ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

এক যুগ পেরিয়ে ‘দৌড়া’র দৌড়

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ | প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্রীড়াঙ্গনে দর্শকদের কাজটা পুরোটাই ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র মতো একটা ব্যাপার। মাঠে খেলবেন খেলোয়াড়রা, পক্ষে-বিপক্ষে ফল আসবে, আবার পরদিন বা পরের ম্যাচে খেলতে নামবেন- এভাবেই চলতে থাকে চক্র। এর মধ্যেও যখন কেউ বা কোনো জনগোষ্ঠী নিরলসভাবে, নিয়মিত এই বনের মোষ তাড়ানোর কাজটা করে থাকেন, তখন বুঝতে হবে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু রয়েছে এদের মাঝে।

আর সে বিশেষ কিছুর পুরোটা জুড়েই যখন থাকে বিশ্বাস ও বিশ্বাসের মন্ত্র, তখন যেনো সহজ হয়ে যায় অনেক কিছুই। অনেক বাঁধাই উৎরানো যায় খুব সহজে। এই বিশ্বাসের মন্ত্র আঁকড়ে ধরেই দীর্ঘ বারো বছর ধরে ‘বনের মোষ তাড়িয়ে’ বেড়াচ্ছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী। যাদের নামেই রয়েছে ‘দৌড়া’। তবে এই ‘দৌড়া’টা নিজেদের জন্য নয়, বরং মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতিপক্ষকে হুঙ্কার জানানোর জন্য ব্যবহৃত দৌড়া।

বলা হচ্ছে, দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সুসংগঠিত সমর্থক গোষ্ঠী ‘দৌড়া বাঘ আইলো’র কথা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৬ সালে ঘরের মাঠে সিরিজের শেষ ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিলো বাঘের হুঙ্কারে বিশ্বাস করা এ ফ্যানক্লাবের। সেদিন তারিখটা ছিলো ৯ ডিসেম্বর। হাটি হাটি পা পা করে বারো বছর পেরিয়ে আজও (৯ ডিসেম্বর) মাঠেই থাকবে দৌড়া বাঘ আইলোর সদস্যরা। প্রতিপক্ষ শুধু জিম্বাবুয়ের বদলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

দৌড়া বাঘ আইলোর প্রধান ও একমাত্র কাজই হলো মাঠে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া। সেটা হোক আন্তর্জাতিক ম্যাচ, ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা প্রদর্শনীমূলক কোনো ক্রিকেট ম্যাচ। দেশের যেকোনো স্টেডিয়ামের গ্যালারী কোনো না কোনো প্রান্তে পাওয়া যাবে দৌড়া বাঘ আইলোর সদস্যদের সরব উপস্থিতি।

DBA-2

১২ বছর আগে দৌড়া বাঘ আইলো যখন প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করে অর্থাৎ মাঠে গিয়ে একত্রে খেলা দেখা শুরু করে তখন তাদের পক্ষে ছিলো কেবল তিনজন। তারা হলেন ওয়ালী এম ফাহিম, প্রিয় রহমান সৌরভ, মুস্তাফিজুর রহমান রকি। সে ম্যাচে বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়েকে হারায় তিন উইকেটের ব্যবধানে। ম্যাচের মাঝপথেই মুস্তাফিজুর রহমান রকির মাথা থেকেই আসে ‘দৌড়া বাঘ আইলো’ নামটি।

সেই যে সেদিন থেকে শুরু, তারপর থেকে মাঠে দৌড়ান এগারোজন বাঘ; তাদের হয়ে গ্যালারীতে দ্বাদশ খেলোয়াড় হয়ে গলা ফাটান দৌড়া বাঘ আইলোর সদস্যরা। শুরুর দিকে শুধু মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই দৌড়ার দৌড় সীমাবদ্ধ থাকলেও, ক্রমেই বাড়তে থাকে তাদের বিচরণ। এখন দেশের যেখানেই খেলা হোক না কেন, মাঠে উপস্থিত থাকেন এ ফ্যানক্লাবের সদস্যরা।

