পেসাররা ‘হিটিং জোনে’ বল করেই মার খেয়েছে : সারোয়ার ইমরান
ব্যাটসম্যানরা রান পাননি বা করেননি, তাই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম আর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ক্যারিবীয়দের সাথে পারেনি টাইগাররা। এটা যে একদমই অমুলক ভাবনা, তাও নয়। স্কোর কার্ড দেখলে তাই মনে হবে ।
স্কোর কার্ড পরিষ্কার জানান দিচ্ছে, শুধু ২০ ডিসেম্বর শেরে বাংলায় দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং ভাল হয়েছে। লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর সৌম্য সরকার রান করেছেন। কেবল সে ম্যাচেই জিতেছে টাইগাররা। আর যে দুই ম্যাচে ব্যাটিং ক্লিক করেনি, সে দুই ম্যাচেই হেরেছে সাকিবের দল।
কিন্তু কঠিন সত্য হলো, গল্পের পিছনেও যেমন গল্প থাকে, কাহিনীর অন্তরালেও থাকে ভিন্ন কাহিনী- তেমনি টাইগারদের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের হারের পিছনেও ব্যাটিং ব্যর্থতা ছাড়া আরও একটি কারণ আছে। তা হলো পেস বোলিং ব্যর্থতা।
পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, তিন ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজে পেসাররা চরম ব্যর্থ। তিন পেসার আবু হায়দার রনি, সাইফউদ্দীন ও মোস্তাফিজ কিছুই করতে পারেননি। তাদের অনুজ্জ্বল, অকার্যকর পারফরম্যান্স টাইগারদের হারের পিছনে বড় কারণ।
আসুন এক নজরে তাদের পারফরম্যান্স দেখে নেই। এর মধ্যে বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনি আর সাইফউদ্দীন একদমই সুবিধা করতে পারেননি। তাদের দুজনার পেস বোলিংয়ে ইচ্ছেমত চার ও ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে রান করেছে ক্যারিবীয়রা।
আবু হায়দার রনি তিন ম্যাচে ৭ ওভারে (প্রথম ম্যাচে ১ ওভারে ১৫ রান, দ্বিতীয় খেলায় ৪ ওভারে ১/৩৩ ও তৃতীয় ম্যাচে দুই ওভারে ৩৯) দিয়েছেন ৮৭ রান। সাইফউদ্দীনের অবস্থা আরও খারাপ। এই থার্ড সিমারও রনির মত তিন ম্যাচে পুরো বোলিং কোটা পূরণ করতে পারেননি। তিন ম্যাচে তার করা ৯ ওভারে (প্রথম খেলায় ১ ওভারে ১৩, দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ ওভারে ৪২ ও তৃতীয় খেলায় ৪ ওভারে ৩৬) রান উঠেছে ৯১।
আর কাটার মাস্টার মোস্তাফিজও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তার পক্ষেও ক্যারিবীয়দের উত্তাল উইলোবাজি থামানো সম্ভব হয়নি। দলের এক নম্বর পেসার হয়েও তিন ম্যাচের সবকটায় পুরো চার ওভার পূরণ করতে পারেননি। তিন খেলায় ৯ ওভারে ৫ উইকেট পেলেও (প্রথম ম্যাচে এক ওভারে ০/১৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ ওভারে ২/৫০ ও তৃতীয় ম্যাচে ৪ ওভারে ৩/৩৩) মোস্তাফিজ রান দিয়েছেন প্রচুর; ৯৮।
পেসারদের এই দৈন্য দশাই আসলে ক্যারিবীয়দের সাফল্যকে ত্বরান্বিত করেছে। তিন ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং পোস্টমর্টেম করলে পরিষ্কার দেখা যাবে, পেসাররা সে অর্থে কিছুই করতে পারেননি। প্রতি খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা যত রান করেছেন তার বড় অংশ এসেছে তিন পেসারের বলে।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের করা ১২৯ রানের পিছু নিয়ে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ যে ১০.৫ ওভারে ১৩০ রান করেছে, তার ৪৩ রান এসেছে তিন পেসার আবু হায়দার রনি , মোস্তাফিজ ও সাইফউদ্দীনের করা তিন ওভারে। যে ম্যাচে বাংলাদেশ ২১১ রানের বিশাল স্কোর সাজিয়ে জিতেছে, সে ম্যাচেও সাকিব (৪ ওভারে ৫/২০) বল হাতে জ্বলে না উঠলে জয়ের দেখা মিলতো কিনা সন্দেহ।
কারন ঐ খেলাতে সাকিব ওভার পিছু মাত্র ৫ রান করে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের অর্ধেকটার পতন ঘটালেও তিন পেসার মোস্তাফিজ, রনি ও সাইফউদ্দীনের ১২ ওভারে ক্যারিবীয়রা ওভার পিছু ১০ রানের বেশী তুলে করেছেন ১২৫ রান। শেষ ম্যাচেও একই অবস্থা। সে ম্যাচেও মোস্তাফিজ ( ৪ ওভারে ৩/৩৩ ), রনি (২ ওভারে ০/৩৯) আর সাইফউদ্দীন (৪ ওভারে ০/৩৬) মিলে ১০ ওভারে দিয়ে বসেন ১০৮ রান।
কাজেই ওপরের পরিসংখ্যান জানান দিলো যে, তিন ম্যাচেই বাংলাদেশের পেসাররা গড়পড়তা ওভার পিছু ৯.৮৫ রান করে দিয়েছেন। কেন পেসারদের এত খারাপ অবস্থা? উইকেট শতভাগ ব্যাটিং উপযোগী না হোক, স্পোর্টিং পিচেও বাংলাদেশের পেসাররা একদমই ভাল বল করতে পারেননি।
কেন পারেননি? জাগো নিউজের সাথে আলাপে সে প্রশ্নর জবাব দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ সারোয়ার ইমরান। তার ব্যাখ্যা, ‘আসলে পেসাররা নতুন বলে একদমই জায়গামত বল করতে পারেনি। পেসারদের লেন্থ খুব ভাল ছিল না। তারা খুব বেশি ‘হিটিং জোনে’ বল করেছে। এমন এক জায়গায় বল ফেলেছে, যে জায়গায় বল পড়লে শটস খেলা যায়। মারাও সম্ভব। সে কারণেই মারও খেয়েছে বেশি। এছাড়া পেসারদের বলে বৈচিত্র্যও ছিল কম। তারা ডেথ ওভারে সেভাবে ইয়র্কার ছুঁড়ে রানের গতিও কমিয়ে রাখতে পারেনি।’
ইমরান আরও যোগ করেন, ‘উইকেট থেকে ১৬- ২২ ফুট দূরে বল ফেলতে পারলে ব্যাটসম্যানের ইচ্ছেমত আক্রমণাত্মক শটস খেলা কঠিন। আমাদের বোলাররা সেই জায়গায় বল ফেলতে পারেনি। আর ইয়র্কার লেন্থে বল করার দক্ষতাও ছিল খুব কম। এটা বাড়াতেই হবে। নতুন বলে ভাল জায়গায় বোলিং আর ডেথ ওভারে ইয়র্কার ও বৈচিত্র্য বাড়ানো খুব জরুরী।’
এআরবি/এসএএস/এমএমআর/এমএস