ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

সাকিব-মাশরাফিদের যে ১১টি রেকর্ড মনে রাখতে হবে

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ | প্রকাশিত: ০৭:২৯ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোলে চাপা পড়েছে দেশের ক্রিকেটের অন্যতম আকর্ষণ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ- বিপিএল। আর মাত্র পাঁচ দিন পর মাঠে গড়াবে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের প্রথম ম্যাচ।

কিন্তু নির্বাচনী আমেজের মাঝে অনেকটাই ভাটা পড়েছে বিপিএলের আগমনী ও ২০১৮ সালের বিদায়ী বার্তায়। নীরবে নিভৃতেই বিদায় নিচ্ছে ২০১৮ সাল, আগমন ঘটছে নতুন বছর ২০১৯ এর। ক্রিকেটীয় বিচারে ২০১৯ সালটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কেননা ২০১৫ সালের পর থেকে দারুণ খেলার ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ, সেটি বজায় রেখে সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় নামতে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে। এ পরীক্ষায় বাংলাদেশের পথের পাথেয় বা অনুপ্রেরণা হতে পারে ২০১৮ সালটি।

কারণ বিদায়ী বছর ২০১৮’তেই নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সবমিলিয়ে ৪৪ ম্যাচ খেলে ২১টিতে জিতেছে টাইগাররা, গড়েছে দারুণ কিছু রেকর্ড, সমর্থকদের উপহার দিয়েছে উপভোগ কিছু মুহূর্ত।

এবার দেখে নেয়া যাক ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তেমনই ১১টি রেকর্ড

টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ

চলতি বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হওয়া নিদাহাস ট্রফিতে রানারআপ হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সে টুর্নামেন্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধীন দল। শ্রীলঙ্কার করা ২১৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে ২১৫ রান করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। মাত্র ৩৫ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম।

মুশফিকের রহীমের দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি

নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ২১৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। সে ডাবল সেঞ্চুরিটি ছিলো তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। এ ইনিংসের মধ্য দিয়ে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন ৩১ বছর বয়সী মুশফিক।

Mushfiq

তরুণ নাঈমের বিশ্বরেকর্ড

মুশফিকের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির ঠিক পরের টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের ঘরের মাঠ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অভিষেক ঘটে ১৮ বছর বয়সী ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হাসানের। অভিষেকেই খবরের পাতায় বড় অক্ষরে নিজের নাম তুলে ফেলেন নাঈম। মাত্র ১৭ বছর ৩৫৫ বয়সে ৫ উইকেট নেয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। ভেঙে দেন প্যাট কামিনসের ১৮ বছর ১৯৩ দিন বয়সে করা রেকর্ডটি।

প্রথমবারের মতো ফলোঅন করানোর স্বাদ

নাঈম হাসান যে ম্যাচে বিশ্বরেকর্ড গড়েন, ঠিক তার পরের ম্যাচেই দল হিসেবে রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। নিজেদের ১১২ টেস্টের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দলকে ফলোঅন করায় সাকিব আল হাসানের দল। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করানোর পর ক্যারিবীয়দের অলআউট করে দেয় মাত্র ১১১ রানে। টাইগারদের লিড দাঁড়ায় ৩৯৭ রানের। তবে আবার নিজেরা ব্যাটিংয়ে না নেমে ক্যারিবীয়দের ফলোঅনে পাঠান সাকিব।

সবচেয়ে বড় জয়

সেই একই ম্যাচে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ দল। প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রানের লিড পাওয়ার ক্যারিবীয়দের ফলোঅন করান সাকিব। পরে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও ২১৩ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা। স্বাগতিক বাংলাদেশ পায় ইনিংস ও ১৮৪ রানের ব্যবধানের জয়। এর আগে ২০০৫ সালে নিজেদের প্রথম টেস্টে পাওয়া ২২৬ রানের জয়টিই ছিলো টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।

বিশ ওভারের ক্রিকেটে সাকিবের বিশ্বরেকর্ড

টেস্ট সিরিজ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। সে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ২০ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। যা ছিলো স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার চতুর্থ পাঁচ উইকেট শিকার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এর চেয়ে বেশি পাঁচ উইকেট নেই আর কোনো বোলারের। শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড ওয়াইজও বিশ ওভারের ক্রিকেটে সমান ৪ বার করে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন।

Miraz

চার হাজারী ঘরে তামিমের পদার্পন

জুলাই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন চট্টগ্রামের ছেলে তামিম ইকবাল। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে নর্থ সাউন্ড টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে এ রেকর্ড অর্জন করেন তিনি। পরে ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ৪০০০ রানের রেকর্ডে পা রাখেন মুশফিকুর রহীমও।

তামিমের উচ্চতায় মুমিনুল

নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি হাঁকান কক্সবাজারের ছেলে মুমিনুল হক সৌরভ। ১২০ রানের সে ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যায় তামিমকে ছুঁয়ে ফেলেন মুমিনুল। অষ্টম সেঞ্চুরি করতে তামিমের যেখানে খেলতে হয়েছিল ৪৩টি ম্যাচ, সেখানে মাত্র ৩২ ম্যাচেই সমান সেঞ্চুরি করে ফেলেন মুমিনুল।

সব্যসাচী মিরাজের অনন্য রেকর্ড

সেপ্টেম্বরে দুবাইতে হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে অনন্য এক রেকর্ড গড়েন মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিং- দুটোতেই ইনিংস সূচনা করার বিরল রেকর্ড স্থাপন করেন এ তরুণ ক্রিকেটার। প্রথমে লিটন দাসের সাথে ইনিংস সূচনা করতে নেমে ৫৯ বলে কার্যকরী ৩২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তবে পরে বল হাতে ইনিংস সূচনা করলেও ৪ ওভারের বেশি হাত ঘোরানোর সুযোগ পাননি মিরাজ।

এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেট- রাজত্ব সাকিবের

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে সবসময়ই সৌভাগ্যের হিসেবে বলে থাকেন সাকিব আল হাসান। এ মাঠেই গড়েছেন সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক উইকেট নেয়ার বিশ্বরেকর্ড। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে শেরে বাংলায় সাকিবের বর্তমান উইকেটসংখ্যা ১৯৯। আর এক উইকেট পেলেই প্রথম বোলার হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো মাঠে ২০০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড অর্জন করবেন সাকিব। তার আগে এ রেকর্ডটি ছিলো মুত্তিয়াহ মুরালিধরনের দখলে। কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে তার উইকেট সংখ্যা ১৮৮।

Mostafiz

ব্যাটিংয়ে মুশফিকের রেকর্ড

২০১৮ সালে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিন ম্যাচে মাত্র ৭ রান (৫+১+১) করলেও বছরজুড়ে মুশফিকের চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি বাংলাদেশের অন্য কোনো ব্যাটসম্যান। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রেকর্ডও গড়েছেন মুশফিক।

২০১০ সালে তিন ফরম্যাটি মিলে ১৬৪৬ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল। এটিই ছিলো এক বছরে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তামিমের এ রেকর্ড ভেঙে চলতি বছর ১৬৫৭ রান করেছেন মুশফিক। ৪৩ ম্যাচের ৫০ ইনিংসে এই রান করার পথে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। এছাড়া বছরজুড়ে সবমিলিয়ে ২টি সেঞ্চুরি ও ৯টি হাফসেঞ্চুরি এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে।

এসএএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন