সিলেটে এবারও হলো রান উৎসব
আগেরবার বিপিএলে প্রথম দুইবার যে দুইশর ওপর স্কোর উঠেছিল তা হয়েছিলো সিলেটে। এবার দুইবার না হলেও, আসরের প্রথম দুইশ রানের দলীয় সংগ্রহের দেখা মিলেছে সিলেটেই। আসরের ২২তম ম্যাচে খুলনা টাইটানস বনাম চিটাগং ভাইকিংসের মধ্যকার ম্যাচে।
তবে শুরুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। ১৫ জানুয়ারী স্বাগতিক সিলেট আর খুলনা টাইটান্স আর রাজশাহী কিংস এবং স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছিল এবার বুঝি আর রান উৎসব হবে না সিলেটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেটে গেছে সে অনিশ্চয়তার মেঘ।
বরং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই ঘটেছে। আগের বারের মত এবারও সিলেটে রানের ফলগুধারা বইছে। চার ও ছক্কার অনুপম প্রদর্শনীও ঘটেছে। যেমন ঘটেছিল গতবার। ইতিহাস বলছে আগেরবার সিলেটে চারদিনের প্রথম পর্ব বেশ ভালই জমেছিল। প্রতি ম্যাচে গ্যালারি ভরা দর্শক ছিল। চার ও ছক্কার ফুলঝুরি ঝড়েছে। বিগ স্কোরিং গেম এবং মাঠে জমজমাট লড়াই হয়েছে। দর্শকরা প্রাণ ভরে খেলা উপভোগ করেছেন।
এবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সমর্থক-ভক্ত ও অনুরাগির কলরব কম ছিল। আগের মত প্রতি ম্যাচে গ্যালারি ভরেনি। স্বাগতিক সিলেট সমর্থকদের গগনবিদারি চিৎকার, হর্ষধ্বনি আর অকুণ্ঠ সমর্থনে মাঠ গরম হয়নি। তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে আসা চার ও ছক্কা দেখে দর্শকরা হয়েছেন প্রীত।
একটি ছাড়া প্রায় প্রতিটি বিগ স্কোরিং গেম সবাই প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন। মোদ্দা কথা টি টোয়েন্টি ম্যাচের সত্যিকার আস্বাদন মিলেছে। দর্শকদের মনের ক্ষুধা মিটেছে। তারা সত্যিকার টি-টোয়েন্টি দেখতে এসে যে মনোরঞ্জন চান তা পেয়েছেন।
এবার গত চার দিনে হওয়া ম্যাচ গুলো মধ্যে শুধু প্রথম দিন মানে ১৫ জানুয়ারী খুলনা টাইটান্স ও রাজশাহী কিংস আর স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ম্যাচে একদমই রান হয়নি।
এছাড়া ১৬ জানুয়ারী দিনের ম্যাচেও স্কোর লাইন ভাল ছিল না। কিন্তু ঐ দিন মানে দ্বিতীয় দিন রাতের খেলা থেকে উইকেট ক্রমেই ব্যাটিং বান্ধব হতে থাকে। তারপর যত সময় গড়িয়েছে সিলেটের পিচ ততই ব্যাটসম্যানদের পক্ষে চলে গেছে। আজ (শনিবার) শেষ দিনে এসে উইকেট পুরোপুরি ব্যাটিং স্বর্গ হয়ে উঠেছে। শেষ চার ম্যাচের গড় স্কোর দাড়িয়েছে ১৭৮। যা গতবারের চেয়েও বেশী।
আজ (শনিবার) শেষ দিন প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্স আর রংপুর রাইডার্স ম্যাচের গড় স্কোর ছিল ১৯৪.৫০। যে ম্যাচে ১৯৪ রানের বিশাল স্কোর নিয়েও শেষ হাসি হাসতে পারেনি সাব্বির ও ডেভিড ওয়ার্নারের দল। তিন বল আগে ৪ উইকেট হাতে রেখেই সে রান টপকে গেছে মাশরাফির দল।
