উদ্বোধনী দিনে স্পটলাইট যাদের দিকে
নানান উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বিপিএলের ষষ্ঠ আসর। এ আসরটি মূলত ২০১৮ সালে হওয়ার কথা থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে চলে এসেছে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে।
তবে সময়ের হিসেবে কেবল দুই মাসই পিছিয়েছে টুর্নামেন্ট। কারণ প্রতিবার নভেম্বর-ডিসেম্বরে হতো বিপিএল। এবার হচ্ছে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রথমে দুই দফা এগিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরেই করার পরিকল্পনা করা হলেও, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে আগামীকাল (শনিবার) মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পর্দা উঠতে যাচ্ছে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে। সাত দলের অংশগ্রহণ ও বিদেশী তারকাদের উপস্থিতিতে এবারের বিপিএল হবে আরও বেশি আকর্ষনীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ- এমনটাই ধারণা সকলের।
টুর্নামেন্টের প্রথম দিনে মাঠে গড়াবে দুইটি ম্যাচ। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে বেলা সাড়ে বারোটায় উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামবে চিটাগাং ভাইকিংস। অন্যদিকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে লড়বে রাজশাহী কিংস।
চলুন একনজরে দেখে নেয়া যাক বিপিএলের উদ্বোধনী দিনে কাদের উপর থাকবে স্পটলাইট
মাশরাফি-গেইলের বিপক্ষে মুশফিক-মোসাদ্দেকের লড়াই
বিপিএলের এবারের আসরের উদ্বোধনী ম্যাচের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হতে পারে ক্রিস গেইলের চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং। রংপুরের দলীয় সুত্রে জানা গিয়েছে গেইল শনিবার সকালেও যদি পৌঁছতে পারেন ঢাকায়, তাহলে বেলা বারোটায় ঠিকই নেমে যাবেন খেলতে। আর গেইল নেমে যদি প্রথম ম্যাচেই দেখাতে পারেন নিজের সহজাত ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী, তাহলে উদ্বোধনী দিন থেকেই আলো ছড়াতে শুরু করবে বিপিএল।
গেইল ছাড়াও রংপুরের উদ্বোধনী ম্যাচে চোখ থাকবে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার দিকেও। তিনি নিজে যতোই বলুন না কেন সংসদ সদস্য হওয়ার সাথে ক্রিকেট মাঠের কোনো সম্পর্ক নেই, বাস্তবতা হলো খেলার মাঠেও তাকে বারংবার মোকাবেলা করতে হবে এমপি মাশরাফি ও ক্রিকেটার মাশরাফির দ্বন্দ্বে। বিশেষ করে গ্যালারি থেকে স্লোগানও শোনা যেতে পারে এমপি হাঁক ধরে। সেসবকে পাত্তা না দিয়ে মাশরাফি নিজের সেরা খেলা উপহার দিতে পারলে তিনি নিজে যেমন নির্ভার হবেন, তেমনি স্বস্তি পাবে তার দলও রংপুরও।
অন্যদিকে চিটাগাং ভাইকিংসের দলে এবার নেই তেমন কোনো বড় তারকা। বিদেশী বড় নামের চেয়ে পারফরমারই বেশি দলে ভিড়িয়েছে তারা। দলের সবচেয়ে বড় তারকার কথা জিজ্ঞেস করলে চোখ বন্ধ করেই উঠে আসবে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের নাম। ২০১৮ সালে দারুণ ফর্মে ছিলেন মুশফিক। এছাড়া বিপিএলেও বরাবরই সেরা পারফর্মারদের একজন তিনি। টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট রংপুরকে হারানোর জন্য মুশফিকের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অধিনায়কত্বের দিকেও তাকিয়ে থাকবে ভাইকিংস কর্তৃপক্ষ।
চিটাগাং ভাইকিংসে সিকান্দার রাজা কিংবা নাজিবুল্লাহ জাদরানদের মতো বিদেশি অলরাউন্ডাররা থাকলেও, দলের গুরু দায়িত্বটা নিতে হবে স্থানীয় অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেই। মিডল অর্ডারে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের সাথে কার্যকরী ডানহাতি অফস্পিনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভালো একটি প্যাকেজই বলা চলে সৈকতকে। কিন্তু গত কয়েক মৌসুমে ঢাকার মতো হেভিওয়েট দলে খেলায় সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। তার সামনে এবার সুযোগ নিজের পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দলের জয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখার।
সাকিব-রাসেলের বিপক্ষে মোস্তাফিজ-সৌম্যের লড়াই
উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী ঢাকা ডায়নামাইটস খেলবে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে। ঢাকার হয়ে মাঠ মাতাতে রয়েছেন বড় বড় তারকারা। এদের ভিড়েও আলাদা করে নজর রাখতে হবে দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ওপরে। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডার শুধু বিপিএল নয়, সমাদৃত হন আইপিএল কিংবা বিগ ব্যাশেও। বিপিএলের প্রথম দুই আসরে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ও তিনি। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও নির্বাচিত হয়েছেন সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে। শুরুর ম্যাচ থেকে ঢাকা জয়ের পথে থাকতে চাইলে জ্বলে উঠতে হবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে।
দেশী তারকাদের সাথে বিদেশী তারকাদের মিশেলে অসাধারণ এক দল গঠন করেছে ঢাকা। বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে যদি ঢাকায় থাকেন সাকিব, তবে ডানহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে রয়েছেন ক্যারিবীয়ান মারকুটে ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেল। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড রয়েছে রাসেলের দখলে। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে আন্দ্রে রাসেল নামটিই যেনো এক মূর্তিমান আতঙ্ক। টুর্নামেন্টের শুরুর দিনেই রাসেল নিজের খুনে মেজাজে আবির্ভূত হলে উপকৃত হবে ঢাকা, জৌলুশ বাড়বে বিপিএলের।
অন্যদিকে ঢাকার প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিংসের দলের শক্তি মূলত দেশি ক্রিকেটাররাই। দলের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের নাম। টুর্নামেন্টের এ তরুণ যুবার মূল ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাঝে কিছুদিন অফফর্মে থাকলেও অবশেষে নিজের ছন্দে ফিরেছেন সাতক্ষীরার এ তরুণ। জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দেখিয়েছেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। বিপিএলেও ভালো ফল করতে তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে রাজশাহী কিংস।
ব্যাটিংয়ে যদি রাজশাহীর বিজ্ঞাপন হন সৌম্য, তবে বোলিংয়ে নিঃসন্দেহে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। কাঁধের ইনজুরিতে আগের গতিতে বোলিং করতে না পারলেও নিজের সামর্থ্যের পুরোটা মাঠে ঢেলে দেয়ার চেষ্টাই থাকে মোস্তাফিজের। সদ্য বিদায়ী বছর ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নিজের সেরা ফর্মের ঝলক দেখিয়েছেন তিনি। নির্বাচিত হয়েছেন আইসিসি, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি একাদশেও। বিপিএলের প্রথম দিন থেকেই জ্বলে উঠবেন মোস্তাফিজ, এমনটা প্রত্যাশা থাকবে রাজশাহী মালিক-সমর্থকদের।
এসএএস/এমকেএইচ