সাব্বির নাসির তাসকিন আশরাফুলদের অন্যরকম বিপিএল!
গল্পের পেছনেও নাকি গল্প থাকে। কাহিনীর অন্তরালেও তেমনি থাকে কাহিনী। লড়াইয়ের ভেতরেও অন্য লড়াই চলে। এবারের বিপিএলেও ঠিক তেমনি। খালি চোখে বিপিএল হলো আইপিএল আর বিগ-ব্যাশের অনুরূপ এক টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর, যেখানে বাংলাদেশের সাত দল অংশ নেয়। এবারো নিচ্ছে।
সাদা চোখে এবারের বিপিএল মাশরাফির রংপুর রাইডার্স, সাকিবের ঢাকা ডায়নামইটস, তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটান্স, মুশফিকুর রহীমের চিটাগাং ভাইকিংস, মেহেদি হাসান মিরাজের রাজশাহী কিংস ও ডেভিড ওয়ার্নারের সিলেট সিক্সার্সের লড়াই। যে লড়াইয়ে রংপুর, ঢাকা, কুমিল্লা ও সিলেটকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। সব হিসেব নিকেশেই ওই চার দলকেই এবারের বিপিএলের সম্ভাব্য ফেবারিট ভাবা হচ্ছে।
সফল অধিনায়ক মাশরাফি এবারো রংপুরের নৌকার মাঝি। নড়াইল এক্সপ্রেসের অধিনায়কত্বে রংপুর এবারো বিপিএলের হট ফেবারিট। শিরোপা ধরে রাখতে রংপুর এবারো মরিয়া। গতবারের সাফল্যের অন্যতম রূপকার ক্রিস গেইলকে রেখে দেয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকান বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সকে দলে টেনেছে তারা। এছাড়া ইংলিশ তুখোর উইলোবাজ অ্যালেক্স হেলসও এবার রংপুরে। সব মিলিয়ে রংপুর এবারো শিরোপার অন্যতম দাবিদার ।
গতবারের রানার্সআপ ঢাকাও কম যায়নি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের নেতৃত্বে ঢাকা ডায়নামাইটস এবারো তারকায় ঠাসা এবং শিরোপার অন্যতম দাবিদার।
সাকিবের মত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অন্যতম সেরা ও সফল পারফরমার ঢাকার বড় সম্পদ ও শক্তি। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অন্যতম সেরা ও অতি কার্যকর অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড, রোভম্যান পাওয়েল ও ইংলিশ তারকা ইয়ান বেলের মত স্পেশালিস্ট পারফরমার এবারো ঢাকায়।
আগেরবার অল্পের জন্য ফাইনাল খেলতে না পারা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবার আরও শক্তিশালি দল। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে কুশলী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের হাতের ছোঁয়ায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শিরোপার স্বপ্ন দেখার মতই দল। দলটির শক্তি ও সম্ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, ক্যারিবীয় ওপেনার এভিন লুইস, পাকিস্তানি তারকা শোয়েব মালিক, শহিদ আফ্রিদি।
এমন একঝাঁক পরিণত ও দক্ষ ক্রিকেটারে গড়া কুমিল্লাকে হালকাভাবে নেয়ার কিছুই নেই। এর পরপরই চলে আসে সিলেট সিক্সার্সের কথা। অসি তারকা ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে সিলেটে আছেন একঝাঁক কার্যকর পারফরমার। যার বড় অংশ বাংলাদেশের। সাব্বির, নাসির, লিটন দাস, আফিফ হোসেন ধ্রুব, তাসকিন আহমেদের সাথে পাকিস্তানের সোহেল তানভির, দক্ষিণ আফ্রিকান লেগ স্পিনার ইমরান তাহির ও নেপালের লেগি সন্দীপ লামিচানের মিশেলে সিলেটও সম্ভাবনাময় একটি দল।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটান্স, মুশফিকুর রহীমের চিটাগায় ভাইকিংস আর মেহেদি হাসান মিরাজের রাজশাহী কিংসও একদম হেলা-ফেলার দল নয়। এই তিন দলের মধ্যে রাজশাহীতে সৌম্য সরকার আর মুমিনুল হকের মত ইনফর্ম পারফরমারও আছেন।
