বিধ্বংসী সাকিবে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ
২১২ রানের বিশাল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য দেখার পরই যে কোনো দলের ঘাবড়ে যাবার কথা। কিন্তু দলটির নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বসেরা। এ কারণে, ২১২ রান কোনো নিরাপদ আশ্রয় নয় বাংলাদেশের জন্য। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কিন্তু ছেড়ে কথা বলেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। সাকিব আল হাসানের বিধ্বংসী বোলিং সত্ত্বেও ১৭৫রান পর্যন্ত তুলে ফেলেছিল তারা। সাকিব একাই নেন ৫ উইকেট।
শেষ পর্যন্ত বোলারদের নৈপুণ্যে ৩৬ রানে ক্যারিবীয়দের হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরে আসলো বাংলাদেশ। সে সঙ্গে টেস্ট এবং ওয়ানডের পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটিও জয়ের সম্ভাবনা ধরে রাখলো সাকিব আল হাসানের দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাত্র ১২৯ রানে অলআউট হওয়ার পর বাংলাদেশের বোলারদের কোনো পাত্তাই দেয়নি সাই হোপ, নিকোলাস পুরানরা। দ্রুতগতির হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাই হোপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০.৫ ওভারেই ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
সিরিজে ফেরার জন্য ঢাকায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প খোলা ছিল না বাংলাদেশের সামনে। নিজেদের প্রিয় ভেন্যু, হোম অব ক্রিকেটে ফিরে আসার পর ঠিকই জ্বলে উঠলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান এবং বোলাররা। টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর লিটন দাস আর সৌম্য সরকারের ঝড়ে বিশাল স্কোরের ইঙ্গিত মেলে।
এরপর সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টর্নেডো গতির ব্যাটিং বাংলাদেশকে ২১১ রানের বিশাল স্কোরের চূড়ায় পৌঁছে দেয়। শেষ ৫ ওভারে সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ মিলে নেন ৭১ রান। শেষ দুই ওভারে নেন মাত্র ১৬ রান। না হয়, এই স্কোর যে কোথায় গিয়ে থামতো, তা বলা মুস্কিল।
মাত্র ৪২ বলে ৯১ রানের বিশাল জুটি গড়ে তোলেন সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ। তাদের এই ঝড়ো জুটির পরই ২১১ রানের চূড়ায় উঠে যায় টাইগাররা। আর ৫টি রান করতে পারলে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ডও গড়ে ফেলতে পারতো টাইগাররা।
সে যাই হোক, জয়ের জন্য ২১২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রভম্যান পাওয়েল ৩৪ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেললেও পরাজয় ঠেকাতে পারেননি। ১৯.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান একাই নেন ৫ উইকেট।
৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৬১। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৭০। এ টুকু দেখেই কেউ ম্যাচের প্রকৃত অবস্থা বিচার করে ফেলবেন না। কারণ, ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছিল ১টি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেট হারিয়েছে ৩টি। বাংলাদেশের বোলারদের একের পর এক ফাঁদে পড়ে উইকেট হারাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সে লক্ষ্যে শুরু থেকেই বোলিং করে যাচ্ছেন বোলাররা। শুরুতেই আবু হায়দার রনি ব্রে থ্রু এনে দিয়েছিলেন। তবে ব্যাটসম্যান রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যান। কিন্তু তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই সেই রনির বলেই এভিন লুইস ক্যাচ তুলে দেন আকাশে। সেটি তালুবন্দী করেন লিটন দাস। ৬ বলে ১ রান করেই বিদায় নেন লুইস।
এভিন লুইস আউট হওয়ার পর নিকোলাস পুরান আর সাই হোপ মিলে চেষ্টা করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেনে তোলার। দু’জন ৪১ রানের জুটি গড়ে তোলেন। তবে সাকিব আল হাসান বোলিংয়ে এসেই এই জুটিতে ভাঙন ধরান। ৬ বলে ১৪ রান করা নিকোলাস পুরান ক্যাচ তুলে দিলে সেটা বাউন্ডারি লাইনের কাছে তালুবন্দী করেন তামিম ইকবাল।
সাই হোপ এই সফরে বাংলাদেশের বোলারদের বেশ ভোগাচ্ছিলেন। আজও ভোগানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই হুমকি-ধামকি কাজে লাগেনি। ১৯ বলে ৩৬ রান করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। ক্যাচ ধরেন লিটন দাস।
৬২ রানে তিন উইকেট পড়ার পর হেটমায়ার আর রভম্যান পাওয়েল মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। ৩৬ রানের জুটি গড়ার পর তাদের বিচ্ছিন্ন করেন সাকিব আল হাসান। এর মাঝে মিরাজের বলে আউট হয়েছিলেন হেটমায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁছে যান তিনি। এরপর সাকিব আল হাসানের বলে ১৯ রান করে বিদায় নেন হেটমায়ার।
ড্যারেন ব্র্যাভো মাঠে নেমে দাঁড়াতেই পারেননি। সাকিবের বলেই মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মাত্র ২ রান করে। অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে উইকেটে দাঁড়াতেই দিলেন না সাকিব। ৮ রান করা ব্র্যাথয়েটকে বিভ্রান্ত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। অনেক সময় পেয়েও তিনি উইকেটের বাইরে পা রেখে স্ট্যাম্পিং হয়ে যান। ৩ বলে ৮ রান করেছিলেন তিনি।
ফ্যাবিয়েন অ্যালেন মাঠে নেমেই বোল্ড হয়ে গেলেন। কোনো রানই করতে পারেননি ৩ বল মোকাবেলা করে। রভম্যান পাওয়েল একাই খেলার চেষ্টা করেছিলেন। ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন তিনি। কিন্তু এরপর আর এক বলও টিকতে পারেননি। মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ তুলে দেন। সেই ক্যাচ ধরেন তামিম ইকবাল।
কিমো পল শেষ দিকে কিছুটা বিড়ম্বনা তৈরি করেছিল। কিন্তু ১৬ বলে ২৯ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে সেই মোস্তফিজই ফিরিয়ে দেন। আরিফুল হকের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে। মাহমুদউল্লাহর বলে ওশান থমাস বোল্ড হয়ে গেলে জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।
সাকিব আল হাসান ৫ উইকেট ছাড়াও ২ উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১টি করে উইকেট নেন আবু হায়দার রনি, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আইএইচএস/জেআইএম