‘মিরাজকে বলেছিলাম অন্তত দুইশ পর্যন্ত থাকিস’
প্রথম সেশনে কোনো উইকেট না হারানোর তৃপ্তি নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আগেরদিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থিতু হয়ে গিয়েছিলেন উইকেটে। প্রথম দিনের মতোই দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে দ্রুত রান তুলবে বাংলাদেশ, এমনটাই ছিল সবার প্রত্যাশা।
কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে লাঞ্চের পরে দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কয়েক ওভার পরে সাজঘরে ফিরে যান সিলেট টেস্টে অভিষেক হওয়া আরিফুল হকও। প্রথম দিনে বড় সংগ্রহের ভীত পাওয়া বাংলাদেশ তখন চারশ’র আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কায়।
ঠিক তখনই নিজের ব্যাটিংসত্তাকে জাগিয়ে তোলেন অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান। অষ্টম উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমের সাথে মিলে যোগ করেন বাংলাদেশের পক্ষে রেকর্ড ১৪৪ রান। ৭ উইকেটে ৩৭৮ থেকে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫২২ রানে ইনিংস ঘোষণা করতে পারার বড় একটা কৃতিত্ব রয়েছে একুশ বছর বয়সী এ তরুণেরও।
শুধু মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ মনে করেননি মিরাজ। তুলে নিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় এবং ঘরের মাটিতে প্রথম হাফসেঞ্চুরি। শেষপর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংস খেলে।
মুশফিককে একপ্রান্তে রেখে মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল যখন সাজঘরে ফিরে যান তখনো নিজের দেড়শই পূরণ হয়নি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের। পরে মিরাজের সাথে জুটি গড়েই দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে তিনটি দেড়শতাধিক রানের ইনিংস ও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরির গৌরব অর্জন করেন মুশফিক।
নিজের পুরো ইনিংসে মুশফিক যেমন একপ্রান্ত আগলে রেখে নির্ভার করেছেন অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যানকে, ঠিক তেমনিভাবে তাকে নির্ভার করে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন মিরাজ। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি হওয়ার পরে মিরাজের উচ্ছ্বাসও ছিল বাঁধভাঙা।
দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে মুশফিক জানান, বয়সে তরুণ কিংবা ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে থাকলেও মিরাজ খেলাটা খুব ভালো বোঝেন। খুলনার এ তরুণের সাথে ব্যাটিং করাটা খুব উপভোগও করেন মুশফিক। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির পুরোটা সময়েই অনেক কথা বলেছেন দুজনে।
মুশফিক বলেন, ‘মিরাজের সঙ্গে ব্যাটিং আমি সব সময় উপভোগ করি। ও প্রাণবন্ত একজন সঙ্গী। ও খুব মজার একটা চরিত্র। ওর মতো একজন খেলোয়াড় মাঠে থাকা সব সময়ই উপভোগ্য। ও আমাকে যেভাবে বোঝাচ্ছিল মনে হচ্ছিল যেনো ও দুইশ রানে ব্যাট করছে আর আমি মাত্র ক্রিজে এসেছি। ওর সঙ্গ সব সময়ই উপভোগ্য। আমি সব সময়ই বলি, ওর মাঝে অমিত সম্ভাবনা আছে। ওর মনোযোগ আর প্রত্যয় ওর সবচেয়ে বড় ব্যাপার। অনেক সময় হয়তো বাজে শটে আউট হয়ে যায় কিন্তু আজকে যেভাবে ব্যাটিং করেছে তাতে ও আগামী দিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হতে পারে। আমি ওকে এগুলোই বলার চেষ্টা করি।’
এ সময় মিরাজের খেলোয়াড়ি বোধের একটা উদাহরণও দেন মুশফিক। সে যে নিজে ব্যাটিংয়ের ত্রুটিবিচ্যুতি সবই জানে তা জানান মুশফিক। ব্যাটিংয়ে কোনো ভুল করলে সেটি নিজে সাথে সাথেই বুঝতে পারেন মিরাজ।
মুশফিক বলেন, ‘আর একটা কথা, ও কিন্তু সবই জানে। দেখা গেলো কোনো একটা বল শরীর থেকে অনেক দূরেই খেলে ফেলেছে, তখন নিজেই বলে, ‘ভাই এটা মনে হয় দূর থেকে খেলে ফেললাম।’ আমি তখন বলি ‘তুই তো সব জানিস, তাও খেলিস কেন?’ যেটা বললাম ও খুবই ফানি। তবে ওর পটেনশিয়াল আছে। আমাদের ক্রিকেটের নেক্সট বিগ থিং।ও খুব মজার ছেলে। ওর সাথে ব্যাটিং করতে আমার সব সময়ই মজা লাগে।’
আজ মিরাজের সাথে জুটি গড়ে রেকর্ডগড়া ডাবল সেঞ্চুরি করলেও, গত বছর গল টেস্টে একই ক্রিকেটারের কারণে নিজের সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন মুশফিক। দুর্দান্ত জুটির মাঝে হুট করেই ৪০ পেরিয়ে ৪১ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। পরে আর অন্য কেউ তেমন সঙ্গ দিতে না পারায় মুশফিককেও থামতে হয় ৮৫ রান করে।
সেদিন মিরাজের পঞ্চাশ কিংবা মুশফিকের একশ না হলেও, আজ হয়েছে দুটিই। দ্বিশতক হয়েছে মুশফিকের, মিরাজ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের হায়দরাবাদ টেস্টে মিরাজের প্রথম ফিফটিতেও সাথে ছিলেন মুশফিক।
এসব দিক মিলিয়ে মিরাজের সাথে ব্যাটিং করাটা যে সহজ তা জানান মুশফিক। তবে গল টেস্টের সে অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মিরাজকে আগেই সতর্ক করছিলেন যেনো অন্তত দুইশ হওয়া পর্যন্ত উইকেটে থাকেন মিরাজ।
মিরাজের সাথে জুটি গড়ে ব্যাটিংয়ের স্মৃতিচারণ করে মুশফিক বলেন, ‘ওর দুই ফিফটিতেই আমি সাথে ছিলাম। আর একবার সম্ভবত ৪৫ করেছিল, সে ম্যাচে আমিও ওর কারণে সেঞ্চুরি মিস করেছিলাম (হাসি)। ও আউট হওয়ার পর কেউ আর সঙ্গ দেয়নি। তো আজকে ওকে বলছিলাম আজকে অন্তত আমার দুইশ পর্যন্ত থাকিস। যেটা বললাম ও একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়। নিঃসন্দেহে আমাদের ক্রিকেটের পরবর্তী বড় নাম।’
এসএএস/এমএস