এ কি করলেন তৌহিদ হৃদয়!
ক্রিকেটে সিনিয়র পার্টনারের জন্য নিজের উইকেট বিসর্জন দেয়ার নজির ভুরিভুরি। দুই ব্যাটসম্যান রান নিতে গিয়ে কখনো ভুল বোঝাবুঝিতে একপ্রান্তে চলে আসলে বেশীর ভাগ সময় জুনিয়র ব্যাটসম্যান নিজে থেকে বেরিয়ে সিনিয়র পার্টনারকে উইকেটে থাকতে সাহায্য করেন।
তবে যদি জুনিয়র পার্টনার ওয়েল সেট থাকেন, তার নামের পাশে ৪০-৫০ কিংবা তার বেশী রান থাকে- তাহলে অনেক সময় সিনিয়র পার্টনার বা তার চেয়ে বড় মাপের ব্যাটসম্যানও উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে ঐ তরুণ বা জুুনিয়র পার্টনারকেই উল্টো ব্যাট করার সুযোগ দিয়ে নিজে বেড়িয়ে যান।
কিন্তু আজ শেরে বাংলায় দেখা গেল বিপরীত চিত্র। সঙ্গী ডেভিড ওয়ার্নারের জন্য নিজের উইকেট স্যাক্রিফাইজ না করে দাড়িয়ে থাকলেন তৌহিদ হৃদয়। অসি ক্রিকেটের বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সেরা তারকা ডেভিড ওয়ার্নার এখন সিলেটের অধিনায়ক। আর তার জুুনিয়র পার্টনার ছিলেন তৌহিদ হৃদয়।
ঘটনাটি সিলেট ইনিংসের পাঁচ নম্বর ওভারে। বোলার ছিলেন কুমিল্লার পাকিস্তানী রিক্রুট শোয়েব মালিক। মালিকের অফস্পিনে কব্জির মোচড়ে স্কোয়ার লেগ আর মিড উইকেটের মাঝামাঝি ঘুরিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। তিনি নিজে অবশ্য রান নেবার এতটুকু চেষ্টা করেননি। কব্জির মোচড়ে ঘুরিয়ে পপিং ক্রিজেই দাড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু সিলেট ক্যাপ্টেন ডেভিড ওয়ার্নার সিঙ্গেলসের জন্য ননস্ট্রাইক এন্ড থেকে দৌড়ে ব্যাটিং এন্ডে চলে আসেন। কিন্তু তৌহিদ হৃদয় ঠায় দাড়িয়ে থাকেন মূর্তির মত।
দুই ব্যাটসম্যান এক প্রান্তে, সবাই ধরে বসেছিলেন হৃদয় বেড়িয়ে যাবেন আপনা থেকে। যাতে ওয়ার্নার ক্রিজে থাকেন। তাতে দলের লাভ হতো অনিবার্যভাবেই। কারণ ঐ ঘটনার আগের ওভারেই কুমিল্লার অফস্পিনার মেহেদি হাসানকে তিন তিনটি বাউন্ডারি হাকিয়ে বসেন ওয়ার্নার। ঐ ওভারের প্রথম, তৃতীয় আর চতুর্থ বলে তিন-তিনটি বাউন্ডারি হাকিয়ে উইকেটের স্লথ গতির সাথে নিজেকে প্রায় মানিয়ে নিয়েছিলেন ওয়ার্নার।
অথচ তাকেই কিনা দাড়িয়ে থেকে রান আউট করে দিলেন তৌাহিদ হৃদয়। তখন হৃদয়ের রান আট বলে ৪। আর ওয়ার্নার ১৩ বলে ১৪।
তৌহিদ হৃদয়ের এমন অদূরদর্শী আচরণে অবাক সবাই। তার নামের পাশে ৩০-৪০ রান থাকলে তবু মানা যেত। তিনি ওয়েল সেট আর ওয়ার্নার সবে উইকেটে এসেছেন। কিন্তু তাতো ছিল না। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারকে উইকেট স্যাক্রিফাইজ না করা হৃদয় বেশী দুর যেতেও পারেননি। ২৪ বলে ৮ রান করে আউট হয়েছেন।
হৃদয়ের পপিং ক্রিজে দাড়িয়ে থেকে ওয়ার্নারকে স্যাক্রিফাইস না করার বিষয়টি কুমিল্লা আর সিলেট ম্যাচের আলোচিত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। সবার একটাই কথা, একজন জুনিয়র ক্রিকেটার, প্রথমবার বিপিএল খেলছেন- তার পার্টনার ডেভিড ওয়ার্নার যিনি নিজে অসি ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেটের বড় ব্যাটসম্যান। তার ব্যাটিং সামর্থ্য অনেক অনেক বেশী। তাকে স্যাক্রিফাইস না করে হৃদয় দাড়িয়ে থাকলেন কেন?