এক যুগ ধরে দেশের মধ্যে প্রায় সব খেলা দেখা দৌড়ার সদস্যরা মনস্থির করেছেন ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপেও থাকবেন গ্যালারীতে। এরই মধ্যে তাদের প্রায় ত্রিশজন সদস্য কেটে ফেলেছেন বাংলাদেশের গ্রুপ ম্যাচের নয় ম্যাচেরই টিকিট। ভিসাপ্রাপ্তির উপর নির্ভর করবে ঠিক কতজন মিলে মাতাবেন লর্ডস, লিডস কিংবা নটিংহ্যামের গ্যালারী। এর আগে শ্রীলঙ্কায় ২০১২ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টি, অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ভারতে ২০১৬ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতেও মাঠে ছিলেন দৌড়া বাঘ আইলোর সদস্যরা।

DBA-3

দৌড়া বাঘ আইলোর শুরুর গল্প, কার্যক্রম কিংবা এখনো পর্যন্ত তাদের এক যুগের যাত্রার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে জাগোনিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সংগঠনটির বর্তমান প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা সাদমান সাজিদের সাথে। যিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে এখনো পড়াশোনা করছেন মাস্টার্সে। তার সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য:

জাগোনিউজ : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে ম্যাচ দিয়ে আপনাদের যাত্রা শুরু, সে ম্যাচে কি আপনি ছিলেন গ্যালারীতে? যদি না থেকে থাকেন তাহলে ঠিক শুরুর গল্পটা সংক্ষেপে আমাদের পাঠকদের জানাতেন যদি...

সাদমান সাজিদ : সে ম্যাচে আমি ছিলাম না ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডে জেতার পর তখন জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশের হাতছানি। গ্যালারি থেকে বের হতে হতে ফাহিম ওয়ালি ভাই, রকি ভাই, আশেক ভাই, প্রিয় ভাইরা মিলে চিন্তা করেন যে মাঠে এমন একটা প্ল্যাকার্ড বা ব্যানার নিয়ে যাবেন যা খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করবে এবং গ্যালারিতে যারা থাকবে এমনকি নিজেদের মধ্যেও একটা উদ্যম নিয়ে আসবে।

ব্যানারে কি লেখা যায় চিন্তা করতে করতে হঠাৎ তারা দেখেন এক লোক তার বন্ধুকে বাঘের পুতুল নিয়ে ধাওয়া করতেছে। এটা দেখে হঠাৎ রকি (মুস্তাফিজুর রহমান রকি) ভাই বলে উঠলেন, ‘আরে দৌড়া...বাঘ আইলো। হুট করে এটা শুনে বাকি সবাই ঠিক করেন যে ‘দৌড়া বাঘ আইলো’ই হবে সেই কাঙ্খিত লেখা। এভাবেই জিম্বাবুয়ে সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেতে শুরু হয় এই ফ্যানক্লাবের পথচলা। শুরুর দিকে পরিবারের সদস্য আর বন্ধুবান্ধবদের নিয়েই মাঠে যেতে থাকি আমরা। গ্যালারিতে নিয়মিত যাবার কারণে যুক্ত হতে থাকে নিয়মিত কিছু মুখ যারা নিজেরাও মাঠে নিয়মিত খেলা দেখতে যায় এবং ক্রিকেট দলের সেসব সমর্থক যারা শেষ পর্যন্ত জেতার মনোবল নিয়ে গ্যালারিতে থাকে।

জাগোনিউজ : আপনি কবে থেকে এবং কিভাবে দৌড়া বাঘ আইলোর সাথে সম্পৃক্ত হলেন?

