শেরে বাংলার ‘টিপিক্যাল’ উইকেটই পারে টাইগারদের মুখে হাসি ফোটাতে
টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি- তিন ফরম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। দেখছিলো বলা বোধহয় ঠিক হলো না, এখনো তিন ফরম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের কথাই ভাবছে টাইগার সমর্থকরা।
কিন্তু সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেলডন কটরেলের ক্ষুরধার বোলিং আর সাই হোপ, এভিন লুইস, কেমো পল ও নিকোলাস পুরানের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে উল্টো নাকাল সাকিব আল হাসানের দল। তাই জেগেছে সংশয়, উঠছে প্রশ্ন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারাতে পারবে সাকিব বাহিনী?
পারবে না তাই-বা কি করে বলা? এই তো তিন মাস আগে ফ্লোরিডায় এর চেয়েও শক্তিশালী ক্যারিবীয় দলকে হারানোর স্মৃতি রয়েছে সাকিবের দলের। এ মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ভয়ঙ্কর অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল খেলার পরেও ফ্লোরিডায় টাইগারদের টিম পারফরম্যান্সের কাছে শেষ দুই ম্যাচ হেরেছিল ক্যারিবীয়রা।
এবার আন্দ্রে রাসেলও নেই। তাই সাকিবের দল ব্রাথওয়েট বাহিনীর সাথে পেরে উঠবে না, তাই-বা কি করে বলা? খেলাটা ঘরের মাঠে। উইকেট ও কন্ডিশন নিজেদের উপযোগী থাকলেই টাইগারদের গর্জে ওঠা সহজ হয়। কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন করবেন কেনো সিলেট কি বাংলাদেশের বাইরে? সিলেটে তাহলে অমন চরম পর্যুদস্ত হওয়া কেনো?
এই কেনোর উত্তর খুঁজতে গেলেই বেরিয়ে আসবে প্রথম ম্যাচের সত্যিকার ‘পোস্টমর্টেম’। খালি চোখে সেটা ছিলো কটরেলের দুর্দান্ত পেস এবং ক্যারিবীয় বোলারদের বুদ্ধিদীপ্ত শর্ট বোলিংয়ের সাথে সাই হোপ আর কেমো পলদের উত্তাল উইলোবাজির প্রদর্শনী। এর সাথে খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে বারবার টাইগারদের পুল শট খেলাও পরাজয়ের কারণ বলেই ভাবা হচ্ছে।
সেটা অবশ্য একটা কারণ। কিন্তু এর সবগুলোই হচ্ছে অনুষঙ্গ। প্রথম ম্যাচ হারার ব্যবচ্ছেদ করতে গেলে নিগুড়ে গিয়ে জানা যাবে আসলে স্বাগতিক বাংলাদেশ হেরেছে কন্ডিশনের কাছে। টাইগাররা দেশের মাটিতে যে ধরণের উইকেটে স্বচ্ছন্দে খেলে, বোলাররা বিশেষ করে স্পিনাররা প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখতে পারেন এবং ব্যাটসম্যানরাও সাবলীল ব্যাটিং করেন- ১৭ ডিসেম্বর সিলেটের উইকেট ঠিক তেমন ছিলো না।
উইকেটের গতি ও বাউন্স দুই-ই তুলনামূলক বেশি ছিল। বল ব্যাটে এসেছে বেশ ভালোভাবেই। নিচু হয়নি তেমন, বাউন্সের ওঠা-নামাও ছিলো স্বাভাবিক। সব মিলে স্ট্রোক খেলার আদর্শ পরিবেশ। সেই পরিবেশটা ষোলো আনা কাজে লাগিয়েছেন সাই হোপরা। আর যেহেতু বাউন্সটাও একটু বেশি ছিলো তা দেখে এবং বুঝে কটরেল এবং থমাসরাও খাটো লেন্থ ও থ্রি কোয়ার্টার লেন্থের মাঝামাঝি জায়গা থেকে মাঝেমধ্যে একটি-দুইটি বল তোলার চেষ্টা করেছেন। যেটা শেরে বাংলার উইকেটে ততটা সম্ভব হয় না।