অন্যদিকে খুলনা ও চিটাগাং অনেকটাই যথাক্রমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিক নির্ভর দল। তাদের দুজনার জ্বলে ওঠার ওপরই ওই দুই দলের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করবে।
এতো গেল কাগজে কলমের হিসেব। এর বাইরেও একটা অন্যরকম হিসেব নিকেশও আছে। এবারের বিপিএল যে ক’জন ক্রিকেটারের জন্য অন্যরকম এক আসর। কারা আছেন সেই দলে? শুনতে মন চাচ্ছে নিশ্চয়? তাহলে শুনুন।
ওই তালিকায় তাদের নামই আছে, যারা এখন জাতীয় দলে নেই। তবে এক সময় ছিলেন এবং আগামীতেও ফেরার প্রহর গুনছেন এমন একঝাঁক পরিচিত মুখ। যাদের মধ্যে আছে সাব্বির রহমান রুম্মন, নাসির হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, এনামুল হক বিজয়, নুরুল হাসান সোহান এবং দুই অভিজ্ঞ ও পোড়খাওয়া সৈনিক মোহাম্মদ আশরাফুল এবং শাহরিয়ার নাফীস।
ওপরে যাদের কথা বলা হলো তাদের জন্য এবারের বিপিএলের আবেদন অন্য, একেবারে ভিন্ন। তাদের ভাল খেলা, ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠাটা শুধুমাত্র দলের আলোকেই নয়, তাদের নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না সাব্বির, নাসির, এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক, তাসকিন আর আশরাফুল-শাহরিয়ার নাফীস এখন জাতীয় দলের বাইরে।
এবারের বিপিএলে ভাল খেললেই তারা আবার জাতীয় দলে ফিরবেন- বিষয়টা তেমনও নয়। এখন যেমন তারা কোথাও নেই, তাদের নিয়ে কথা-বার্তাও নেই। এককথায় অন্ধকার বা তিমিরে না তলিয়ে গেলেও পাদপ্রদীপের আলোয় নেই।
বিপিএলে ভাল খেলতে পারলে তারা আবার সবার চোখে পড়বেন। সবাই দেখবে-জানবে সাব্বির, নাসির, বিজয়, মোসাদ্দেক, তাসকিন, আশরাফুল ও নাফীসরা হারিয়ে যাননি। তাদের ভাল খেলার সামর্থ্যও শেষ হয়ে যায়নি। তারা পারেন। এখনো ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠার সামর্থ্য রাখেন। তাতেই তাদের ক্যারিয়ারের প্রদীপ আবার জ্বলে উঠবে। আর ব্যর্থ হলে চিরতরে না হোক কিছু দিনের জন্য হলেও হারিয়ে যেতে হবে। জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া বহুদুরে ক্লাব ক্রিকেটেও ভাল ও বড় দল এবং দর দাম পাওয়া খুব কঠিন হবে।
ওপরে যাদের নাম বলা হলো বিপিএল প্রস্তুতি শুরুর পর তাদের সবাই গত কয়েকদিন মিডিয়ার সাথে কথা বলে ফেলেছেন। তাতে পরিষ্কার বোঝা গেছে, সবারই ভিতরে ভিতরে এখনো সুপ্ত আকাঙ্খা আছে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। ফেরার। এখন সেই আকাঙ্খার বাস্তব রূপ দিতে হলে বিপিএলই সেরা মঞ্চ। সর্বোত্তম প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশের এই একটি মাত্র আসর যা দেশের বাইরেও বহুদেশে দেখানো হয়। অনেকের দৃষ্টি আবদ্ধ থাকে বিপিএলের দিকে। সেই আসরে দেশি ও বিদেশি অনেক তারকা, নামি-দামি ক্রিকেটারের সাথে ভাল খেলার অর্থ সবার চোখে পড়ে যাওয়া। তাতে দেশেও সাড়া পড়ে, নাড়াও পড়ে। নির্বাচক, বোর্ড কর্তা এবং জাতীয় দলের টিম ম্যানেজম্যান্টও বিবেচনায় আনেন।
ওপরে যা বলা হলো তারুণ্যের প্রতীক সাব্বির, নাসির, বিজয়, মোসাদ্দেক ও তাসকিনদের পাশাপাশি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের শাস্তি কাটিয়ে পাঁচ বছর এবং তিন আসর পর বিপিএল খেলতে নামা আশরাফুলও তা খুব ভাল জানেন। তারা এও জানেন, এ আসরে ভাল খেলতে পারলে যেমন আবার আলোয় ফেরা যাবে, ব্যর্থ হলে ততটাই অন্ধকারে তলিয়ে যেতে হবে।
তাই তারা সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে চেষ্টা করবেন এবারের বিপিএলে সেরাটা উপহার দিতে।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর