জীবনের ‘প্রথম’ টস সাকিবের সঙ্গে করলেন মিরাজ
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করেছেন দীর্ঘদিন। বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দুইটি বিশ্বকাপে। তার অধীনেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত সেরা সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ যুবা দল। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে হওয়া সেই বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের দল।
সে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন মিরাজ। সে টুর্নামেন্টের এক ম্যাচেই বলেছিলেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সফল হলেও তার মূল লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে অন্তত ১৫ বছর খেলা। সে বিশ্বকাপের পরেই অধিনায়কত্বের পাঠ চুকে গিয়েছিল তার। একই বছরই প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় ক্রিকেট দলে। টেস্ট অভিষেকেই দুই ম্যাচের সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে গড়ে ফেলেন বিশ্বরেকর্ড।
পরে যতো সময় গড়িয়েছে বাংলাদেশ দলে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন মিরাজ। প্রথমে ছিলেন টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য। ক্রমেই নিজেকে অনিবার্য সদস্যে পরিণত করেছেন খুলনার ২১ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। সে ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব পেয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল রাজশাহী কিংসের।
দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ও নামী ক্রিকেটার থাকলেও মিরাজের চনমনে স্বভাব এবং দলের প্রতি আত্মনিবেদন বিবেচনা করে তার হাতেই অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড সঁপে দিয়েছে রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি। ফলে প্রথমবারের মতো বড় কোনো দলকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ চলে আসে তার সামনে। বিপিএলে অধিনায়কত্ব পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার এখন মিরাজই।
অধিনায়কত্ব পেয়ে আসরের প্রথম দিনেই দলকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন মিরাজ। টস করেছেন বাংলাদেশ দলে তার অগ্রজ সতীর্থ সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। আর প্রথম টসেই বাজিমাত করেছেন বিপিএলের সর্বকণিষ্ঠ এ অধিনায়ক। জিতেছেন কয়েন টসে, শিশিরের কথা মাথায় রেখে নিয়েছেন আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত। বড় ভাই সাকিবও টসে জিতলে নিতেন একই সিদ্ধান্ত। কিন্তু মিরাজ টস জিতে নেয়ায় তা আর করা হয়নি সাকিবের।
মিরাজকে অধিনায়ক করার পরে নানান মানুষের কাছে শোনা গিয়েছে নানান মত। এত অল্প বয়সে অধিনায়কত্ব দেয়ায় নাখোশ হয়েছিলেন কেউ কেউ। আবার অনেকেই বিষয়টিকে দেখেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য নেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে। এমন ভাবনা থাকা দলের সদস্য রাজশাহী কিংসের কোচ ল্যান্স ক্লুজনার।
মিরাজের অধিনায়কত্ব পাওয়াকে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পরবর্তী অধিনায়ক প্রস্তুত করার মিশন হিসেবে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সে ভীষণ যোগ্য, দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড়। আপনারা যেমন বললেন, সে আসলেই খুব তরুণ। তবে সে বেশ অনেকটা সময় ধরে এই খেলার মধ্যে আছে, এটা তার জন্য নতুন এক পদক্ষেপ। দলে সে কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় পাবে, যারা তাকে সাহায্য করতে পারবে। তাই আমরা তাকে অধিনায়ক হিসেবে গড়ে উঠার প্লাটফর্মটা করে দিচ্ছি। কে জানে, সামনের দিনগুলোতে সে হয়তো বাংলাদেশ দলেও এমনটা করতে পারে।’
অন্যদিকে প্রথমবারের মতো বড় দলে অধিনায়কত্ব পাওয়াকে নিজের জন্য বড় একটি সুযোগ হিসেবে ব্যাখ্যা দেন মিরাজ নিজে। তিনি বলেন, ‘এটি আমার জন্য অনেক বড় একটি সুযোগ। এতো বড় টুর্নামেন্টে আমার এর আগে কখনো অধিনায়কত্ব করা হয়নি। আপনারা জানেন যে আমি অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছি, দেশের জন্য। সেখানে বয়স কিন্তু সীমিত থাকে। তবে এখানে কিন্তু অনেক ধরনের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকে। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটার এবং বাংলাদেশিরা থাকে। এটি অনেক বড় একটি টুর্নামেন্ট। আমার কাছে মনে হয় এটি অনেক বড় অভিজ্ঞতা আমার জন্য। আমার জন্য একটি ভালো সুযোগ এটি। চেষ্টা করবো আমার শতভাগ দেয়ার জন্য।’
তবে নিজের অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচটিতে অধিনায়কত্বের শুরুটা মনে রাখার মতো হয়নি মিরাজের। ঢাকা ডায়নামাইটসের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের উত্তাল ব্যাটিংয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে রাজশাহী। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকার সংগ্রহ ৬ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৬৮ রান। যেখানে মিরাজ নিজের ২ ওভার বোলিং করে ৪ ছক্কা হজম করে বিলিয়েছেন ৩০ রান।
এসএএস/আরআইপি