‘ইন্টারেস্টিং উইকেট’ বার্তা দিচ্ছে নতুন কিছুর!
ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন শেষে কোথায় দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহর দল? দিন শেষে কৌতুহলি প্রশ্ন ভক্ত-সমর্থকদের মুখে। উত্তর খুঁজতে গিয়ে স্কোর লাইনকে মানদণ্ড ধরছেন কেউ কেউ। তারপর নিজ থেকেই জবাব তৈরি করছেন, বাংলাদেশ আছে ভাল অবস্থানে।
কিন্তু কিভাবে? সিলেটে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ২৮২ রানের নিম্ন-মাঝারী স্কোর গড়েও প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রানে এগিয়ে শেষ অবধি ম্যাচ জিতেছিল ১৫১ রানে। সেখানে আজ প্রথমদিন শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ৩০৩। দুই সেঞ্চুরিয়ানের একজন মুমিনুল দিনের একদম শেষভাগে আউট হলেও আরেক সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহীম (১১১) এখনো উইকেটে।
যেহেতু নাইটওয়াচম্যান তাইজুল দিনের ছয় বল আগে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন, তাই বাধ্য হয়েই ভায়রাভাই মুশফিকের সাথে নামতে হয়েছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। তার মানে ইনিংসের অর্ধেকটা এখনো বাকি।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর পর আরিফুল হকও আছেন। সিলেটে চরম বিপর্যয়ে দুই ইনিংসে তার ব্যাট হেসেছে। এই যুবা শেষ দিকে একদিক আগলে রাখার কাজটি তেমন দক্ষতার সাথে করত না পারলেও কিছু রান করে দিয়েছেন। তাই তার ওপর আস্থা রাখাই যায়। সব মিলে ভাবা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের রান ৪০০ পেরিয়ে যাবে।
আজ দিনের খেলা শেষে কথা বলতে আসা মুমিনুল হকের আশাও তেমনি। মুমিনুল মনে করেন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ রান হতে পারে। এবং যদি সেটা হয়, তা হবে নিরাপদ ও লড়াই করার মত হবে সেটা। তবে তার মনে হয়, তিনি নিজে আউট না হলে অবস্থা আরও মজবুত থাকতো।
তাইতো মুমিনুলের মুখে এমন কথা, ‘আমার উইকেট যদি না পড়ত আর দিনশেষে তিনশো থাকত তাহলে বলতাম আমরা ভাল অবস্থায়া আছি। যাইহোক দুই উইকেট পড়ে গেছে। চারশো-সাড়ে চারশো রান ডিফেন্ড করার মতো মনে হয়। মুশফিক ভাই ব্যাট করছে, রিয়াদ ভাই আছে, নিচে আরিফ আছে। আমার মনে হয় আমরা ব্যাটসম্যানরা জিনিসটা কাজে লাগাবে। আর বোলারদের উপর খুব আত্মবিশ্বাস আছে যে তারা সুযোগটা কাজে লাগাবে। বিশেষ করে স্পিনারগুলো।’
তবে মুমিনুলের ওপরের কথাই শেষ কথা নয়। অনেক কথার ভিড়ে মুমিনুল একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তার অনুভব, উইকেট কিন্তু মোটেই সহজ নয়। সারা দিনে রান তিনশো পেরিয়ে গেলেও এ পিচে ব্যাট করা সহজ কাজ নয়। মুমিনুলের ভাষায়, ‘এ উইকেটে ব্যাট করা মোটেই সহজ কাজ ছিলনা। কারণ উইকেট একদম নিষ্প্রাণ নয়। সকালের প্রথম ঘন্টায় বল বেশ সুইং করেছে। বাউন্সও ছিল বেশি।’
দুই ফাস্ট বোলার কাইল জার্ভিস টেন্ডাই চাতারা প্রথম সেশনে বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছেন। তদের প্রচন্ড গতি, বাড়তি সুইং ও মাঝে-মধ্যে লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি সামলাতে ইমরুল, লিটন, মিঠুনই শুধু নন, মুশফিক ও মুমিনুলকেও কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি।
অনেক ডেলিভারি সাপের মত এঁকে-বেঁকে ব্যাটসম্যানের ঘার, কাঁধ ও মুখের আশপাশ দিয়ে কীপারের গ্লাভসে চলে গেছে। তাইতো মুমিনুলের কথা, এ উইকেটে ব্যাট করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
কষ্ট করে কেন? কি ছিল উইকেটে? এ প্রশ্নের জবাবে মুমিনুল বলেন, ‘উইকেটে এখনও কিছু না কিছু হচ্ছে। সারাদিন খেলা হয়েছে। যতদিন খেলা হবে কিছু না কিছু হবে। উইকেটে বাউন্স একরকম ছিল না। উঁচুনিচু হচ্ছিল। আর প্রথমেই যদি তিন উইকেট পড়ে যায়, তাহলে আল্টিমেটলি আপনি চাপে পড়ে যাবেন।’
তার শেষ কথা , ‘উইকেটটা খুব ইন্টারেস্টিং।’ এই ইন্টারেস্টিং বলতে আসলে কি বুঝিয়েছেন মুমিনুল? এর প্রকৃত ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা মুমিনুলও দেননি। তবে হাবভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, উইকেট মোটেই নিস্তেজ, নিষ্প্রাণ নয়। যথেষ্ঠ প্রাণ আছে। বল ম্যুভ করছে। বাউন্সও অসমান। কখনো কখনো লাফিয়ে উঠে ব্যাটসম্যানের মাথা ব্যাথার কারণ হচ্ছে। মানে ব্যাটসম্যানকে দেখে ও সমঝে খেলতে হচ্ছে। একদম স্বচ্ছন্দে খেলা কঠিন।
এ উইকেটে ৪০০ প্লাস রান করার অর্থ ম্যাচ জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া। দেখা যাক মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আর আরিফুল, মিরাজরা মিলে কতদুর নিয়ে যান দলকে?
এআরবি/আইএইচএস/পিআর