তবে কি হৃদয়ের নিজের মেধা, মান-সামর্থ্য সম্পর্কে কোন ধারণা নেই? তিনি পারবেন নাকি পারবেন না? সেই বোধ-অনুভব আর উপলব্ধিটা কি নেই? থাকলে তৎনগদ বেড়িয়ে ওয়ার্নারকে ছেড়ে দিতেন। কিন্তু হৃদয় তা না করে উল্টো পপিং ক্রিজে দাড়িয়ে থাকলেন কেন?
হয় পরিস্থিতি কি তা বুঝতেই পারেননি। না হয় ইচ্ছে করেই দাড়িয়েছিলেন। এর কোনটা সত্য, তা হৃদয়ই ভাল বলতে পারবেন। এদিকে হ্রদয়ের অদূরদর্শিতাই শুধু নয়, ওয়ার্নার নিজেকে খানিক দূর্ভাগাও ভাবতে পারেন।
কারণ তিনি যথন দৌড়ে এ প্রান্তে চলে এসে সরাসরি পপিং ক্রিজে পৌছে যান, ঠিক সেই মুহুর্তে হৃদয়ের ব্যাট পপিং ক্রিজের ঠিক কয়েক ইঞ্চি ওপরে ছিল। তাই আসলে আউট হয়েছেন হৃদয়। কিন্তু আম্পায়ার তা ঠিক খেয়াল না করেই হৃদয়কে আউট দিয়েছেন। অথচ টিভি রিপ্লে'তে বোঝা গেছে হৃদয়ের ব্যাট শূন্যে ছিল। আর ওয়ার্নার তখন ঠিক পপিং ক্রিজের ভিতরে। কিন্তু আম্পায়ার তারপরও ওয়ার্নারকেই আউট দিয়েছেন।
এদিকে হৃদয় বাংলাদেশ জাতীয় যুব দলের অধিনায়ক। তার এই বোধ , বুদ্ধি ও উপলব্ধি দেখে হতাশ অনেক ক্রিকেট অনুরাগি। সবার আক্ষেপমাখা সংলাপ, এই কি যুব দলের অধিনায়কের ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধি? কখন কি করতে হবে, তিনি তা জানবেন না।
তার আজকের এই আচরণ যে রীতিমত লজ্জার, তিনি কি তা বুঝতে পেরেছেন? ডেভিড ওয়ার্নারের মত বিশ্ব মানের ব্যাটসম্যানকে উইকেট স্যাক্রিফাইস করতে না পারাটা যে বোধ-বুদ্ধিহীনতার সামিল- সেই উপলব্ধিটা কি তার আছে? একটি টেস্ট খেলিয়ে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের ক্রিকেট অধিনয়কের যদি এই সামান্য ক্রিকেট বুদ্ধি ও দুরদর্শিতা না থাকে তাহলে কি করে হবে?
হৃদয় তো বর্তমান যুব দলের অধিনায়ক, তার ক্রিকেট বোধ ও সাধারণ জ্ঞান এবং উপলব্ধি যদি এমন হয়, তাহলে বাকিদের কি অবস্থা? বিপুল অর্থ খরচ করে বিদেশী কোচ, কোচিং স্টাফ আনা হচ্ছে। তারা কি শেখান? ন্যুনতম ক্রিকেট বোধটুকু শেখাতে পারেন না। তাহলে আর গাঁটের পয়সা খরচ করে যুব দলের জন্যও বার বার বিদেশী কোচ আনা কেন ?
এআরবি/এসএএস/পিআর