বিপিএলে দল না পাওয়া চরম হতাশার : রাজ্জাক
টেস্ট খেলেছেন খুব কম (মাত্র ১৩টি, উইকেট ২৮টি, সেরা বোলিং ৪/৬৩)। তাই তার পরিসংখ্যান সে অর্থে ধর্তব্য নয়। তবে ইতিহাস ও পরিসংখ্যান পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে আব্দুর রাজ্জাক রাজ দেশের সব সময়ের অন্যতম সফল ও অতি কার্যকর বোলার।
ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফি বিন মর্তুজা (১৯৭ ম্যাচে ২৫১ উইকেট) ও সাকিব আল হাসানের (১৯২ ম্যাচে ২৪৪) পর তৃতীয় সর্বাধিক (১৫৩ ম্যাচে ২০৭) উইকেট শিকারি আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ওয়ানডেতে সর্বাধিক চারবার পাঁচ উইকেট শিকারের দুর্দান্ত কৃতিত্বটাও শুধু এ বাঁ-হাতি স্পিনারের একার।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক (৩৪ ম্যাচে ৪৪ উইকেট, সেরা বোলিং ১৬ রানে ৪ উইকেট, ওভার পিছু রান ৬.৮৮) উইকেট শিকারীও খুলনার মধ্য তিরিশে পা রাখা আব্দুর রাজ্জাক রাজ।
ঘরোয়া ক্রিকেটেও আব্দুর রাজ্জাক এক প্রতিষ্ঠিত নাম। সব ফরম্যাটেই সেরা বোলারের তালিকায় খুব ওপরের দিকেই তার নাম। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রাজ্জাকই সবার সেরা। একমাত্র বাংলাদেশি বোলার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যার ৫০০ প্লাস (১০৭ ম্যাচে ৫০৯টি) উইকেট।
উইকেট শিকারে তার ধারে কাছেও নেই। দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারী আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার মোশাররফ রুবেলের উইকেট ১০৩ ম্যাচে ৩৬৮। আর অপর বাঁ-হাতি স্পিনার এনামুল জুনিয়রের উইকেট ৯১ ম্যাচে ৩৬১ টি।
বাংলাদেশের সাড়া জাগানো টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর বিপিএলেও রাজ্জাকের রেকর্ড মন্দ নয়। আগেরবার চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের হয়ে মাত্র দুটি খেলায় অংশ নিলেও তার আগে পাঁচ আসরে প্রায় প্রতিবার সফল বোলারের তালিকায় নাম ছিল এ বাঁ-হাতি স্পিনারের।
আগের পাঁচ আসরে ৩৫ ম্যাচে তার উইকেট ৩৪টি। সেরা বোলিং ৩৩ রানে ৪ উইকেট। ওভার পিছু রান ৭.০১। অথচ এ মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে সিনিয়র বোলারটি এবার বিপিএলে নেই। ২৪ ঘন্টা আগে যে প্লেয়ার্স ড্রাফট হয়ে গেল, তাতে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা রাজ্জাককে নেয়নি কোন দল।
এমন একজন দেশ বরেণ্য ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন স্পিনার দল না পাওয়ায় হতাশ অনেকেই। ভক্তদের মন খারাপ। রাজ্জাক নিজেও খুব হতাশ। কথা বার্তায় পরিষ্কার- কোন দল তাকে নেবে না, এটা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। তার চাহিদা এত শিগগিরই ফুরিয়ে যাবে, তা যে চিন্তায়ও আসেনি তার!