সাদমান সাজিদ : আমার দৌড়ার সাথে যুক্ত হওয়া হয় ২০১১ সালে। বাবা মায়ের কঠোর শাসনে এর আগ পর্যন্ত মাঠে যাওয়ার সুযোগ হয়নি খুব একটা। ২০১০ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকার একটা প্রতিবেদন পড়ে দৌড়ার সম্পর্কে জানা। পরে তখনকার পরিচালক রিয়াদ আহমেদ ভাই এর সাথে আড্ডা দিতে দিতে জীবনের লক্ষ্যের মতো হয়ে যায় যে দৌড়ার সাথে সবসময় খেলা দেখতে হবে।

২০১১ সালে আমি যখন দৌড়ার সাথে যুক্ত হই তখন আমাদের ক্রিকেট দলের অবস্থা ভালো না হলেও দৌড়া তখন ছিল জমজমাট একটা পরিবার। বাস্তবতা চিন্তা করলে আমরা জানতাম যে আমরা ম্যাচ হারব কিন্তু আমরা মনে কখনোই তা বিশ্বাস করতাম না। জিতব চিন্তা করে সাপোর্ট করে যেতাম শেষ পর্যন্ত। হেরে গ্যালারি থেকে বের হবার সময় শুনতাম রাজ্যের বিদ্রুপ ও টিটকারি। ‘দৌড়া বিলাই (বিড়াল) আইলো’ না শুনে বাসায় খুব কমই ফিরতে হয়েছে। চুপচাপ শুনে যেতাম এই ভেবে যে একদিন এরাই মূল নামটা বলবে। একদিন আমরাও হেসেখেলে সবাইকে হারাব। বর্তমানে আমাদের বিশ্বাস, সমর্থন সব একই আছে কিন্তু এখন আর আমরা দৌড়া বিলাই আইলো শুনি না। এখন ওই বিদ্রুপ-টিটকারি করা চোখে দেখি মুগ্ধতা, ভালোবাসা ও প্রশংসা আমাদের জন্য। এখন তারাই বলে ‘দৌড়া বাঘ আইলো’।

জাগোনিউজ : আপনি যখন থেকে যোগ দিয়েছেন তখনের অবস্থা এবং বর্তমানেরর অবস্থার একটা চিত্র যদি আমাদের সামনে তুলে ধরতেন? আপনাদের মূলমন্ত্র ‘ফেইদ, বিলিফ, ট্রাস্ট’- তিনটা শব্দই ‘বিশ্বাস’ এর প্রতি ইঙ্গিত দেয়। বারো বছরের দৌড় অতিক্রম করে এই বিশ্বাসটা কতটুকু নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করতে পেরেছেন বলে মনে করেন?

সাদমান সাজিদ : দেখুন, আমরা যখন এই ফ্যানক্লাব চালু করি তখন আমরা ম্যাচ জিততাম বছরে হয়তো একটা কি দুইটা। আর যেদিন জিততাম সেদিন রাস্তায় বিজয় মিছিল বের হয়ে যেত। এতটাই কাঙ্খিত ছিল একটা জয় ওই সময়। এখনো যেমন মানুষ গালি দেয়, সমালোচনা করে তখনো প্লেয়ারদের কপালে এগুলোই জুটত।

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন ছিল যে এই ১১ জনের হয়তো ওই সামর্থ্য ছিল না যে নিয়মিত ম্যাচ জিতবে কিন্তু তারা রোদে পুড়ে দেশের জন্য মাঠে নিজেদের শতভাগ দিত জয় ছিনিয়ে আনার জন্য। আর আমরা তার ২০ ভাগ কষ্টও না করে যদি এই ১১ জনের উপর বিশ্বাস না রাখতে পারি বা তাদের যদি বোঝাতে না পারি যে তাদের উপর ভরসা রাখছে মানুষ তাহলে কিভাবে তারা অনুপ্রাণিত হবে? কারণ আমি সবসময়ই মনে করি সমর্থকরা হলো টিমের দ্বাদশ খেলোয়াড়।

