ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তার পর জিতল মাশরাফির রংপুর

ক্রীড়া প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

প্রথম ইনিংসের সাব্বির রহমানের ঝড়ো ৮৫ রানের ইনিংসের পরে স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯৪ রান। যা ছিলো এবারের আসরের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। কিন্তু সিলেটের এ রেকর্ড টিকেছে মাত্র দুই ঘণ্টারও কম সময়। কেননা পরের ইনিংসেই ১৯৪ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ ৩ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখেই তাড়া করে ফেলেছে বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল রংপুর রাইডার্স।

রংপুরের দুই দক্ষিণ আফ্রিকার রিক্রুট রিলে রুশো এবং এবি ডি ভিলিয়ার্স মাঝের ইনিংসে ম্যাচ নিজেদের পক্ষে আনলেও এক ওভারেই দুইজনকে আউট করে সিলেটকে ম্যাচে ফেরান তাসকিন আহমেদ। পরে ১৮তম ওভারে তাসকিন শেষ দুই ব্যাটসম্যান নাহিদুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ মিঠুনকেও আউট করলে ম্যাচ ঝুঁকে যায় সিলেটের দিকে।

কিন্তু তখনো বাকি ছিলো ম্যাচের নাটকীয়তা। সিলেটের কেউই হয়তো ভাবেনি সেখান থেকে ফরহাদ রেজার ঝড়ে হেরে যাবে তাদের দল। কিন্তু মাঠের খেলায় হয়েছে ঠিক তাই। শেষ দুই ওভারে মাত্র ৬ বলে ১৮ রানের ঝড় তুলে তিন বল হাতে রেখেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন ফরহাদ রেজা।

রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফিরে যান ক্যারিবিয়ান ক্রিস গেইল। পয়েন্ট অঞ্চলে দাঁড়ানো সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে রানের খাতাও খুলতে পারেননি এ ব্যাটিং দানব।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচের গতিবিধি নিজেদের দিকে আনার প্রাথমিক কাজটি করেন অপর ওপেনার অ্যালেক্স হেলস এবং টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রিলে রুশো। দুজন মিলে মাত্র ৩৯ বলে যোগ করেন ৬৩ রান। ২টি করে চার-ছক্কার মারে ২৪ বল থেকে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলস।

অলক কাপালির বলে হেলস বিদায় নেয়ার পরেই উইকেটে আসেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলতে নেমে দর্শকদের তুমুল করতালি ও সমর্থন পান তিনি। মুখোমুখি প্রথম বলেই খোলেন রানের খাতা। ষষ্ঠ বলে কাপালির বোলিংয়েই কভারের উপর দিয়ে হাঁকান বিপিএলে নিজের প্রথম বাউন্ডারি।

ডি ভিলিয়ার্সের প্রথম ছক্কার জন্য দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয় ১১তম ওভারের প্রথম বল পর্যন্ত। মেহেদি হাসান রানাকে লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন তিনি। অপর প্রান্তে রিলে রুশোও খেলতে থাকেন নিজের ফর্ম ধরে রেখে। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ৩৮ বলে ৬৭ রান।

আসরে নিজের চতুর্থ ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন রুশো। তখনই সিলেটের পক্ষে বল হাতে আঘাত হানেন তাসকিন। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে অফস্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে কট বিহাইন্ড হন রুশো। আউট হওয়ার আগে ৯ চার ও ২ ছক্কার মারে ৩৫ বলে ৬১ রান করেন তিনি।

রুশো আউট হয়ে গেলেও রংপুরের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু একই ওভারের শেষ বলে তাকে সরাসরি বোল্ড করে দেন তাসকিন। আউট হওয়ার আগে বিপিএলে নিজের প্রথম ইনিংসে ২টি করে চার-ছক্কার মারে ২১ বল থেকে ৩৪ রান করেন ডি ভিলিয়ার্স।

