প্রথম কোনো দলকে ইনিংসে হারানো মনে রাখার মতো ঘটনা : পাপন
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নয় বছর আগে (২০০৯ সালে) একবার দুই ম্যাচ সিরিজ ২-০ ‘তে জেতার রেকর্ড ছিল। কিন্তু নিজ মাটিতে তুলোধুনো করা বহুদূরে, চট্টগ্রামে এবারের সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় টেস্টে জয়ই ছিল না। সেখানে এবার দুই ম্যাচ সিরিজে ক্যারিবীয়দের ‘হোয়াইটওয়াশ।’
দেশে ও বিদেশে এ নিয়ে টেস্টে তৃতীয়বার কোনো দলকে ‘বাংলাওয়াশ’ করা। এ সাথে আরও একটি নতুন ও অধরা কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছে আজ। ১১২ নম্বর টেস্টে এসে প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত ঐতিহ্যবাহি ও বিশ্ব মানের ক্রিকেট শক্তিকে ফলোঅনে ফেলে ইনিংসে হারিয়েছে সাকিবের দল।
শেরে বাংলায় প্রেসিডেন্ট লাউঞ্জে বসে নিজ দলের ক্রিকেটারদের সে সাফল্য দেখেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। নিজ হাতে সাকিবের হাতে সিরিজ বিজয়ের ট্রফি তুলে দেয়া বিসিবি প্রধান ক্রিকেটারদের এ কৃতিত্বে খুশি। খানিকটা রোমাঞ্চিতও।
আজ বিকেলে শেরে বাংলার গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে মিডিয়ার সাথে আলাপে নাজমুল হাসান পাপন অনেক কথার ভীড়ে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, টাইগারদের এ সাফল্যর মাঝে চাঁদের গায়ে কলঙ্ক খোঁজার চেষ্টা করা হবে চরম ভুল।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপে প্রশ্ন উঠলো, এমন স্পিনসহায় উইকেটে ক্যারিবীয়দের তুলোধুনো করায় কতটা কৃতিত্ব আছে? জবাবে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এখন সব দেশই নিজ কন্ডিশনের সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। এ কারণেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সফরকারি দল সফরে গিয়ে স্বাগতিকদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারে না। খাবি খায়। এখানেও তাই হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে এসে পারেনি উইন্ডিজ।’
বিসিবি সভাপতি মনে করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হালকাভাবে নেয়া কিংবা খাটো করে দেখার কিছু নেই। তারা মাত্র ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে। ভারতের স্পিন সহায় উইকেটে ভারতীয় বাঘা বাঘা স্পিনারদের খেলেই এখানে এসেছে। তাই তারা স্পিনে অন্ধকার দেখেছে, এমন ভাবারও যৌক্তিকতা কম।
আসলে বাংলাদেশ খুব ভালো খেলেছে। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও হয়েছে চোস্ত। সেই কার্যকর বোলিং ও ব্যাটিংয়ের সামনেই কুলিয়ে উঠতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। এ সাফল্যকে স্মরণীয়ও মনে হয় পাপনের।
বিসিবি সভাপতির ভাষায়, ‘আসলে আপনারা যদি বিশ্ব ক্রিকেট দেখেন, দেখবেন যে বিদেশে খেলতে গিয়ে সবারই সমস্যা হচ্ছে। আমাদেরও হয়েছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ শক্তিশালী দল। তারা আমাদের এখানে আসার আগে ভারতে খেলে এসেছে, ভালো ভালো স্পিনারদের খেলে তাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে দিক থেকে বলবো যে, এই টেস্টটা বাংলাদেশ যেভাবে জিতেছে, তা মনে রাখার মতো। এত সহজে জয় আসবে, তা আমরা ভাবিনি। আমাদের ব্যাটসম্যানদের দেখেন, এখানে সকলেই রান করেছে, ডাবল ফিগারে এসেছে। এতো বছর খেলার পর এই প্রথম আমরা কোনো দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারালাম, সত্যিই এটা মনে রাখার মতো।’
টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর একদিনের সিরিজের প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে পাপন বলেন, ‘ওয়ানডেতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ শক্তিশালী। সব ফরম্যাটেই ওরা আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দল। তবে ওয়ানডের রেকর্ডটা আমাদের পক্ষে আছে। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে, যেভাবে দল খেলছে, তাতে আশা করা যায় যে ওয়ানডেতেও ভালো করবো। আজ আমরা ১৮ জনের (আসলে ১৬ জনের) একটা দল তৈরি করেছি, সেখান থেকে এক ঘণ্টায়ও একাদশ তৈরি করতে পারছিলাম না; কারণ কাকে বাদ দেব! এটা একটা বিরাট ও ভালো সমস্যা। অনেকগুলো খেলোয়াড় আছে যারা যোগ্য, কিন্তু সবাইকে সুযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের মনে হয় আমরা একটা ভালো জায়গায় আছি।’
তবে ওয়ানডে সিরিজ টেস্টের মতো একপেশে হবার সম্ভাবনা কম বলে মনে হয় পাপনের। কারণ তখন উইকেট অন্য রকম হবে। আরো স্পোর্টিং হবে। তবে পাপন হারার কোনো কারণ দেখছেন না। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমার মনে হয় দলের ফর্ম যেমন, তাতে আমাদের হারার কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আছে।’
এআরবি/এমএমআর/পিআর