‘দ্বৈত প্রতিভা’ই এগিয়ে রাখে সৌম্যকে!
গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তামিম ইকবাল না থাকায় তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ ইনিংসের সূচনা করেছিলেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। সে সিরিজে অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ইমরুল, খুব ভালো না করলেও পাশমার্ক পেয়েছিলেন লিটনও। এর চেয়ে বড় কথা দল তিন ম্যাচেই জিতেছিল হেসেখেলে।
তবে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেয়েই অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসেন আরেক বাঁহাতি টপঅর্ডার সৌম্য সরকার। এর সাথে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছেন তামিম ইকবালও। যে কারণে ফর্মে থাকা চার ওপেনারকে বেশ বিপাকেই পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজম্যান্টকে।
কাকে রেখে কাকে খেলাবো ভাবতে ভাবতে রোববার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে একাদশে নেয়া হয় চার ওপেনারকেই। কিন্তু চারজনকে একাদশেই নিলেই কি? সবাইকে তো আর ওপেনিংয়ে পাঠানো যাবে না। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের কারণে সূচনায় নামেন তামিম-লিটন, তিনে পাঠানো হয় ইমরুলকে। তাহলে সৌম্য?
দেখা গেলো চতুর্থ উইকেট পতনের পর ছয় নম্বরে নামানো হয়েছে ২৫ বছর বয়সী সৌম্যকে। যদি ছয় অর্থাৎ মিডল অর্ডারেই খেলানো হয় তাহলে তো নিয়মিত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুনকেই নেয়া যেত একাদশে। ম্যাচ শেষে উঠে আসে এমন কথা, গুঞ্জন।
সংবাদ সম্মেলনে সেসব কথা বা প্রশ্নের জবাবে যথাযথ ব্যাখ্যা দেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি জানান তামিম-ইমরুলের সাথে লিটন থাকার পরেও সৌম্যকে দলে নেয়া যায় কারণ সাতক্ষীরার এ বাঁহাতি ড্যাশিং খেলতে পারেন যেকোনো পজিশনে। এছাড়া শিশিরের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেলে স্পিনারদের যদি বোলিং করতে সমস্যা হয় তাহলে সৌম্যের ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলিংও কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
মাশরাফি বলেন, ‘সৌম্যর আসলে ছয়ে-সাতে ব্যাট করার অভ্যাস আছে। ইমরুল সেদিক থেকে খুব কমই নিচে ব্যাট করেছে। সৌম্য করেছে, এশিয়া কাপ ফাইনালে সাতে খেলেছে। আবার ওর হাতে শটস খেলার সামর্থ্য আছে। পেস বল সামলাতে পারে, ফর্মেও আছে। লাস্ট তিন ম্যাচেই সেঞ্চুরি (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ও প্রস্তুতি ম্যাচে দুইটি) করেছে। যদিও দুইটা আনঅফিশিয়াল। মিঠুনও ভাল ফর্মে আছে। বাট ডিউ ফ্যাক্টরসহ সব কিছু চিন্তা করে সৌম্যই এগিয়ে থাকে। যদি স্পিনাররা স্ট্রাগল করে, সৌম্যর কাছ থেকে কিছু বাড়তি পাওয়া যায় কিনা এসব চিন্তা করে আসলে সৌম্যকে খেলানো। আর ও নিজেও তো ফর্মে আছে।’
এছাড়াও পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশি স্বচ্ছন্দ হওয়ায় এবং বিশ্বকাপ পরিকল্পনা মাথায় থাকায় সৌম্যকে মিডল অর্ডারে খেলানোর সিদ্ধান্ত বলে জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে সৌম্যকে ছয়ে খেলানোর কারণে বাদ পড়া মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মিঠুনের সামর্থ্যের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই দলের।
মাশরাফি বলেন, 'সৌম্য তো আসলে স্পিন থেকে পেস বেশি খেলতে পছন্দ করে। সাধারণত যেটা হয় ওপেনাররা স্পিনের চেয়ে পেস বলে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সৌম্য যে জায়গায় খেলছে, বিশ্বকাপে এই পজিশনে কিন্তু পেস বোলাররাই বোলিং করবে। এখানে কোনোভাবেই মিঠুনকে ছোট করার কোনো সুযোগ নেই। ও এশিয়া কাপে যে ইনিংসগুলো খেলেছে, ইভেন জিম্বাবুয়ের সাথেও ভালো খেলেছে। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এখানে একটা কম্বিনেশন দাঁড় করানো আছে। আমরা চারজন ওপেনার খেলানো হলেও ওদের দুয়েকজনের এই সামর্থ্য আছে যে অন্য জায়গায় ব্যাটিং করতে পারবে।'
এসময় ইনিংসের শুরুতে দুই স্পিনার দিয়ে বোলিং করানোর ব্যাখায় বাংলাদেশ অধিনায়ক জানান, ‘স্পিনাররা দুই পাশ থেকে শুরুর ব্যাপারটা আসলে প্রস্তুতি ম্যাচ যখন খেলছিলাম তখনই বুঝতে পারছিলাম যে ওরা পেস বলটাই চাচ্ছে। তাই টেস্ট ম্যাচে যেহেতু দুইপাশ থেকে স্পিন শুরু হয়েছে। আমরা চাচ্ছিলাম ওরা ওই ঘোরের ভেতরেই থাকুক। যে কারণে দুইটা স্পিনার দিয়ে শুরু করা। ওরা যেহেতু স্পিনে স্ট্রাগল করেছে, সেই স্ট্রাগল পিরিয়ড কিছুটা রাখা। সাকিব শুরুতে ব্রেক থ্রু দেয়ায় আরও সুবিধা হয়েছে।’
এসএএস/জেআইএম