ক্যারিবীয়দের দ্রুতগতিতে আসা সেই খাটো লেন্থের ডেলিভারীগুলোকে পুল খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন তামিম, লিটন, সৌম্য ও সাকিবের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানরা। যেহেতু উইকেটের গতিও ভালো ছিলো তাই একটু বেশি উচ্চতায় আসা দ্রুতগতির ওই শর্ট বলগুলোকে সপাটে হাঁকাতে গিয়ে ঘটেছে বিপত্তি। যেটা কালকের ম্যাচ শেষে ব্যাটিং উপদেষ্টা নেইল ম্যাকেঞ্জিও স্বীকার করেছেন।
এ প্রোটিয়া ব্যাটিং পরামর্শকের অনুভব বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ওই দ্রুতগতির শর্ট বলগুলোকে স্কয়ার লেগ ও তার পেছনে খেললে সমস্যা হতো না। কিন্তু তারা ‘ফোর্স’ করতে গিয়ে বা জোর খাটাতে গিয়ে মিড উইকেট ও লংঅনের মাঝামাঝি চালানোর চেষ্টা করেছেন। সে কারণেই তামিম, লিটন, সৌম্য ও সাকিবের পুল শটগুলোর টাইমিং ঠিক হয়নি।
এখন একটা বিষয় পরিষ্কার, ক্যারিবীয়দের হারাতে চাই শেরে বাংলার ‘টিপিক্যাল’ স্লো এন্ড লো উইকেট। যেখানে বল আসবে ঢিমেতালে এবং সর্বোচ্চ জোর খাটিয়ে শর্ট অব লেন্থ থেকে ওঠানোর চেষ্টা করলেও গড়পড়তা কোমড় থেকে পেট উচ্চতায় আসবে। এমন উইকেট দিলে ক্যারিবীয় বোলারদের জারিজুরি যাবে বন্ধ হয়ে আর ব্যাটসম্যানরাও ইচ্ছেমতো বিগ হিট করতে পারবেন না, টাইমিংয়ে সমস্যা হবে।
তেমন স্লো ট্র্যাক হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে বাংলাদেশের স্পিনার ও পেসারদের। যে মেহেদি হাসান মিরাজ টেস্ট এবং ওয়ানডেতে প্রায় একাই পার্থক্য গড়ে দিয়ে সিলেটে মার খেয়েছেন, সেই মিরাজ আবারও চেপে বসতে পারবেন ক্যারিবীয়দের ওপর। আর সাইফউদ্দীনের ১২০-১২৫ কিমির বলও তখন মারা হবে কঠিন। অন্যদিকে তামিম, লিটন, সৌম্য ও সাকিবরাও স্বস্তিতে ব্যাট চালাতে পারবেন।
নিশ্চয়ই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজম্যান্টও এ কঠিন সত্য হারে হারে টের পেয়েছে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধে স্লো ট্র্যাকের বিকল্প নাই। এখন ধরেই নেয়া যায় আগামী ২২ ও ২২ ডিসেম্বর হতে যাওয়া শেষ দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ সেই চিরচেনা শেরে বাংলার মন্থর গতি ও নিচু বাউন্সী উইকেটেই হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেই কাজে সবার আগে দক্ষতার ছাপ রাখতে হবে শেরে বাংলার হেড কিউরেটর গামিনী ডি সিলভাকেও।
গামিনী কি স্লো ট্র্যাক উপহার দিতে পারবেন সাকিব বাহিনীকে? যদি পারেন তাহলে টি-টোয়েন্টিতেও শেষ হাসি হাসতে পারবে টাইগাররা। না হয় টি-টোয়েন্টি সিরিজটা সাই হোপ, কটরেলরাই নিয়ে যাবেন?
এআরবি/এসএএস/জেআইএম