আপনার টিমের সবাই যখন সেইম বিশ্বাস বুকে রাখবে তখন সাফল্য একদিন নিজ থেকে এসে ধরা দিবে। এভাবেই নিজেদের এবং প্লেয়ারদের সাহস যুগিয়ে করে এসেছি সবসময় আমরা। আর এই বিশ্বাসটা ছিল বলেই হয়তো ১২ বছরের এই দীর্ঘ দৌড় শেষ হয়নি এখনো। ফেইথ, বিলিফ, ট্রাস্ট তিনটা গতানুগতিক শব্দ হতে পারে কিন্ত এর সুফল এখন পুরো ক্রিকেট পাগল জাতি উপভোগ করছে। এটাই হয়তো সফলতা আমাদের।

DBA-5

জাগোনিউজ : দলভেদে খেলা দেখতে যাওয়া খালি চোখে যতটা সহজ, কাজটা আসলে ততোটাই কঠিন। একসাথে এতজনের টিকিট পাওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আবার সবাই মিলে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করাটা একধরনের উত্তেজনাও। থাকে টিকিট পাওয়ার আনন্দ, না পাওয়ার হতাশা। এখনো পর্যন্ত কোন দিকটা বেশি মোকাবেলা করেছেন? ঠিকঠাক পাওয়ার আনন্দ নাকি অব্যবস্থাপনাজনিত হতাশা? হতাশাগুলো ঠিক কি কারণে হয়?

সাদমান সাজিদ : এই বছর সিরিজগুলাতে গড়ে প্রতি ম্যাচে আমরা ১০০ জন করে একসাথে খেলা দেখেছি। এর আগে গড়ে ৫০-৬০ জন করে দেখেছি। সংখ্যাটা শুনে মনে হতে পারে যে খুবই সহজ টিকেট পাওয়া আমাদের জন্য কিন্তু এর পিছনে পরিচালনা পর্ষদের অনেক শ্রম, নির্ঘুম রাত নিহিত। আমরা সবসময়ই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করি মাঠে খেলা দেখার জন্য। এর জন্য আমরা নিজেরাই তাদের টিকেটের ব্যবস্থা করে দেই এবং এর জন্য আমরা অতিরিক্ত একটা টাকাও নেই না কারণ ভালোবাসার জায়গায় লেনদেনের সম্পর্ক থাকতে পারে না।

তবে টিকেট নিয়ে হতাশাই বেশি কাজ করে আমাদের মাঝে। আসলে এই জিনিসটা নিয়ে এত দূর্নীতি চলে যে আমাদের মত ক্রিকেট পাগল লোকদের উপরই কোপটা পড়ে। কালোবাজারিদের ধান্ধায় টিকেট আমাদের হাতে আর আসে না। অনেক সময় শুভেচ্ছা টিকেটের কারণে গ্যালারী হারায় ডেডিকেটেড দর্শক, খেলোয়াড়রা পায় না দ্বাদশ খেলোয়াড়ের পরিপূর্ণ সমর্থন। আসলে এই বিষয় নিয়ে অনেক বছর ধরেই কথা হচ্ছে কিন্তু কখনোই দেখলাম না বিসিবিকে এ ব্যাপারে কার্যকরী কোনো ভূমিকা পালন করতে। টিকেট হাতে আসলে বা মানুষের চাহিদা ফুলফিল করতে পারলে আসলেই ভালো লাগে কিন্তু এই অব্যবস্থাপনা আসলেই সমর্থকদের জন্য পীড়াদায়ক।

জাগোনিউজ : আগে দৌড়া বাঘ আইলোর পক্ষ থেকে খেলা দেখতে গিয়ে বা একসাথে খেলা দেখার মধুর স্মৃতি ও তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের পাঠকদের জানাতেন যদি?

