যেখানে কোহলি-জয়সুরিয়ার উচ্চতায় সাকিব
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা জিততে পারলে সোনায় মোড়ানো থাকতো ২০১৮ সালের পুরোটা। বলাই হয়ে থাকে, শেষ ভালো যার সব ভালো তার। দুই বার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে না পারা কিংবা এশিয়া কাপের মত টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেও সেই একই হতাশা নিয়ে দেশে ফিরে আসার পরও ২০১৮ সালটা সোনালি সাফল্যে মোড়ানো থাকতো, যদি ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটাও জয় হতো।
কিন্তু সেটা আর হয়নি। ক্যারিবীয় হিটম্যানদের উইলো তাণ্ডব বাংলাদেশকে প্রথমবারেরমত কোনো পূর্ণাঙ্গ সিরিজে প্রথমবারেরমত ট্রিপল জিততে দিলো না। টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজটা- অর্থ্যাৎ কোনো প্রতিষ্ঠিত শক্তিকে একই সিরিজের তিন ফরম্যাটেই হারানোর যে দারুণ হাতছানি ছিল, সেটা আর হলো না।
শেষ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের কাছে ৫০ রানের বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছিল টাইগারদের। হারলেও সিরিজ সেরা হয়েছেন কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দল সিরিজ জিততে না পারার বেদনা সাকিবের কাছে কোনোভাবেই সিরিজ সেরা হওয়া দিয়ে স্বান্তনায় রূপ নিতে পারে না। যে কারণে, শনিবার রাতে সিরিজ সেরার পুরস্কার নিয়ে কোনোভাবেই মুখে হাসি ফোটাতে পারেননি সাকিব। হনহন করে হেঁটে গেছেন ড্রেসিংরূমের দিকে। এমনকি সংবাদ সম্মেলনে পর্যন্ত আসেননি।
তবে ওই সিরিজ সেরার পুরস্কার নিয়ে সাকিব আল হাসান দারুণ এক উচ্চতা স্পর্শ করে ফেললেন। ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ও বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার জয়সুরিয়ার মাইলফলক স্পর্শ করে ফেললেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের সেরা হওয়ার মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারে এ নিয়ে মোট ১৩বার সিরিজ সেরা হলেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মান বিচারে সাকিব সিরিজ সেরা হওয়ার তালিকায় রয়েছেন ৪র্থ স্থানে। একইসঙ্গে নাম লিখিয়েছেন বিরাট কোহলি এবং জয়সুরিয়ার সঙ্গে। ভারত এবং শ্রীলঙ্কার এই দুই গ্রেট ক্রিকেটারও ক্যারিয়ারে ১৩ বার করে সিরিজ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
জয়সুরিয়ার ক্যারিয়ার অনেক আগেই শেষ। তার এই সিরিজ সেরা হওয়ার সংখ্যা বাড়ার সুযোগ নেই। বিরাট কোহলির ক্যারিয়ার চলমান। বলা যায় মধ্য গগণে রয়েছে। তার আরও অনেকবার সিরিজ সেরা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একই অবস্থা সাকিবেরও। সিরিজ সেরা হওয়ার সুযোগ তারও রয়েছে।
বলা যায়, এবার সিরিজ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই শুরু হলো সাকিব আল হাসান এবং বিরাট কোহলির মধ্যে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৯বার ম্যাচ সেরা হওয়ার গৌরবটা দখলে রয়েছেন ভারতের লিটল মাস্টার, ক্রিকেট জিনিয়াস শচীন টেন্ডুলকার। তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র ১টি। ১০ রান করেছিলেন সেই ম্যাচে। যে কারণে ম্যাচ সেরা হতে পারেননি। তবুও, শীর্ষস্থানটি দখল করতে তার সমস্যা হয়নি। বাকি ওয়ানডে এবং টেস্ট ফরম্যাট দিয়েই তিনি রয়েছে শীর্ষে। তিনি সর্বমোট ম্যাচ খেলেছেন ৬৬৪টি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৭৬ বার।
১৪ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিস। প্রোটিয়া এই ক্রিকেটার সব ফরম্যাট মিলিয়ে ম্যাচ খেলেছেন ৫১৯টি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৫৭ বার।
৫৫ টেস্ট খেলে সাকিব সিরিজ সেরা হয়েছেন ৫ বার। এ ক্ষেত্রে তিনি স্পর্শ করেছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ভারতীয় কিংবদন্তি টেস্ট খেলেছেন ২০০টি। টেস্টে সর্বোচ্চ ১১বার সিরিজ সেরা হয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। তার এই রেকর্ড আদৌ কেউ কখনও ভাঙতে পারবে কি না সন্দেহ।
টেস্টে ৫বার করে সিরিজ সেরা হয়েছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা, ওয়াকার ইউনিস, ডেল স্টেইন, রঙ্গনা হেরাথ, জেমস অ্যান্ডারসনের মতো বোরিং গ্রেটরাও। এছাড়া ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৫বার করে সিরিজ সেরা হয়েছেন গ্রাহাম গুচ, মাইকেল ক্লার্ক, বীরেন্দর শেবাগ, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। টেস্টে সাকিব যদি আরেকবার সিরিজ সেরা হন, তাহলে তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন কার্টলি অ্যামব্রোস, ম্যালকম মার্শাল, স্টিভ ওয়াহ্র কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের।
ওয়ানডেতেও ৫বার সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব। ধোনি-ক্যালিসও ৫বার করে ওয়ানডেতে সিরিজ সেরা হয়েছেন। যদিও এই ফরম্যাটে ১৪বার সিরিজ সেরা হয়ে সবার ওপরে রয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। টি-টোয়েন্টিতে সাকিব ৩ বার হয়েছেন সিরিজ সেরা। ৪ বার সিরিজ সেরা হয়ে সবার ওপরে বিরাট কোহলি।
খেলোয়াড় |
ম্যাচ |
ম্যাচ সেরা |
সিরিজ সেরা |
শচীন টেন্ডুলকার |
৬৬৪ |
৭৬ |
১৯ |
জ্যাক ক্যালিস |
৫১৯ |
৫৭ |
১৪ |
সনাৎ জয়াসুরিয়া |
৫৮৬ |
৫৮ |
১৩ |
বিরাট কোহলি |
৩৫৬ |
৪৮ |
১৩ |
সাকিব আল হাসান |
৩২২ |
২৮ |
১৩ |
আইএইচএস/জেআইএম