এছাড়া আগের দিন মানে শুক্রবার রাতের ম্যাচেও প্রায় একই অবস্থা। ১৮১ রানের বড়সড় স্কোর গড়েও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথে পারেনি খুলনা টাইটান্স। আগের আসরের চার দিনে দুইটি ইনিংসে ২০০ ছাড়ানো স্কোর হলেও এবার হয়েছে একটি। তবে পরপর দুইদিন দুইটি ম্যাচে ১৮০+ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েও জিততে পারেনি খুলনা ও সিলেট।
আসুন সিলেট পর্বে হওয়া প্রথম সাত ম্যাচের সংক্ষিপ্ত স্কোর একনজরে দেখে নেই:
১৫ জানুয়ারি
খুলনা ১২৮/৯ (২০) জবাবে রাজশাহী ১০৩/১০ (১৯.৩) এবং
সিলেট সিক্সার্স ৬৮/১০ জবাবে কুমিল্লা ৬৯/২ (১২.০)।
১৬ জানুয়ারি
রাজশাহী ১৩৬/৬ (২০) জবাবে ঢাকা ১১৬/৯ (২০.০) এবং
সিলেট ১৮৭/৫ (২০) জবাবে রংপুর ১৬০/৬ (২০)
১৮ জানুয়ারি
সিলেট ১৫৮/৮(২০.০) জবাবে ঢাকা ১৬৩/৪ (১৭.০) এবং
খুলনা ১৮১/৭ (২০.০) জবাবে কুমিল্লা ১৮৬/৭(১৯.৪)
১৯ জানুয়ারি
সিলেট ১৯৪/৪(২০.০) জবাবে রংপুর ১৯৫/৬(১৯.৩) এবং
চিটাগং ২১৪/৪(২০.০) জবাবে খুলনা ১৮৮/৮(২০.০)।
পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া প্রথম পর্বের চেয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রায় সব খেলায় রান হয়েছে। শুধু ম্যাচ পিছু স্কোর লাইনই বড় হয়নি। সিলেট পর্বে আগের বারের মত এবারো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্কোর হয়েছে। আর ব্যক্তিগত স্কোরলাইনটাও হয়েছে বড়।
সিলেটে ব্যাটিং সহায় পিচে রান খরা কাটিয়ে ছন্দ ফিরে পেয়েছেন তামিম ইকবাল। ১৮ জানুয়ারী খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ১৭৩.৮০ স্ট্রাইকরেটে ৪২ বলে খেলেছেন ৭৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। সাব্বির রহমান রুম্মন আজ (শনিবার) রংপুর রাইডার্সের বিরুদ্ধে দল জেতাতে না পারলেও ৫১ বলে ১৬৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে ৮৫ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়েছেন।
১৬ জানুয়ারী রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪২ বলে ১৬২.৭৯ স্ট্রাইকরেটে ৪৩ বলে ৭০ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়েছেন লিটন দাস। ১৮ জানুয়ারী স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সের সাথে ১৪৮.৭৮ স্ট্রাইকরেটে ৪১ বলে ৬১ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে ঢাকার জয়ের নায়ক হয়েছেন অধিনায়ক সাকিব।
মোদ্দা কথা আগের বার সিলেটে শুরু হওয়া বিপিএল প্রথম থেকেই পেয়েছিল অন্যরকম ছন্দ। আর এবার সিলেটে হওয়া দ্বিতীয় পর্বে সেই সিলেটে রানের ফলগুধারা বইলো বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে। এখন আশা করাই যায় এর পর রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এবং আবার ঢাকায় পরের পর্বগুলোতেও এমন রান উৎসব হবে। মাঠ ভাসবে রান বন্যায়। দর্শকরা ব্যাটসম্যানদের চার ছক্কার অনুপম প্রদর্শনী দেখে হবেন মুগ্ধ।
এআরবি/এসএএস/জেআইএম