ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

এক বছরেই আট জনের টেস্ট অভিষেক!

ক্রীড়া প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা ১৮ পেরিয়ে ১৯ বছরে পা দিয়েছে। সময়টা খুব বেশি লম্বাও নয়। এরই মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ঘটেছে ৯৪ জন ক্রিকেটারের। এ নিয়ে সবেমাত্র বাংলাদেশ খেলছে ১১২তম টেস্ট। এরই মধ্যে টেস্ট খেলোয়াড়ের সংখ্যাও প্রায় সেঞ্চুরির কাছাকাছি। অনেকের কাছেই বিস্ময়ের ঠেকতে পারে। তবে এটাই সত্যি। দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এখনও পর্যন্ত ৯৪জন ক্রিকেটার।

বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে সর্বশেষ সংযোজন বাঁ-হাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত যার ব্যাটে রান আসে। বড় বড় ইনিংস খেলে যিনি নজর কেড়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন। বলা হচ্ছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফরম্যান্সেরই পুরস্কার পেয়েছেন সাদমান।

চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম ম্যাচেও একজনের টেস্ট অভিষেক হয়েছে। তিনি নাঈম হাসান। দীর্ঘদেহী এই অফ স্পিনারের বয়স এখনও ১৮’র কোঠায়। সাদমানের বয়স ২১ পেরিয়ে গেছে। এখনও তরুণ। সামনে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার সময় পড়ে আছে এখনও তাদের সামনে; কিন্তু সমস্যা হলো, অন্য অনেকের মত এই দুই তরুণও কি হারিয়ে যাবেন? চলে যাবেন বিস্মৃতির অন্তরালে? সেখানে জায়গা করে নেবেন আরও তরুণ কোনো ক্রিকেটার?

প্রশ্ন ওঠাটা অবান্তর নয়। কারণ, চলতি বছরই যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে টেস্ট অভিষেক হয়েছে মোট ৮জন ক্রিকেটারের। তাদের ক’জনই বা এখন নিয়মিত টাইগারদের টেস্ট দলে। কেউ কেউ তো এমন অবস্থায় চলে গেছেন যে, হয়তো বা ইহজনমে আর কোনোদিন টেস্ট দলে ডাক পাবেন না তারা।

ক্রিকেটে টেস্ট ফরম্যাটটাকে বলা হয় কুলিন শ্রেণির। বোঝাই যাচ্ছে ক্রিকেটে কেমন জাত-বর্ণের ব্যবধান রয়েছে! সাদা পোশাকে সবুজ টুপি পরে খেলতে নামার গৌরব অর্জন করাটা চাট্টিখানি কথা নয়। কুলিন শ্রেণির মানুষরাই পারে। যে কারণে এক সময় বলা হতো ক্রিকেট হচ্ছে রাজার খেলা। খেলাটি সার্বজনীন হয়ে যাওয়ার কারণে এখন টেস্ট খেলুড়ে দেশ ১২টি এবং এই ১২ দেশের হয়ে যারা টেস্ট খেলেন, তারা নিশ্চিত অন্য শ্রেণির। অন্যদের চেয়ে ভিন্ন।

এ কারণে টেস্ট অভিষেকের টুপিটার মূল্য অনেক ক্রিকেটারদের কাছে। কোনো কোনো ক্রিকেটার সারা জীবন সেই ক্যাপ পরেই খেলতে নামেন। হোক না সেটা অনেক মলিন, ধূসর। টেস্ট অভিষেকের গর্ব সারাজীবনই যে বয়ে বেড়াতে চান ক্রিকেটাররা। এটা তাদের কাছে অনেক গর্বের।

বাংলাদেশে এখন এই গর্বের অংশীদার করা হচ্ছে হরহামেশা। ক্রিকেট খেলতে পারলেই হলো যেন, ধরে এনে টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দাও- এই অবস্থা টিম ম্যানেজমেন্ট তথা নির্বাচকদের। অন্তত এক বছরে ৮ জন ক্রিকেটারকে টেস্ট অভিষেক করানোর পর এ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন সবাই। এরপরও একটি স্থিতিশীল টেস্ট দল তৈরি করতে পারেনি নির্বাচকরা।

এখনও পর্যন্ত চলতি বছরে যাদের টেস্ট অভিষেক হয়েছে তারা হলেন- বাম হাতি স্লো অর্থোডক্স স্পিনার সানজামুল ইসলাম, পেসার আবু জায়েদ রাহী, আরেক বাঁ-হাতি অর্থোডক্স নাজমুল ইসলাম অপু, মিডিয়াম পেস অলরাউন্ডার আরিফুল হক, ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন, পেসার খালেদ আহমেদ, অফ স্পিনার নাঈম হাসান এবং সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হলেন ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম।

চলতি বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল স্পিনার সানজামুল ইসলামের; কিন্তু চট্টগ্রামে অভিষেকের পর যেন হারিয়েই গেছেন। এখন তিনি খেলে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেট। আদৌ কখনো আর নির্বাচকদের ভাবনায় তিনি আসতে পারবেন কি না সেটা সন্দেহ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পেসার হিসেবে অভিষেক হয় আবু জায়েদ রাহীর। তাকে দেখে অনেকেই হাঁফ ছেড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন, ‘যাক! এতদিনে একজন টেস্ট স্পেশালিস্ট পেসার পাওয়া গেলো।’ কিন্তু তিন ম্যাচ খেলার পর এখন আর আবু জায়েদ রাহীর নাম শোনা যাচ্ছে না। তিনিও কি হারিয়ে যাবেন?

নাজমুল ইসলাম অপুর অভিষেক সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে প্রথম টেস্টেই হয়তো জানা হয়ে গেছে এই স্পিনার টেস্ট উপযোগি নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হওয়া আরিফুল হক এখনও দলে রয়েছেন। তবে সেটা শুধুই পানি টানার জন্য। কম্বিনেশনের কারণে আদৌ আর সুযোগ মেলে কি না তার, সেটা বোঝার উপায় নেই।

দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। এরপর তার অভিষেক হলো, কিন্তু খুব বেশি নজরকাড়া কিছু করতে পারেননি। যদিও টিম কম্বিনেশনে এখনও তিনি রয়ে গেছেন একাদশে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে অভিষেক হয়েছে পেসার খালেদের। অভিষেকে দারুণ বোলিং করেছিলেন। কিন্তু উইকেট পাননি। যে কারণে ওই এক ম্যাচ খেলেই তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে আরেকটি সুযোগ আসবে তা নিয়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেকে নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছেন নাঈম হাসান। তিনি খেলে যাচ্ছেন টানা দ্বিতীয় টেস্ট। তবে বাংলাদেশে অভিষেকের উদিত সূর্য কিন্তু কখনোই ভালো দিনের পূর্বাভাষ দেয় না। এর আগে যেমন সোহাগ গাজী, আবুল হাসান রাজু কিংবা ইলিয়াস সানিরা অভিষেকেই আলোর ঝলকানি দেখিয়েছিলেন, তেমনই হারিয়ে যেতে সময় নেননি। নাঈম হাসান কতদুর টিকে থাকবেন, সেটা বলাই বাহূল্য।

সর্বশেষ অভিষেক হলো সাদমান ইসলামের। ইতিমধ্যেই হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি। তবে, এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা তার জন্য খুবই জরুরী। না হয়, কবে ছিটকে ফেলা হবে- তা হয়তো তিনি নিজেও টের পাবেন না।

আইএইচএস/এমএস

আরও পড়ুন