১৮ বছরের টেস্টে বাংলাদেশের যত পরিসংখ্যান
১৮ বছর আগে ২০০০ সালে, টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। সেই থেকে এক এক করে বাংলাদেশ পার করে এসেছে ১৭টি বছর। আজকের এই দিনে (১০ নভেম্বর) ১৯ বছরে পা দিলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। ফেলে আসা ১৮ বছরে অনেক হাসি-কান্না জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে।
নিঃসন্দেহে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি। তবুও, বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক দুর। এখন অন্তত ঘরের মাঠে যে কোনো দলের জন্যই ত্রাসে পরিণত হয় টাইগাররা। কখনও পারফরম্যান্সের পারদ ওপরে ওঠে আবার কখনও নেমে যায়। এই যেমন চলতি সিরিজে জিম্বাবুয়ের কাছে প্রথম টেস্টে হারতে হেলো শোচনীয়ভাবে।
খেলাধুলায় উত্থান-পতন থাকবেই। এসব সঙ্গী করে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে। ১০৯টি টেস্ট ইতিমধ্যে খেলে ফেলেছে। যার মধ্যে জয় মাত্র ১০টিতে। ড্র ১৬টিতে এবং পরাজয় ৮৩ টেস্টে। এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা পরিসংখ্যান। সেগুলোই তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।
প্রথম টেস্ট
২০১০ সালের ১০ নভেম্বর, ভারতের বিপক্ষে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। দু’দলের অধিনায়ক- বাংলাদেশ : নাঈমুর রহমান দুর্জয়, ভারত : সৌরভ গাঙ্গুলি, টস : বাংলাদেশ, ব্যাটিং। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৪০০/১০, ১৫৩.৩ ওভার (আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৪৫, হাবিবুল বাশার সুমন ৭১, আকরাম খান ৩৫; সুনিল জোসি ৫/১৪২), দ্বিতীয় ইনিংস : ৯১/১০, ৪৬.৩ ওভার(হাবিবুল বাশার ৩০, খালেদ মাসুদ ২১; জাগভাল শ্রীনাথ ৩/১৯, সুনিল যোশি ৩/২৭)।
ভারত ১ম ইনিংস : ৪২৯/১০, ১৪১.৩ ওভার (সুনিল যোশি ৯২, সৌরভ গাঙ্গুলি ৮৪, এস রমেশ ৫৮), দ্বিতীয় ইনিংস : ৬৪/১, ১৫ ওভার (রাহুল রাহুল দ্রাবিড় ৪১, শিব সুন্দর দাস ২২; হাসিবুল হোসেন ১/৩১)। ফল : ভারত ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : সুনিল যোশি।
প্রথম ম্যাচ ও সিরিজ জয়
২০০৫ সালে (৬-১০ জানুয়ারি) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। চট্টগ্রামের এএ আজিজ স্টেডিয়ামে। দু’দলের অধিনায়ক- বাংলাদেশ : হাবিবুল বাশার সুমন, জিম্বাবুয়ে : তাতেন্দা তাইবু। টস : বাংলাদেশ, ব্যাটিং। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৪৮৮/১০, ১৪৯.৩ ওভার (হাবিবুল বাশার ৯৪, রাজিন সালেহ ৮৯, মোহাম্মদ রফিক ৬৯, নাফিস ইকবাল ৫৬, খালেদ মাসুদ ৪৯, মাশরাফি ৪৮), ২য় ইনিংস : ২০৪/৯, ডিক্লে, ৫১.১ ওভার (হাবিবুল বাশার ৫৫, খালেদ মাসুদ ২৩, আশরাফুল ২২; চিগুম্বুরা ৫/৫৪, ডগলাস হোন্ডো ৩/৬১)।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ৩১২/১০, ১৩১.৪ ওভার (তাতেন্দা তাইবু ৯২, চিগুম্বুরা ৭১, টেলর ৩৯, মাসাকাদজা ২৯, মাতসিকেনেরি ২৮; মোহাম্মদ রফিক ৫/৬৫, মাশরাফি ৩/৫৯) ও ২য় ইনিংস : ১৫৪/১০, ৬৪.২ ওভার (মাসাকাদজা ৫৬, ব্রেন্ডন টেলর ৪৪, মাতসিকেনেরি ২০; এনামুল জুনিয়র ৬/৪৫, মাশরাফি ২/৪৫, তাপস বৈশ্য ২/২০)। বাংলাদেশ : ২২৬ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : এনামুল জুনিয়র।
*ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্ট ড্র হওয়ার ফলে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে সিরিজও জয় করে নেয়।
বিদেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়
২০০৯ সালের জুলাইতে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জয়। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিংস্টন এবং সেন্ট জর্জে। দু’দলের অধিনায়ক- বাংলাদেশ : মাশরাফি বিন মর্তুজা/সাকিব আল হাসান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ফ্লয়েড রেইফার।