সাদমান সাজিদ : খেলা দেখার মধুর অভিজ্ঞতা তো অনেক আছে দৌড়ার সাথে। সবার আগে বলতে হয় ২০১১ এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা। ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ব্যাকফুটে। গ্যালারী ছাড়ছে তখন মানুষ আস্তে আস্তে। তখন রিয়াদ ভাই চিল্লিয়ে বললেন, ‘ভাই আমাদের সাথে সাপোর্ট দেন। আমি চিটাগাং হারতে আসে নাই। আমি এই ম্যাচ না জিতে ঢাকায় যাবনা।’

অনেকে শুনে বসেছিল, অনেকে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে চলে গেছিল কিন্তু আমরা আমাদের কাজ থামাইনি। কেউ দোয়া করছে, কেউ চিল্লাচ্ছে সাপোর্ট দিয়ে। অবশেষে ম্যাচ জিতি আমরা কিন্তু সবার চোখে পানি। খুশির কান্না জিনিসটা আমি প্রথম ওইদিন ফিল করতে পারি।

DBA-4

তিক্ত অভিজ্ঞতা আমি আসলে ভুলে যাওয়ারই চেষ্টা করি। তবে যেটা নিয়ে বলতে চাই সেটা একটু রাজনৈতিক আন্দোলন। ২০১২ সালে ফেলানী হত্যার পর এশিয়া কাপে ভারতের সাথে আমাদের খেলা ছিল। ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা গ্যালারীতে ‘Stop BSF Brutality’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাড়াই। কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তা কর্মীরা আমাদের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছিড়ে ফেলে এবং আমাদের মাঠ থেকে বহিষ্কার করার হুমকি জানায়।

জাগোনিউজ : আপনাদের শুরু এবং বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সদস্য কারা?

সাদমান সাজিদ : আমাদের ফ্যানক্লাবটা আসলে পরিবারের মত। সবাই মিলে কাজ করি। আগে অনলাইন নিয়ে আমাদের তেমন চিন্তা ছিল না। অফলাইন ভিত্তিক কাজই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। আসল কথা মাঠে গিয়ে খেলা দেখাটাই প্রধান কাজ ছিল। এজন্য আসলে কারো কোনো আলাদা পদ ছিল না আগে। ২০১৪ তে আমাদের প্রজন্ম যখন এডমিন হই, তখন আস্তে আস্তে একটা সাংগঠনিক রূপ দিতে থাকি কারণ তখন অনলাইন-অফলাইন দুই দিকেই আমরা সমানভাবে কাজ শুরু করি। ২০১৫ সালে করা কমিটি ২০১৮ সালে আরো সম্প্রসারণ করা হয়।

আমি বর্তমানে প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছি। সহকারী পরিচলন কর্মকর্তা ও ট্রেজারার হিসেবে আছেন সৈকত মিত্র ও আসিফ আব্দুল্লাহ। মার্কেটিং হেড হিসেবে আছেন মাহফুজুর রহমান বাবু। সিনিয়র মিডিয়া অফিসার হিসেবে আছেন তানভীর আহমেদ প্রান্ত। সহকারী মিডিয়া অফিসার হিসেবে আছেন শিহাব মোহাম্মদ। লজিস্টিকস হেড হিসেবে আছেন এলাহী শুভ। উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ফাহিম ওয়ালি ও রিয়াদ আহমেদ। ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবে আছেন শিহাব সায়রাজ। এছাড়া এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে আছেন রশিদ মাহমুদ চয়ন, ফাহিম ইকবাল, ফাহিম হোসেন সৈকত, সাকিব হাসান, অনিক বালা শুভ্র, সজিব হোসেন দোলন, সাইদুজ্জামান রিফাত, রুদ্র খোরশেদ আজিজ, রাহাত হাসান প্রিয়, শানতাসিরুল ইসলাম শান, মনজুরুল হক আসিফ প্রমুখ।

সাদমান সাজিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের জের ধরেই জাগোনিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় দৌড়া বাঘ আইলোর সিনিয়র মিডিয়া অফিসার তানভীর আহমেদ প্রান্তর সাথে। যিনি বর্তমানে পড়াশোনা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কাছ থেকে জেনে নেয়া যাক আরও কিছু কথা:

জাগোনিউজ : দৌড়া বাঘ আইলো’র যে বিশ্বাসের মন্ত্র সেটা সোশ্যাল মিডিয়াতে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে কতটুকু ছড়াতে পেরেছেন বলে মনে করেন?

