কাজটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়
আগের দুদিন অনেক কিছুই হয়েছে। তাইজুল ইসলামের সাফল্যের ডানায় আরও একটি মুক্তোর পালক যুক্ত হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের অর্জন-কৃতিত্ব, সুখ ও স্বস্তির কিছুই ঘটেনি। এ বাঁহাতি স্পিনার প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে ৬ উইকেট দখল করেছেন।
আজ তৃতীয় দিনও তাইজুলই হিরো। আবারো ৫ উইকেট শিকারী (৬২ রানে) । চতুর্থ বাংলাদেশী বোলার হিসেবে উভয় ইনিংসে ৫ বা তার বেশী উইকেট শিকারী হিসেবে নিজের নামকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখলেন নাটোরের ২৬ বছরের এ অধ্যবসায়ী যুবা। তার ঐ ব্যক্তিগত সাফল্য ও অর্জনটুকু ছাড়া সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের দলগত অর্জন বলে কিছু নেই। অনুজ্জ্বল, শ্রীহীন ও দায়িত্বহীন ব্যাটিংটাই চোখে পড়েছে নগ্নভাবে।
টিম পারফরমেন্সে পরিষ্কার এগিয়ে জিম্বাবুয়ে। কাল দ্বিতীয় দিনতো বটেই আজ তৃতীয় দিন শেষেও মোটামুটি চালকের আসনে মাসাকাদজার দল। আগের দু’দিনের আর সোমবার তৃতীয় দিনের চালচিত্র সবার জানা। জিম্বাবুয়ের ২৮২ রানের জবাবে বাংলাদেশ ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে ৯৯ রানে পিছিয়ে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে মাসাকাদজার দলকে ১৮১ রানে থামিয়ে মাহমুদউল্লাহ বাহিনীর রান বিনা উইকেটে ২৬।
তৃতীয় দিন আলোর স্বল্পতায় খেলা নির্ধারিত সময়ের মিনিট বিশেক আগে বন্ধ হবার সময় পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগারদের রান বিনা উইকেটে ২৬। এগুলো সবই ম্যাচের অনুসঙ্গ। কিন্তু কোনটাই আর শেষ কথা নয়।
এখন শেষ কথা একটাই। হিসেব-নিকেশ আর সমীকরণ যাই বলা হোক না কেন- আসল কথা হলো বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ৩২১ রান। যেহেতু আজ ২৬ রান যোগ হয়েছে। তাই শেষ দুই দিনে ম্যাচ জিততে টাইগারদের চাই আরও ২৯৫ রান।
ভক্ত-সমর্থকদের কৌতূহল, সংশয়মাখা প্রশ্ন- ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আরিফুল হকরা কি ঐ রান করতে পারবেন? যদি পারেন তাহলে এক অনন্য রেকর্ড হবে পূণ্যভূমি সিলেটের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
কারণ বাংলাদেশ আগে কখনোই টেস্টে অত বড় রান তাড়া করে জেতেনি। ইতিহাস জানাচ্ছে চতুর্থ ইনিংসে টাইগারদের সবচেয়ে বেশী রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটি ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০০৯ সালের ১৭-২০ জুলাই সেন্ট জর্জে। ২১৫ রানের লক্ষ্য সামনে নিয়ে ৩ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসান একাই দলকে জয়ের বন্দরে পৌছে দেন। তার ব্যাট থেকে আসা ৯৭ বলে ৯৬ রানের (১৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কা) হার না মানা ইনিংসে বাংলাদেশ পায় ঐতিহাসিক জয়ের দেখা মেলে। এখন পর্যন্ত চতুর্থ ইনিংসে সেটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী রান তাড়া করে টেস্ট জয়।
আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে এর আগে জয়ের লক্ষ্য ছিল ১০১ রানের। সেটা ২০১৪ সালের ঘটনা। মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ঐ সামান্য কটা রান করতেই নাভিশ্বাস উঠেছিল। মুশফিকুর রহিম আর তাইজুলের দৃঢ়তায় ৩ উইকেটের নাটকীয় জয়ে শেষ রক্ষা।
আগের তিন দিন যাই ঘটুক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ছাড়া ব্যক্তিগত ও দলগত পারফরমেন্স যত অনুজ্জ্বলই থাকুক না কেন, টাইগারদের ওপর তেমন কোন চাপ নেই। হাতে ১০ উইকেট অক্ষত। সময়ও বাকি প্রচুর, পুরো দুদিন। অর্থাৎ উইকেট আর সময়ের চাপ কোনটাই নেই। এখন শুধু বলের মেধা-গুণ বিচার করে খেলে যাওয়া। মাহমুদউল্লাহর দলের সামনে লক্ষ্যটা কঠিন হলেও তাই অসম্ভব নয়।
এরকম অবস্থায় চিন্তার খোরাক হলো সাম্প্রতিক পারফরমেন্স। যা মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয়। এই টেস্টের প্রথম ইনিংস সহ সর্বশেষ ৭ টেস্ট ইনিংসে বাংলাদেশ একবারও ২০০’র ঘরেই যেতে পারেনি। সর্বশেষ সাত ইনিংসে টাইগারদের রান যথাক্রমে ১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮ ও ১৪৩। সেটাই চিন্তার কারণ।
ওপরের এই পরিসংখ্যান দেখে আবার ভাববেন না, ঐ জীর্ন-শীর্ন স্কোর গুলো বুঝি সবই বিদেশে। নাহ, ঐ সাত ইনিংসের তিনটি ঘরের মাঠে।
প্রথম রান খরা শুরু হয়েছে দেশের মাটিতে; শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। গত ৮-১০ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন দিনে হেরে যাওয়া (২১৫ রানে) ম্যাচে টাইগারদের স্কোর ছিল ১১০ ও ১২৩। অথচ ঠিক তার আগের টেস্টেই (৩১ জানুয়ারী-৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (৫১৩ ও ৩০৭/৫ ডিক্লেয়ার) রীতিমত রানোৎসবে মেতেছিল টাইগাররা।
তারপরও নিজেদের হারিয়ে ফেলা। আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর ওয়েষ্ট ইন্ডিজে গিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়। ওয়ানডে আর টি টোয়েন্টি সিরিজ জিতলেও দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। তারচেয়ে বড় কথা ৪৩ রানে অলআউট হবার লজ্জায় ডোবা।
এখনো সেই রান খরাই চলছে। এখন সিলেট টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেই রান খরা কাটানো জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। এখানে রান খরা কাটিয়ে টাইগাররা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলে যে শুধু ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসা যাবে, তা নয়। বরং সাফল্যের এক নতুন সূর্য্য উঠবে।
না হলে সব হিসেবে পিছিয়ে থাকা দূর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট পরাজয় দিয়ে যাত্রা শুরু হবে দেশের অষ্টম টেষ্ট ভেন্যু সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের। যা চরম ব্যর্থতার দলিল হয়ে থাকবে। এখন দেখার বিষয় টাইগাররা কি করেন!
এআরবি/এসএএস/পিআর