তখনো রংপুরের জেতার জন্য ৩৬ বল থেকে করতে হতো ৫৮ রান। উইকেটে সব নতুন ব্যাটসম্যান থাকায় ম্যাচ আবারো হেলে যায় সিলেটের পক্ষে। এরই মধ্যে ১৮ বলে যখন ৩৫ রানের প্রয়োজন তখন একই ওভারে শেষ দুই ব্যাটসম্যান নাহিদুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ মিঠুনকে আউট করেন তাসকিন। শেষের ১২ বলে ২৪ রান বাকি থাকে রংপুরের।

উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা। বোলিংয়ে আনা হয় তরুণ পেসার মেহেদি হাসান রানাকে। বিগ ম্যাচের চাপ সামাল দিতে পারেননি রানা। প্রথম বলে বাউন্ডারি এবং শেষ বলে ছক্কা হজম করে সে ওভারে মোট ১৯ রান দিয়ে বসেন রানা। একটি চার ও ছক্কা মেরে সে ওভারে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে নেন ফরহাদ রেজা।

শেষ ওভারের রংপুরের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো মাত্র ৫ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন মাশরাফি, দ্বিতীয় বল ডট খেলেন রেজা। কিন্তু পরের বলেই সোজা বোলারের মাথার উপর দিয়ে চার মেরে ম্যাচ জেতান মাত্র ৬ বলে ১৮ রান করা ফরহাদ রেজা। ব্যাট হাতে সাব্বির রহমান ৮৫ কিংবা বল হাতে তাসকিন আহমেদ ৪ উইকেট নিয়েও থেকে যান পরাজিত দলেই।

আজকের ম্যাচের আগে এবারের বিপিএলে সাব্বির রহমানের ইনিংসগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রান ছিল ২০। মোট ৬ ম্যাচে তার রানের যোগফল মাত্র ৫৬। অথচ আজ এক ইনিংসেই তিনি করে ফেললেন ৮৫ রান। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছেন সিলেট সিক্সার্সের ওপেনার। তার ব্যাটিং ঝড়েই রংপুর রাইডার্সের সামনে ১৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিতে পেরেছে সিলেট।

রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম দেখাতেই সাব্বিরকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই ম্যাচেই আগের ইনিংসগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ রান করেন তিনি। এরপর ঢাকার বিপক্ষে ১১ রান করে আউট হয়ে গেলেও আজ সেই রংপুরের বিপক্ষেই ইনিংস ওপেন করতে নেমে সংহার মূর্তি ধারণ করেন সাব্বির।

যেন সেই চিরচেনা সাব্বির। যার হাতে মারমার-কাটকাট ব্যাটিং, চার-ছক্কার ফুলঝুরি। ইনিংসের শেষ ওভারে এসে প্রথম বলে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন মোট ৫১ বল। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তিনি রান করেছেন ৮৫টি। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কার মার ছিল ৬টি। ৮৫ রানের মধ্যে ৫০ রানই এসেছে তার চার-ছক্কা থেকে।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাস আর সাব্বির রহমানের জুটিটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৩ রানের জুটিতে লিটনেরই ছিল ১১ রান। ৮ বল খেলে লিটন আউট হয়ে যাওয়ার পর জুটি গড়েন আফিফ হোসেন ধ্রুব এবং সাব্বির রহমান। এই জুটিতে আসে ৩৯ রান। ১১ বলে ১৯ রান করে আফিফ রানআউট হয়ে গেলে ব্যাট করতে নামেন ডেভিড ওয়ার্নার।

এবারের বিপিএলে নিজের শেষ ম্যাচে ওয়ার্নারের ব্যাট বিধ্বংসী হয়নি। ২১ বল খেলে ১৯ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। কোনো চার-ছক্কারও মার ছিল না ওয়ার্নারের ব্যাটে। অধিনায়ক আউট হতেই মাঠে নামেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান নিকলাস পুরান।

শেষ মুহূর্তে ঝড় তোলেন এই পুরানই। ২৭ বল খেলে ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কার মার মারেন তিনি। জাকির আলি অপরাজিত থাকেন ৫ রানে। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রানের বিশাল স্কোর গড়ে তোলে সিলেট সিক্সার্স। মাশরাফি নেন সর্বোচ্চ ২ উইকেট এবং শফিউল ইসলাম নেন ১ উইকেট।

এসএএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন