দুঃখ বা হতাশা ঠিক কতদিন পোড়াতে পারে একজন খেলোয়াড়কে? কতদিনই বা অশ্রুসিক্ত হতে পারে একজন খেলোয়াড়ের চোখ? স্বাভাবিকভাবে হয়তো ৩-৪ দিন কিংবা বড়জোর এক সপ্তাহ তাড়িয়ে বেড়ায় সে গ্লানি।
কিন্তু ভারতের ৩০ বছর বয়সী পেসার ইশান্ত শর্মা নিজ দেশ ভারতকে এক ম্যাচে হারিয়ে কেঁদেছেন টানা ১৫ দিন। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য নিজেই জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনা ২০১৩ সালের। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল তখন অবস্থান করছে ভারতে। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৩০৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৭ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান।
ম্যাচ জিততে হলে শেষের ১৮ বল করতে হতো ৪৪ রান। অধিনায়ক ধোনি বোলিংয়ে ডাকেন তখনো পর্যন্ত ৭ ওভারে ৩৩ রান খরচ করা ইশান্ত শর্মাকে। কিন্তু সে ওভার করতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধান ইশান্ত। অসি অলরাউন্ডার জেমস ফকনারের কাছে ৪টি ছক্কা ও ১টি চারের মারে মোট ৩০ রান দিয়ে বসেন তিনি।
৭ ওভার শেষে মাত্র ৩৩ রান খরচ করা ইশান্তের বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৮ ওভার শেষে ৬৩ রান। শেষপর্যন্ত ভারতও ম্যাচটি হেরে যায় ৪ উইকেটের ব্যবধানে। মাত্র ২৯ বলে ৬৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে জেতান ফকনার।
সে ম্যাচে ৪৮তম ওভারে দেয়া সেই ৩০ রানের কথা দীর্ঘদিন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে ইশান্তকে। নিজ দেশকে হারানোর অনুতাপে টানা ১৫ দিন কেঁদেছেন তিনি। সে সময়ের কথা মনে করে ইশান্ত বলেন, ‘আমি শুধু একদিনই কান্না করিনি...অন্তত ১৫ দিন কেঁদেছি সেই ম্যাচের পর। আমি সবসময় ভালো করার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী। আমি অন্য কাউকে দায়ী করে পালিয়ে বেড়ানোর মানুষ নই। সেদিন সবকিছু আমার বিপক্ষে গিয়েছিল। আমি ভারতের পক্ষে একটি ম্যাচ হেরে গিয়েছিলাম।’
সেসময় ইশান্তকে এমন অবস্থায় দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী প্রতিমা সিংও। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি সেদিনের আগে কখনো তার (ইশান্ত) চোখ ভিজতেও দেখিনি। কিন্তু তখন সে রীতিমতো কাঁদছিল, আমি কখনো কল্পনাও করিনি এমন দৃশ্য দেখবো। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে ক্রিকেটই জীবনের সব নয়। জীবন আরও অনেক বড়।’
এসএএস/এমএস