তানভীর প্রান্ত : আমাদের মূলমন্ত্র ‘ফেইদ বিলিফ ট্রাস্ট’, আমরা টাইগারদের খেলায় যেকোনো অবস্থায়ই হোক বিশ্বাস রাখি শেষ বল পর্যন্ত। হারার আগে হেরে না যাওয়াটাই আমাদের শক্তি। আমরা বিশ্বাস করি ম্যাচের যেকোন একটি ভালো ওভার বা দুই-একটি মুহূর্তেই ম্যাচ ঘুরে যায়।

আমাদের শুরুর দিজে মাঠে প্রচুর নেতিবাচকতা দেখতাম। মানুষ হারার আগেই হেরে যেত। কিংবা কিছুদিন পর দেখতাম সোশ্যাল মিডিয়াতে হেরে গেলেই গালাগালি বা অকথ্য ভাষায় অযথা সমালোচনা করা হতো। তবে এখন মনে হয় আমাদের বিশ্বাসটা আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি ভালোভাবেই। এখন সমর্থকরা হারার আগেই হেরে যায় না বা এক ম্যাচ হেরে গেলেও পরের ম্যাচে ঘুরে দাড়াবার বিশ্বাস নিয়ে থাকে।

জাগোনিউজ : সাদমান সাজিদ জানিয়েছেন আপনাদের সাথে যতজনই খেলা দেখতে যাক, তাদের সবার টিকিট হয় অনলাইনে না হয় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বৈধভাবেই সংগ্রহ করেন আপনারা। এ কাজটা করতে কি কি চ্যালেঞ্জ বা বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়?

তানভীর প্রান্ত : সবার টিকেট বৈধভাবে সংগ্রহ করাটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আসলে খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমাদের টিকেটিংয়ের প্রসেসটা তেমন জটিল না হলেও দুর্নীতি এই জিনিসটাকে মোটামুটি দুঃসাধ্য করে ফেলেছে। অনেকেই দেখেন আমরা ৮০-১০০ জন নিয়ে প্রায়ই মাঠে যাই। কিন্তু এর জন্য যে চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হয় সেটা হয়তো অনেকেই জানেন না কিংবা বোঝেন না।

অনলাইনে টিকেট দিলে আমরা সারা রাত অনলাইনে বসে থাকি। ১ মিনিটের জন্য টিকেট ছাড়লেও যেন সবাই টিকেট কেটে রাখতে পারে। অনলাইনে সব না পেলে পরে আবার ভোর থেকে লাইনে দাড়াই বাকিদেরটা নিশ্চিত করতে। লাইনে দাঁড়িয়ে কতরকম অনিশ্চয়তা থাকে সেটা যারা লাইনে টিকেট কাটে তারাই জানে। তবুও এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যখন টিকেট পাই তখন এসবকে আর কষ্ট মনে হয় না।

জাগোনিউজ : দৌড়ার ব্যাপারে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

তানভীর প্রান্ত : দৌড়ার ব্যাপারে আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা একটু আকাশছোঁয়া। আমার ইচ্ছা বাংলাদেশের ফ্যানক্লাবগুলোর মধ্যে দৌড়া হবে একটি ব্র‍্যান্ড। যেমন ইংল্যান্ডের ফ্যানক্লাব বললে আমরা ‘বার্মি আর্মি’কে চিনি। আমার ইচ্ছা আমরা একসময় নিয়মিত গ্যালারিতে একটি স্ট্যান্ডের সম্পূর্ণটা নিয়ে থাকবো।

মাঠে কখনো যদি প্লেয়াররা মোরালি ডাউন থাকেন তখন যেন তারা আমাদের চিৎকার শোনেন, আমাদের কথা ভেবে আবার নতুন উদ্যম পান। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও নিয়মিত মাঠে থাকা। আর মাত্র তো এক যুগ, এমন আরো কয়েকশো যুগ পার করুক দৌড়া!

এসএএস/পিআর

আরও পড়ুন