১ম ম্যাচ : বাংলাদেশ ২৩৮ ও ৩৪৫ (তামিম ইকবাল ১২৮, রাকিবুল হাসান ৭৮)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩০৭ ও ১৮১ (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩/৫৯ ও ৫/৫১)। ফল : বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা তামিম ইকবাল।
২য় ম্যাচ : ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৩৭ ও ২০৯ (সাকিব আল হাসান ৩/৫৯ ও ৫/৭০, এনামুল জুনিয়র ৩/৬২ ও ৩/৪৮)। বাংলাদেশ ২৩২ ও ২১৭ (সাকিব আল হাসান ১৬ ও ৯৬, মুশফিকুর রহীম ৪৮ ও ১২, রাকিবুল হাসান ৪৪ ও ৯৬)। ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান।
স্মরণীয় দুই জয়
২০১৬ সালে ঘরের মাঠে (মিরপুরে) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। পরের বছর, ২০১৭ সালের আগস্টে ঘরের মাঠেই অস্ট্রেলিয়াকে (চট্টগ্রামে) প্রথমবারেরমত টেস্টে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যা সবচেয়ে স্মরণীয় সাফল্য। বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহীম এবং ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন অ্যালিস্টার কুক ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন স্টিভেন স্মিথ।
ইংল্যান্ডর বিপক্ষে : বাংলাদেশ : ২২০/১০, (তামিম ১০৪, মুমিনুল ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৩; মঈন আলি ৫/৫৭, ক্রিস ওকস ৩/৩০) ও ২৯৬/১০ (তামিম ইকবাল ৪০, ইমরুল কায়েস ৭৮, মাহমুদউল্লাহ ৪৭, সাকিব আল হাসান ৪১; আদিল রশিদ ৪/৫২, বেন স্টোকস ৩/৫২)। ইংল্যান্ড : ২৪৪/১০, (জো রুট ৫৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ৬/৮২, তাইজুল ৩/৬৫) ও ১৬৪/১০ (কুক ৫৯, ডাকেট ৫৬, স্টোকস ২৫; মিরাজ ৬/৭৭, সাকিব ৪/৪৯)। বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে : বাংলাদেশ : ২৬০ (তামিম ৭১, সাকিব ৮৪; অ্যাগার ৩/৪৬, কামিন্স ৩/৬৩, লায়ন ৩/৭৯) ও ২২১/১০ (তামিম ৭৮, মুশফিক ৪১, মেহেদী ২৬; লায়ন ৬/৮২, অ্যাগার ২/৫৫)। অস্ট্রেলিয়া : ২১৭/১০ (রেনশ ৪৫, অ্যাগার ৪১; সাকিব আল হাসান ৫/৬৮, মেহেদী হাসান ৩/৬২) ও ২৪৪/১০ (ওয়ার্নার ১১২, স্মিথ ৩৭, কামিন্স ৩৩*; সাকিব আল হাসান ৫/৭, তাইজুল ৩/৬০)।
রেকর্ড কর্নার
* মোট ম্যাচ : ১০৯টি। জয় : ১০টি। ড্র : ১৬টি। পরাজয় : ৮৩টি। সিরিজ জয় : ৩টি, ড্র : ৭টি এবং হার : ৪৫টি।
* কোন দেশের বিপক্ষে কত জয় : জিম্বাবুয়েকে ৫বার, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২ বার, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কাকে ১বার করে। ৩ বার জিতেছে রান তাড়া করে।
* সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড, ২১৭/৬, ২০০৯ সালে গ্রানাডায় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
* এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে খেলেছেন মোট ৯০জন ক্রিকেটার।
* এই ১৮ বছরে টেস্টে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৬৩৮। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
* দলীয় সর্বনিম্ন রান হচ্ছে ৪৩। চলতি বছরই স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
* ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ২১৭। ২০১৭ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন সাকিব আল হাসান।
* দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহীম, ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর ডাবল সেঞ্চুরি এসেছে তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে।
* টেস্টে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল, ৪০৪৯।
* সেরা গড় মুমিনুল হকের, ৪২.১২ করে।
* সেরা বোলিং, তাইজুল ইসলামের। ৩৯ রানে ৮ উইকেট, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে, মিরপুরে।
* সর্বাধিক উইকেট সাকিব আল হাসানের, ১৯৬টি।
আইএইচএস/পিআর