আজ দুপুরে জাগো নিউজের সাথে আলাপে বিপিএলে প্রথমবারেরমত দল না পাওয়ার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। কেমন হলো ব্যাপারটা? খুবই খারাপ লাগছে। কি জন্য এমন হলো, বুঝতে পারছি না। হিসাবও মেলাতে পারছি না। এমনতো হবার কথা ছিল না।’
রাজ্জাকের অনুযোগ, ‘আমার কোয়ালিটি আর ফর্ম না থাকলে একটি কথাও বলতাম না। নিজের মনকে প্রবোধ দিতে পারতাম- এখন আর ফর্ম নেই, কোয়ালিটিও শেষ- তাই কেউ নেয়নি; কিন্তু বিষয়টাতো তেমন নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রগাঢ় আস্থা, এখনো ফুরিয়ে যাইনি। আমার সব ফরমাটে খেলার ও ভাল পারফরম করার সামর্থ্য আছে।’
শোনা যায়, কেউ কেউ বিভিন্ন দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি, কোচ ও ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ রেখে দল পেয়ে যায়। এমনও কথা আছে, বিপিএলে একটা অঘোষিত সিন্ডিকেট আছে। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাক বলেন, ‘সিন্ডিকেট আছে কি না জানি না। তবে একটু চেষ্টা তদ্বির করলে ফর্ম তেমন আপ টু দ্য মার্ক না হলেও দল পাওয়া যায়। কিন্তু আমি তা করিনি। কেন করবো? ওসব করতে আমার নিজেকে খুব ছোট লাগে। হ্যাঁ আমার যদি কোয়ালিটি না থাকতো, আমি যদি পারফরম করতে না পারতাম- তাহলে ভিন্ন কথা ছিল।’
কারো ওপর ক্ষোভ ঝাড়েননি। কোন মহলের প্রতি ইঙ্গিতও পোষন করেননি। তবে মুখে বলেই ফেলেছেন, ‘আমি একা নই। আসলে কিছু মানুষ চাচ্ছেন আমরা আর না খেলি। ছেড়ে দেই খেলা; কিন্তু তা কেন হবে? আমি কেন খেলা ছাড়বো? জোর করে খেলা ছেড়ে দিতে হবে কেন? আমি এখন পর্যন্ত যা খেলেছি ভাল খেলছি। সর্বোপরি আমার নিজের কোয়ালিটির ওপর বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমাকে ওই বিশ্বাস দিয়েছেন। আমি কি জানি, কি পারি? তা বুঝি। সে আস্থা আছে পুরোপুরি।’
অনেক সময় এমনও হয়, কেউ নিলামে বিক্রি না হয়ে কিংবা প্লেয়ার্স ড্রাফটে কোন দল তাকে না নিলেও পরে আপোষ রফায় দল মেলে। খেলার অফার বা সুযোগ চলে আসে। যদি আপনার এমন হয় তাহলে কি করবেন? খেলবেন? এমন প্রশ্নর জবাবে রাজ্জাক বলেন, ‘খেলবো না, তা বলবো না। অফার আসলে খেলবো। তবে আমি যদি খেলি, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী খেলবো। আসো খেলো, যা দেবো, তা নিয়ে খেলতে হবে- এমন কথায় চিড়ে ভিজবে না। আমি তাতে খেলবো না। তাতে যদি খেলতে না পারি তাহলে নাই। আমার যা গ্রেড (বি ক্যাটাগরি) আছে, তাতেই খেলবো। আমাকে আমি ছোট করার মধ্যে নাই। নিয়ম অনুযায়ী আমার যে গ্রেড আছে, তা দিতে হবে। না হয়ে খেললাম না।’
রাজ্জাকের ধারণা, গতবার বিপিএলে রংপুর টিম ম্যানেজমেন্ট ও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সাথে তার বনিবনা ভাল হনি। একটু ঝামেলা হয়েছিল, সেটাও তার এবার দল না পাবার পিছনের অন্যতম কারণ, ‘রংপুর আমাকে গতবার খেলায়নি ঠিক মত। দুটি ম্যাচ খেলেছি। তিন উইকেট পেয়েছি। বোলিং খারাপ হয়নি। গতবারই সন্দেহ হয়েছিল, আমাকে না খেলানোর কারণে পরেরবার দল পাওয়া সমস্যা হয়ে যাবে। সেটাই হলো।’
রাজ্জাকের শেষ কথা, ‘আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে পারফরমেন্স। পারফরম করেই টিকে থাকতে হয়। যতদিন ফর্ম থাকবে, ততদিন খেলে যাব। তবে এবারের বিষয়টি খুবই হতাশার। আমার খুব খারাপ লাগছে।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস